hair fall after delivery

গর্ভধারণের পর চুল পড়া রোধে কার্যকরী প্রাকৃতিক উপায়

গর্ভধারণের পর চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেক মা-মেয়ের মধ্যে দেখা যায়। এই সময়ে হরমোনের তারতম্যের কারণে চুলের স্বাস্থ্য প্রভাবিত হতে পারে। তবে, এই সমস্যা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই কারণ এটি স্বাভাবিক এবং নির্দিষ্ট কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

গর্ভধারণের পর চুল পড়া কেন হয়?
গর্ভধারণের সময় হরমোনের বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে, বিশেষ করে প্রোজেস্টেরন এবং এস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই পরিবর্তনগুলি চুলের বৃদ্ধি চক্রে প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভাবস্থায় হরমোনের প্রভাবে চুল বৃদ্ধির হার বাড়ে এবং অধিকাংশ চুল ‘অ্যানাজেন’ (বৃদ্ধির) পর্যায়ে থাকে। কিন্তু জন্মের পরে, হরমোনের পরিবর্তনগুলির কারণে অনেক চুল ‘টেলোজেন’ (বিশ্রাম) পর্যায়ে চলে যায়, যার ফলে অতিরিক্ত চুল পড়ে।

গর্ভধারণের পর চুল পড়ার অন্যান্য কারণ
১. স্ট্রেস: গর্ভধারণের পর অনেক নতুন মা বিভিন্ন দায়িত্ব এবং চাপের মুখোমুখি হন, যা স্ট্রেসের কারণ হতে পারে এবং চুল পড়া বাড়াতে পারে।
২. পুষ্টির অভাব: গর্ভাবস্থায় এবং পরবর্তী সময়ে যথাযথ পুষ্টির অভাব চুল পড়ার জন্য একটি বড় কারণ হতে পারে।
৩. হরমোনাল ইমব্যালান্স: গর্ভধারণের পরে হরমোনের তারতম্য চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
৪. গর্ভধারণের পরে ঔষধের প্রভাব: কিছু ঔষধ যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ বা অন্যান্য ঔষধও চুল পড়ার কারণ হতে পারে।

ঘরোয়া চিকিৎসা প্রতিকার

. তেল মালিশ
তেল মালিশ চুলের জন্য একটি পুরানো এবং কার্যকরী পদ্ধতি। এটি চুলের রুটে পুষ্টি পৌঁছানোর পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। গর্ভধারণের পর চুল পড়া রোধে আপনি নিম্নলিখিত তেলগুলি ব্যবহার করতে পারেন:

  • নারকেল তেল: এটি চুলের শিকড় মজবুত করতে সাহায্য করে এবং চুলের ক্ষয় রোধে কার্যকর। নারকেল তেলে উপস্থিত ভিটামিন ই এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।
  • অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক।
  • মেথি তেল: মেথি তেল চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করতে পারে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন

  • আপনার পছন্দের তেল ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা চুলে লাগিয়ে নিন এবং তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে শাওয়ার নিন। সপ্তাহে ২-৩ বার এটি করুন।

. আয়ুর্বেদিক চুলের হেলথ মিশ্রণ
আয়ুর্বেদ প্রাচীনকাল থেকেই চুলের সমস্যাগুলির সমাধান প্রদান করে আসছে। গর্ভধারণের পর চুল পড়া প্রতিরোধে কিছু আয়ুর্বেদিক উপাদান সাহায্য করতে পারে।

  • অশ্বগন্ধা: এটি একটি শক্তিশালী অ্যাডাপটোজেন যা স্ট্রেস কমাতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক।
  • হরিতকি: হরিতকি চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং চুলের শিকড় মজবুত করে।
  • আমলকি: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফলটি চুলের বৃদ্ধি বাড়ায় এবং স্কাল্পকে হেলদি রাখে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন

  • অশ্বগন্ধা, হরিতকি, এবং আমলকি পাউডার মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং এটি চুলে প্রয়োগ করুন। ২০-৩০ মিনিট পর শাওয়ার করুন। এটি সপ্তাহে ১-২ বার করুন।

. অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা চুলের জন্য একটি আদর্শ উপাদান, বিশেষ করে স্কাল্পের জন্য। এটি স্কাল্পের ত্বককে শান্ত করে, প্রদাহ কমায় এবং চুলের শিকড়কে শক্তিশালী করে। অ্যালোভেরার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণাগুণ রয়েছে যা চুল পড়ার প্রধান কারণগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন

  • অ্যালোভেরা জেল সরাসরি স্কাল্পে লাগান এবং ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।

. পেয়ারা পাতা
পেয়ারা পাতা চুল পড়া রোধে সাহায্য করতে পারে। এটি ভিটামিন সি, আয়রন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ যা চুলের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন

  • পেয়ারা পাতা ফুটিয়ে পানি তৈরি করুন। এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২-৩ বার করতে পারেন।

৫. মেথি
মেথি চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে প্রোটিন এবং নিকোটিনিক অ্যাসিড থাকে যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। মেথি চুলের শিকড়কে মজবুত করে এবং চুল পড়া কমায়।

কিভাবে ব্যবহার করবেন

  • মেথি বীজ একদিন পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেগুলো পেস্টে রূপান্তরিত করুন। এই পেস্টটি চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২ বার করুন।

. পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ
চুল পড়া রোধে আপনার ডায়েটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি পর্যাপ্ত পুষ্টি না পান, তবে এটি চুল পড়ার সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। গর্ভধারণের পর চুল পড়া কমাতে কিছু বিশেষ পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করা জরুরি।

  • প্রোটিন: প্রোটিন চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। চিকেন, মাছ, ডাল, ডিম এবং দুধে প্রোটিনের ভালো উৎস থাকে।
  • ভিটামিন : ভিটামিন ই চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। বাদাম, শুকনো ফল, সবুজ শাকসবজি ও তিলের তেলে ভিটামিন ই রয়েছে।
  • অমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড: মাছের তেল, আখরোট এবং চিয়া সীডে অমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।

. পর্যাপ্ত পানি পান
দেহে পর্যাপ্ত জল প্রবাহিত না হলে চুল দুর্বল হতে পারে এবং পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা জরুরি।

. সঠিক শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার নির্বাচন
গর্ভধারণের পর চুলের ধরন পরিবর্তিত হতে পারে। সুতরাং, সঠিক শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করুন যা চুলের ক্ষতি না করে এবং প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ।

নির্দিষ্ট পরামর্শ সতর্কতা

  • প্রয়োজনে, আপনার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অনুযায়ী আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • চুল পড়া সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে একজন ডার্মাটোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন।


গর্ভধারণের পর চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা, তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সঠিক ঘরোয়া চিকিৎসা, পুষ্টিকর খাদ্য এবং পর্যাপ্ত যত্নের মাধ্যমে আপনি এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন। তবে, যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে, পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।