অ্যালকোহল সেবনের পরে বুকজ্বালা বা অ্যাসিডিটির সমস্যা অত্যন্ত সাধারণ। এটি সাধারণত পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপন্ন হওয়ার ফলে হয়, যা খাদ্যনালীতে পৌঁছে অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
বুকজ্বালার কারণ ও লক্ষণ
বুকজ্বালার কারণ
- অ্যালকোহল সেবন: অ্যালকোহল পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়।
- খাদ্যনালীর স্ফিংক্টারের (Sphincter) দুর্বলতা: অ্যালকোহল খাদ্যনালীর নিম্ন স্ফিংক্টারকে দুর্বল করে, ফলে পাকস্থলীর অ্যাসিড সহজেই খাদ্যনালীতে প্রবেশ করতে পারে।
- অপর্যাপ্ত খাবার: খালি পেটে অ্যালকোহল সেবন বুকজ্বালার ঝুঁকি বাড়ায়।
- অতিরিক্ত ঝাল বা মসলাযুক্ত খাবার: অ্যালকোহলের সঙ্গে মসলাযুক্ত খাবার খেলে অ্যাসিডিটি আরও বেড়ে যায়।
বুকজ্বালার লক্ষণ
- বুকের মাঝখানে জ্বালাপোড়া
- গলা ও মুখে টক স্বাদ
- পেট ফোলা বা ভারী অনুভব
- ঢেকুর তোলার সময় অস্বস্তি
বুকজ্বালা কমানোর জন্য ঘরোয়া প্রতিকার
১. ঠান্ডা দুধ পান
কেন কার্যকর: দুধে উপস্থিত ক্যালসিয়াম পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিড নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে।
পদ্ধতি:
- অল্প ঠান্ডা (ফ্রিজ থেকে নয়) দুধ এক গ্লাস ধীরে ধীরে পান করুন।
- অতিরিক্ত চিনি বা মসলা যোগ করবেন না।
২. আদা চা
কেন কার্যকর: আদার প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক গুণ রয়েছে, যা বুকজ্বালা কমাতে সাহায্য করে।
পদ্ধতি:
- ১ ইঞ্চি আদা টুকরো টুকরো করে কেটে ২ কাপ গরম জলে ফুটিয়ে নিন।
- মধু যোগ করে চা হিসেবে পান করুন।
৩. এলাচ চিবানো
কেন কার্যকর: এলাচের প্রাকৃতিক শীতল প্রভাব পাকস্থলীর অ্যাসিড নিরপেক্ষ করতে সহায়ক।
পদ্ধতি:
- ১-২টি এলাচ চিবিয়ে খাওয়া।
- দিনে দুই-তিনবার এটি করতে পারেন।
৪. কলা খাওয়া
কেন কার্যকর: কলার মধ্যে প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড উপাদান রয়েছে যা অ্যাসিডিটি কমায়।
পদ্ধতি:
- পাকা কলা খান।
- খাবার পরে একটি কলা খেলে বুকজ্বালার সমস্যা কম হয়।
৫. ঠান্ডা ভেন্ডি জল (Okra Water)
কেন কার্যকর: ভেন্ডি জল পাকস্থলীর শ্লেষ্মা আবরণ তৈরি করতে সাহায্য করে, যা অ্যাসিডের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
পদ্ধতি:
- রাতে ২-৩টি কাটা ভেন্ডি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
- সকালে সেই জল পান করুন।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
১. তেল ও মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
অ্যালকোহল সেবনের সময় বা পরে মসলাযুক্ত খাবার খেলে বুকজ্বালার ঝুঁকি বাড়ে।
২. বেশি অম্লীয় ফল এড়িয়ে চলুন
কমলালেবু, লেবু ইত্যাদি খাবার এড়িয়ে চলুন কারণ এগুলি অ্যাসিডিটি বাড়ায়।
৩. ধীরে ধীরে খাবার খান
খাবার দ্রুত খাওয়া অ্যাসিড উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়।
৪. খাবারের পরপরই শোয়া এড়িয়ে চলুন
খাওয়ার অন্তত ২-৩ ঘণ্টা পরে শুতে যান। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে প্রবেশের ঝুঁকি কমায়।
জীবনধারায় পরিবর্তন
১. ধূমপান এড়িয়ে চলুন
ধূমপান খাদ্যনালীর স্ফিংক্টার দুর্বল করে।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং অ্যাসিডিটি কমায়।
৩. পর্যাপ্ত জল পান করুন
জল পাকস্থলীর অ্যাসিড হ্রাস করতে সহায়ক।
৪. উচ্চ বালিশ ব্যবহার করুন
ঘুমের সময় মাথা ও বুক উঁচু রাখলে অ্যাসিড উপরের দিকে ওঠা প্রতিরোধ করা যায়।
অ্যালকোহল সেবনের সময় সতর্কতা
১. জল পান করুন
অ্যালকোহলের সাথে মাঝে মাঝে জল পান করলে পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন কম হয়।
২. খাবারের সাথে অ্যালকোহল গ্রহণ করুন
খাবারের সঙ্গে অ্যালকোহল গ্রহণ করলে অ্যাসিডিটির ঝুঁকি কম হয়।
৩. অতিরিক্ত অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন
পরিমিত পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ করুন।
ঘরোয়া প্রতিকারের কার্যকারিতা নিয়ে সতর্কতা
যদিও ঘরোয়া প্রতিকার বুকজ্বালা কমাতে সহায়ক, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। ঘন ঘন বুকজ্বালা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অ্যালকোহল সেবনের পর বুকজ্বালা একটি অস্বস্তিকর কিন্তু সাধারণ সমস্যা। উপরিউক্ত ঘরোয়া প্রতিকারগুলি সহজেই বুকজ্বালার অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে। তবে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই পেশাদার পরামর্শ নেওয়া উচিত।