Breaking News
jaundice in newborn

নবজাতকের মধ্যে জন্ডিস (Jaundice in Newborn): প্রাকৃতিক উপায়ে শিশুর যত্ন

নবজাতকের মধ্যে জন্ডিস একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেক শিশুর জন্মের পর দেখা দেয়। এটি সাধারণত তখন ঘটে যখন শিশুদের লিভার সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হয় না, ফলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়। যদিও এটি একটি সাধারণ অবস্থা, তবে যথাযথ যত্ন এবং চিকিৎসা প্রয়োজন।

দ্রষ্টব্য: এই প্রবন্ধটি সাধারণ তথ্য ও শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। নবজাতকের মধ্যে জন্ডিসের জন্য নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা পরামর্শের জন্য একজন যোগ্য চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

নবজাতকের মধ্যে জন্ডিস কি?

নবজাতকের মধ্যে জন্ডিস একটি অবস্থা যেখানে শিশুর ত্বক ও চোখের সাদা অংশে হলুদ ভাব দেখা দেয়। এটি মূলত বিলিরুবিনের (Bilirubin) বেশি পরিমাণে রক্তে থাকা কারণে ঘটে। বিলিরুবিন হল একটি হলুদ রঙের পদার্থ যা রক্তের পুরোনো কণিকা ভাঙার মাধ্যমে তৈরি হয়। সাধারণত, শিশুর লিভার এই বিলিরুবিন পরিশোধিত করে মূত্র এবং মলের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে। তবে, নবজাতকদের লিভার কিছু সময়ের জন্য অপ্রস্তুত থাকতে পারে, যার ফলে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং নবজাতকের মধ্যে জন্ডিস দেখা দেয়।

নবজাতকের মধ্যে জন্ডিসের কারণ

নবজাতকের মধ্যে জন্ডিস সাধারণত নিম্নলিখিত কারণে হতে পারে:

  1. ফিজিওলজিকাল জন্ডিস: এটি খুবই সাধারণ এবং স্বাভাবিক। জন্মের পর শিশুর লিভার ধীরে ধীরে কাজ শুরু করে, যার ফলে বিলিরুবিনের মাত্রা সাময়িকভাবে বেড়ে যায়।
  2. হেমোলাইটিক জন্ডিস (Hemolytic jaundice): এটি তখন ঘটে যখন শিশুর রক্ত কণিকা অত্যধিক পরিমাণে ভেঙে যায় এবং বিলিরুবিন বেড়ে যায়।
  3. ইনফেকশন: শিশুর শরীরে কোনও ধরনের সংক্রমণ যেমন লিভার ইনফেকশন বা অন্য কোনও সমস্যা।
  4. গ্যালাকটোসেমিয়া (Galactosemia): এটি একটি বিরল জেনেটিক সমস্যা, যার ফলে শিশুর লিভার দুধে থাকা চিনির প্রক্রিয়াকরণে সমস্যা হতে পারে।
  5. ব্লকড বিলিরুবিন: লিভারে কোনও অবরোধ বা পাথরের কারণে বিলিরুবিন ঠিকমতো প্রস্রাব বা মলের মাধ্যমে বের হতে পারে না।

নবজাতকের মধ্যে জন্ডিসের লক্ষণ

নবজাতকের মধ্যে জন্ডিস এর সাধারণ লক্ষণগুলি হল:

  • শিশুর ত্বক এবং চোখের সাদা অংশে হলুদ রঙের পরিবর্তন।
  • শিশুর খাওয়ার অরুচি বা অলসতা।
  • অস্বস্তি বা চঞ্চলতা।
  • শ্বাসকষ্ট বা অস্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস।
  • শিশুর ত্বকে তাপ অনুভূতি বা গরম ভাব।
  • মল বা মূত্রের রঙে পরিবর্তন।

নবজাতকের মধ্যে জন্ডিসের জন্য ঘরোয়া চিকিৎসা

যদিও নবজাতকের মধ্যে জন্ডিস এর জন্য চিকিৎসক থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত, তবে কিছু প্রাকৃতিক এবং ঘরোয়া উপায়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। তবে, মনে রাখবেন, এই চিকিৎসাগুলি শুধুমাত্র সহায়ক এবং সময়োপযোগী যত্নের জন্য, এবং গুরুতর অবস্থায় অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

১. সূর্যের আলো

সূর্যের আলো নবজাতকের মধ্যে জন্ডিস এর জন্য একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে কাজ করতে পারে। সূর্যের আলোতে থাকা অতিবেগুনি রশ্মি বিলিরুবিনের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।

কীভাবে কাজ করে: সূর্যের আলো ত্বকে প্রবাহিত হলে এটি বিলিরুবিনকে একটি ভাঙা আকারে পরিণত করে, যা পরে মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

যত্ন: শিশুকে প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিটের জন্য সূর্যের আলোতে রাখতে পারেন, তবে সরাসরি সূর্যের আলো থেকে বাঁচিয়ে। কখনই শিশুকে অতিরিক্ত গরম সূর্যের মধ্যে রাখবেন না, কারণ এটি শিশুর ত্বকে ক্ষতি করতে পারে।

২. বুকের দুধ খাওয়ানো

বুকের দুধ নবজাতকের মধ্যে জন্ডিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এটি শিশুর লিভারের কার্যক্রম সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে বিলিরুবিন বের করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।

কীভাবে কাজ করে: বুকের দুধে থাকা পুষ্টি উপাদান শিশুর লিভারের কার্যক্রমকে সমর্থন করে এবং শরীরের জলীয় ভারসাম্য বজায় রাখে, যা বিলিরুবিন কমাতে সাহায্য করে।

যত্ন: শিশুকে প্রতিদিন ৮-১২ বার বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। এটি শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।

৩. গাজরের রস

গাজরের রস নবজাতকের মধ্যে জন্ডিস কমাতে সহায়ক হতে পারে। গাজরের রসে প্রচুর ভিটামিন এ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা লিভারের কার্যক্রমে সহায়ক।

কীভাবে কাজ করে: গাজরের রস লিভারের কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করে, যা বিলিরুবিনের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

যত্ন: শিশুর ডায়েটে গাজরের রস যোগ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৪. মধু

মধু একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা লিভারের কার্যক্রমে সহায়ক। তবে, মধু এক বছর বয়সের নিচে শিশুদের জন্য নিরাপদ নয়।

কীভাবে কাজ করে: মধু শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং লিভারের কার্যক্রমে সহায়ক হতে পারে, যা বিলিরুবিন কমাতে সহায়ক।

৫. পেঁপে

পেঁপে লিভারের জন্য উপকারী এবং এটি নবজাতকের মধ্যে জন্ডিস কমাতে সাহায্য করতে পারে। পেঁপে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ।

কীভাবে কাজ করে: পেঁপে লিভারের কার্যক্রম বাড়ায় এবং শরীর থেকে বিলিরুবিন বের করতে সহায়ক হতে পারে।

নবজাতকের মধ্যে জন্ডিসে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া

যদি নবজাতকের মধ্যে জন্ডিস গুরুতর হয়ে যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি শিশুর ত্বক বা চোখের সাদা অংশ অতিরিক্ত হলুদ হয়ে যায়, শ্বাসকষ্ট হয় বা খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যায়, তাহলে চিকিৎসকের কাছে দ্রুত পৌঁছানো প্রয়োজন।

নবজাতকের মধ্যে জন্ডিস একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি যত্ন ও চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। কিছু ঘরোয়া উপায় যেমন সূর্যের আলো, বুকের দুধ খাওয়ানো এবং প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণ শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে। তবে, মনে রাখবেন, গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Check Also

breast enlargement

ঘরোয়া উপায়ে স্তন বৃদ্ধি (Breast Enlargement): প্রাকৃতিক ও কার্যকর সমাধান

অনেক মহিলাই স্তন বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত থাকেন এবং তারা প্রাকৃতিকভাবে তাদের স্তনের আকার বাড়ানোর উপায় …

adults

কোলিক ব্যথার (Colic Pain) বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক উপায়: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সেরা সমাধান

কোলিক ব্যথা একটি সাধারণ, তবে অস্বস্তিকর স্বাস্থ্য সমস্যা যা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হতে পারে। এটি সাধারণত …