Breaking News
excessive sleepiness

ঘরোয়া উপায়ে অতিরিক্ত নিদ্রা (Excessive Sleepiness) বা ক্লান্তি কমানোর সেরা উপায়

অতিরিক্ত নিদ্রা বা অতি ঘুমানোর সমস্যা (Excessive Sleepiness) অনেকের জন্য একটি মানসিক এবং শারীরিক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে মানুষ স্বাভাবিক সময়ের থেকে অনেক বেশি ঘুমানোর ইচ্ছা অনুভব করে এবং দিনের বেলা তন্দ্রা বা ক্লান্তির অনুভূতি হতে থাকে। এই সমস্যা সাধারণত জীবনযাত্রার অভ্যাস, অপর্যাপ্ত ঘুম, শারীরিক সমস্যা, মানসিক চাপ বা অন্যান্য শারীরিক অবস্থার কারণে হতে পারে। ঘরোয়া উপায় বা প্রাকৃতিক চিকিৎসা এই ধরনের সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

অতিরিক্ত নিদ্রার কারণসমূহ

অতিরিক্ত নিদ্রা অনুভূতির বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, যা ব্যক্তির জীবনযাত্রা এবং শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ কারণ হলো:

১. অপর্যাপ্ত ঘুম

প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া এক নম্বর কারণ হিসেবে দাঁড়ায়। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।

২. নিদ্রাহীনতা (Sleep Apnea)

এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তির শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় বা অল্প সময়ের জন্য শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি কমে যায়, ফলে ঘুমের মান কমে যায় এবং নিদ্রাহীনতা অনুভূত হয়।

৩. মানসিক চাপ বা উদ্বেগ

অনেক সময় মানসিক চাপ বা উদ্বেগ অতিরিক্ত নিদ্রা অনুভূতির কারণ হতে পারে, কারণ এটি মস্তিষ্ককে ক্লান্ত করে দেয় এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দেয় না।

৪. শারীরিক সমস্যা

অনেক শারীরিক অবস্থাও অতিরিক্ত নিদ্রার জন্য দায়ী, যেমন থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদি।

অতিরিক্ত নিদ্রার জন্য ঘরোয়া উপায়

১. নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা

অতিরিক্ত নিদ্রা অনুভূতির প্রধান প্রতিকার হলো ঘুমের স্বাভাবিক নিয়ম বজায় রাখা। প্রতি রাতে একই সময়ে শোয়া এবং একই সময়ে ওঠা উচিত।

কীভাবে নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলবেন?

  • প্রতিদিন একই সময়ে শোয়া এবং ওঠার চেষ্টা করুন।
  • শোয়ার আগে স্ক্রীন থেকে বিরত থাকুন।
  • ঘুমানোর সময় পরিবেশ শান্ত ও আরামদায়ক রাখুন।
  • ক্যাফেইন বা অন্যান্য উত্তেজক খাবার রাতে এড়িয়ে চলুন।

২. ঘুমের আগে হালকা ব্যায়াম

হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম ঘুমকে আরও ভালো করতে সহায়তা করে এবং শরীরকে সঠিকভাবে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে।

কীভাবে ব্যায়াম করবেন?

  • শোয়ার আগে কিছু সহজ যোগ ব্যায়াম যেমন সূর্য নমস্কার বা শিথিলন ব্যায়াম করুন।
  • অল্প কিছু সময়ের জন্য হাঁটুন বা দৌড়ান, তবে খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম করবেন না।

৩. হালকা এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া

খাবারও ঘুমের মানের উপর প্রভাব ফেলে। হালকা খাবার, যেমন: ফলমূল, স্যালাড, শাকসবজি, হালকা দুধ ইত্যাদি ঘুমের জন্য উপকারী।

অতিরিক্ত নিদ্রার জন্য উপকারী খাবার:

  • দুধ এবং মধু: দুধের মধ্যে থাকা ট্রিপটোফান এবং মধুর মধ্যে থাকা শর্করা ঘুমে সাহায্য করতে পারে।
  • কলা: কলায় থাকা পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম ঘুমে সহায়ক।
  • বাদাম: বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম দেহকে শান্ত রাখে এবং ঘুমে সাহায্য করে।

৪. ক্যাফেইন কমানো

ক্যাফেইন শরীরে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং এটি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণের কারণে ঘুমের সমস্যা হতে পারে, তাই দিনে এক বা দু’বার ক্যাফেইন গ্রহণ করা উচিত।

৫. পর্যাপ্ত পানি পান করা

কখনও কখনও অতিরিক্ত নিদ্রা অভ্যস্ত হওয়ার কারণ হতে পারে পানির অভাব। ডিহাইড্রেশন শারীরিক ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি।

কীভাবে পর্যাপ্ত পানি পান করবেন?

  • প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন।
  • তাজা ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়ার মাধ্যমে পানির অভাব পূরণ করুন।

. মানসিক চাপ কমানো

মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ অতিরিক্ত নিদ্রা অনুভূতির অন্যতম প্রধান কারণ। তাই নিয়মিত মানসিক প্রশান্তির জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করা উচিত।

কীভাবে মানসিক চাপ কমাবেন?

  • মেডিটেশন: প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য ধ্যান বা মেডিটেশন করুন। এটি মস্তিষ্ককে প্রশান্তি দেয়।
  • গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস: গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরের চাপ কমানো যায়।
  • যোগব্যায়াম: যোগব্যায়াম এবং শিথিলন পদ্ধতিগুলি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

৭. ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার

কিছু প্রাকৃতিক উপাদান এবং ঘরোয়া প্রতিকার অতিরিক্ত নিদ্রা কমাতে সহায়ক হতে পারে।

উপকারী কিছু প্রাকৃতিক উপাদান:

  • আদা চা: আদা চা শরীরকে উদ্দীপ্ত করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকলাপ বাড়ায়, ফলে অতিরিক্ত ঘুমের অনুভূতি কমে।
  • মিন্ট চা: মিন্ট চা সতেজতা প্রদান করে এবং শরীরকে উদ্দীপ্ত করে।
  • লেবুর পানি: লেবু এবং মধু মিশিয়ে পানি খাওয়া শরীরকে সতেজ করে এবং অতিরিক্ত ঘুম কমাতে সাহায্য করে।

অতিরিক্ত নিদ্রা অনুভূতির সমস্যাটি একেবারে অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ এটি শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ঘরোয়া উপায়গুলি এই সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে, তবে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হলে বা যদি লক্ষণগুলি গুরুতর হয়ে ওঠে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Check Also

breast enlargement

ঘরোয়া উপায়ে স্তন বৃদ্ধি (Breast Enlargement): প্রাকৃতিক ও কার্যকর সমাধান

অনেক মহিলাই স্তন বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত থাকেন এবং তারা প্রাকৃতিকভাবে তাদের স্তনের আকার বাড়ানোর উপায় …

adults

কোলিক ব্যথার (Colic Pain) বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক উপায়: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সেরা সমাধান

কোলিক ব্যথা একটি সাধারণ, তবে অস্বস্তিকর স্বাস্থ্য সমস্যা যা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হতে পারে। এটি সাধারণত …