ভিয়েতনাম এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি রত্ন, যা তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, বন্য প্রকৃতি, এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে ভিয়েতনাম ভ্রমণ করা একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে, যেখানে আপনি পাবেন অদ্ভুত সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ, এবং মুখরোচক খাবারের স্বাদ। আমি যখন প্রথম ভিয়েতনাম সফর করি, তখন মনে হয়েছিল যেন এটি কোনো এক রূপকথার গল্পের মতো এমন এক জায়গা, যা প্রত্যেকটা কোণে নতুন কিছু শেখানোর জন্য অপেক্ষা করছে।
এটি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিংবা সংস্কৃতি নয়, বরং ভিয়েতনামের জনগণের আতিথেয়তা এবং শহুরে জীবনধারা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। এখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা উপভোগ করার জন্য, আমি এই গাইডে ভিয়েতনাম ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য এবং টিপস শেয়ার করব।
১. ভিয়েতনাম সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
ভিয়েতনাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ যা দক্ষিণ চীন সাগরের তীরে অবস্থিত। এটি চীন, লাওস এবং কেম্বোডিয়ার সাথে সীমান্ত ভাগ করে। হ্যানয় হলো দেশের রাজধানী, তবে হো চি মিন সিটি (সাইগন) দেশের সবচেয়ে বড় শহর।
ভিয়েতনামের ইতিহাস হাজার হাজার বছর পুরানো, এবং এটি একাধিক রাজবংশ, উপনিবেশিক শাসন এবং যুদ্ধের সাক্ষী। এখানে সনাতন সংস্কৃতির পাশাপাশি আধুনিক যুগের প্রযুক্তি ও শিল্পের সমন্বয় দেখা যায়।
২. ভিয়েতনাম ভ্রমণের সেরা সময়
ভিয়েতনাম বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন জলবায়ু ও পরিবেশের জন্য পরিচিত। তাই সঠিক সময়ে ভ্রমণ করা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ভিয়েতনামে দুটো মৌসুম রয়েছে: গরম ও বৃষ্টির মৌসুম।
- নর্থ (উত্তর) ভিয়েতনাম: এপ্রিল থেকে অক্টোবর গরম মৌসুম এবং নভেম্বর থেকে মার্চ শীতকাল। শীতকাল সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
- সাউথ (দক্ষিণ) ভিয়েতনাম: ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শুষ্ক এবং উষ্ণ। এই সময়টি ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ডিসেম্বর থেকে মার্চ ভিয়েতনাম ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়, কারণ এ সময় দেশজুড়ে শুষ্ক এবং আরামদায়ক আবহাওয়া থাকে।
৩. বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে ভিয়েতনামে যাতায়াত
বাংলাদেশ থেকে ভিয়েতনাম
বাংলাদেশ থেকে ভিয়েতনামে যাওয়ার জন্য সোজা ফ্লাইট পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে হ্যানয়, হো চি মিন সিটি, অথবা দ্য নাংয়ের জন্য ফ্লাইট সরবরাহ করা হয়।
- ঢাকা থেকে হ্যানয়: বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং ভিয়েতনাম এয়ারলাইন্সের সরাসরি ফ্লাইট পাওয়া যায়।
- ঢাকা থেকে হো চি মিন সিটি: হো চি মিন সিটি পৌঁছাতে ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট পাওয়া যায়, তবে কখনো কখনো ট্রানজিট লাগতে পারে।
ভারত থেকে ভিয়েতনাম
ভারত থেকে ভিয়েতনাম ভ্রমণের জন্য দিল্লি, মুম্বাই, কোলকাতা অথবা চেন্নাই থেকে সরাসরি ফ্লাইট পাওয়া যায়। এখানে বিশেষত Air India, Vietnam Airlines, Singapore Airlines, এবং Thai Airways এর মাধ্যমে ফ্লাইট সুবিধা থাকে।
- দিল্লি থেকে হ্যানয়: সরাসরি ফ্লাইট পাওয়া যায় এবং বিমানযাত্রা প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা সময় নেয়।
- মুম্বাই থেকে হো চি মিন সিটি: মুম্বাই থেকে হো চি মিন সিটি পৌঁছাতে ৬-৭ ঘণ্টা সময় লাগে।
৪. ভিয়েতনাম ভ্রমণে কী কী দেখবেন
ভিয়েতনাম এমন একটি দেশ যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থান, সংস্কৃতি এবং জীবনধারার জন্য পরিচিত। দেশটির প্রত্যেকটি অঞ্চলেই আপনি নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারবেন যা আপনার ভ্রমণকে আরো স্মরণীয় এবং রোমাঞ্চকর করে তুলবে। আমি যখন ভিয়েতনাম ভ্রমণ করি, তখন আমি দেখেছিলাম এমন সব স্থান যা মুগ্ধ করেছিল এবং আমি নিশ্চিত যে আপনি এসব স্থানগুলি দেখতে চাইবেন।
হালং বে (Halong Bay)
হালং বে ভিয়েতনামের অন্যতম বিখ্যাত প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং এটি UNESCO বিশ্ব ঐতিহ্যস্থল হিসেবে স্বীকৃত। এটি উত্তর ভিয়েতনামের কুইনপিন প্রদেশে অবস্থিত এবং এখানে এক হাজারেরও বেশি সুরম্য দ্বীপ রয়েছে। হালং বে একটি মন্ত্রমুগ্ধকারী স্থান, যেখানে স্ফটিক স্বচ্ছ পানিতে ভেসে থাকা ছোট ছোট দ্বীপগুলির সৌন্দর্য অতুলনীয়। আপনি এখানে একটি ক্রুজে চড়ে পুরো বে ঘুরে দেখতে পারবেন এবং অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
আমি যখন হালং বে ভ্রমণ করি, তখন একটি জাহাজে করে পুরো বে ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। পানি, পাহাড় এবং গ্রোটোগুলির মধ্যে দিয়ে এই জাহাজ চলতে থাকলে মনে হচ্ছিল যেন আমি কোনো দুঃসাহসিক কাহিনীর অংশ।
হো চি মিন সিটি (Ho Chi Minh City)
হো চি মিন সিটি, যেটি আগে সাইগন নামে পরিচিত ছিল, এটি ভিয়েতনামের বৃহত্তম শহর এবং এর আধুনিকতা, ব্যস্ততা এবং সংস্কৃতির সমন্বয়ে ভরা। এখানে দেখতে পাবেন পুরনো ও নতুন জগতের এক আশ্চর্য সম্মিলন। শহরের প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- সাইগন সেন্ট্রাল পোস্ট অফিস: এটি ফরাসি ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের একটি চমৎকার উদাহরণ। এখানে আপনার কিছু সময় কাটানো একটি শান্তিপূর্ণ অভিজ্ঞতা হবে।
- নোটরডাম ক্যাথিড্রাল: ফরাসি নির্মিত এই গির্জাটি শহরের একটি অন্যতম চিহ্ন।
- যুদ্ধ জাদুঘর: এখানে ভিয়েতনামের যুদ্ধকালীন ইতিহাস এবং প্রামাণ্য দলিল দেখতে পাবেন।
এছাড়া সাইগনের নানা রেস্টুরেন্ট, কফি শপ, এবং হস্তশিল্পের দোকানগুলো ভ্রমণকারীদের জন্য আকর্ষণীয়।
হ্যানয় (Hanoi)
হ্যানয়, ভিয়েতনামের রাজধানী, যা তার প্রাচীন ঐতিহ্য এবং চমৎকার স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে পুরনো শহর এলাকার মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলার সময় আপনি অনুভব করবেন যেমন আপনি অতীতের সঙ্গে সেতুবন্ধন তৈরি করছেন। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে:
- হো চি মিন মাজার: হো চি মিন, ভিয়েতনামের জাতীয় নেতা, এখানেই বিশ্রাম নিয়েছেন। এটি একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ এবং ভিয়েতনামিদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত স্থান।
- হোয়ান কিয়েম লেক: এই সুন্দর হ্রদটি শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং এর চারপাশে আপনি পাবেন বিভিন্ন প্রাচীন মন্দির ও প্যাগোডা।
- ওল্ড কোয়ার্টার: এটি হ্যানয়ের প্রাণকেন্দ্র, যেখানে আপনি হানির সংস্কৃতির সেরা চিত্র দেখতে পাবেন। এখানে বাজার, রেস্টুরেন্ট এবং ছোট ছোট দোকানগুলির মধ্যে দিয়ে হাঁটলে আপনি ভিয়েতনামি জীবনযাত্রার এক অন্য রূপ অনুভব করবেন।
হুই (Hue)
হুই, ভিয়েতনামের প্রাচীন শহর, যা একসময় দেশের সম্রাটদের রাজধানী ছিল। শহরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং রাজকীয় স্থাপত্যের কারণে এটি একটি বিশেষ স্থান। এখানে কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে:
- হুই ফোর্ট: এটি একটি বিরাট দুর্গ, যা রাজকীয় রাজবংশের প্রতীক। এই দুর্গে প্রবেশ করলে আপনি ইতিহাসের পটভূমি অনুভব করতে পারবেন।
- এম্পেরর টেম্পল: হুই রাজাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্মিত এই মন্দিরগুলি এখনও খুব সুন্দর এবং প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
হুয়াই অয়ান সৈকত (Hoi An Beach)
হুয়াই অয়ান, ভিয়েতনামের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সৈকত গন্তব্য। এখানে আপনি পাবেন সাদা বালির সৈকত এবং প্রশান্ত জলরাশি। এটি একটি শান্তিপূর্ণ স্থল যেখানে আপনি সমুদ্রের স্নিগ্ধতা উপভোগ করতে পারবেন।
এছাড়া, হোয়াই অয়ান শহরের পুরনো শহর এলাকা বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত। এখানে আপনি বেশ কিছু প্রাচীন ব্রীজ, সনাতন স্থাপত্য এবং রং-বেরঙের লাইটের প্রদর্শনী দেখতে পারবেন।
নহাং হি রিজ (Nha Trang)
নহাং হি রিজ, ভিয়েতনামের একটি সুপরিচিত সৈকত শহর, যেখানে আপনি সমুদ্রের স্নান, ডুবুরি এবং অন্যান্য পানির ক্রীড়া উপভোগ করতে পারবেন। এই শহরটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধুনিক রিসোর্ট এবং সুস্বাদু খাবারের জন্য বিখ্যাত। আপনি এখানে চমৎকার রিসোর্টগুলোতে সময় কাটাতে পারেন এবং গভীর সমুদ্রে ভ্রমণ করতে পারেন।
ফ্যান্সিপান মাউন্টেন (Fansipan Mountain)
যারা অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়, তাদের জন্য ফ্যান্সিপান মাউন্টেন একটি চমৎকার গন্তব্য। এটি ভিয়েতনামের সর্বোচ্চ পর্বত, এবং এর চূড়ায় উঠলে আপনি দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। পর্যটকরা এখানে ট্রেকিং এবং পাহাড়ে হাইকিংয়ের জন্য আসেন। ফ্যান্সিপান মাউন্টেনের চূড়ায় পৌঁছাতে একটি রেলওয়ে সার্ভিসও রয়েছে, যা আরেকটি জনপ্রিয় উপায়।
৫.ভিয়েতনামে কেনাকাটা
ভিয়েতনাম শুধু তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য পরিচিত নয়, বরং এখানকার বাজার, শপিং মল এবং হস্তশিল্পের জন্যও এটি একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। ভিয়েতনাম ভ্রমণের সময় আপনি নানান রকমের স্থানীয় ও আধুনিক পণ্য কিনতে পারবেন, যা আপনাকে দেশটির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা দেবে। আমি যখন ভিয়েতনামে ভ্রমণ করেছি, তখন স্থানীয় বাজারগুলো এবং শপিং মল ঘুরে কিছু দারুণ শপিং অভিজ্ঞতা পেয়েছিলাম।
হ্যানয়ে কেনাকাটা
হ্যানয়, ভিয়েতনামের রাজধানী, এখানে আপনি ঐতিহ্যবাহী এবং আধুনিক পণ্য একসাথে খুঁজে পাবেন।
হানওয়ে অল্ড কোয়ার্টার (Hanoi Old Quarter)
হানওয়ে অল্ড কোয়ার্টার, ঐতিহাসিক শহরের অংশ হিসেবে পরিচিত, এখানকার সরু গলি এবং চমৎকার দোকানগুলোতেই আপনি ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, পোশাক, সিল্ক, কাঠের মূর্তি এবং অন্যান্য স্মৃতিচিহ্ন পাবেন। আমি যখন এখানে গিয়েছিলাম, তখন জায়গাটির প্রাণবন্ত পরিবেশ এবং সংস্কৃতির অনুভূতি আমাকে মুগ্ধ করেছিল।
আপনি এখানে পেতে পারেন:
- ভিয়েতনামী সিল্ক: এটি ভিয়েতনামের একটি অন্যতম বিশেষ দ্রব্য। সিল্কের তৈরি পোশাক, স্কার্ফ, পোশাক এবং অন্যান্য সজ্জাসামগ্রী পাওয়া যায়।
- কাঠের কারুকাজ: ভিয়েতনামে কাঠের মূর্তি এবং অন্যান্য হাতে তৈরি কাজের অনেক সুন্দর আইটেম পাওয়া যায়। এগুলো সাধারণত ঘরের সাজসজ্জা বা স্মৃতি হিসেবে কেনা হয়।
ব্যাংকং স্ট্রিট এবং ট্রাং থিই রোড
এই দুটি রাস্তা হানওয়ে শহরের প্রধান শপিং কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে আপনি সস্তায় স্থানীয় পণ্য এবং স্ট্রিট ফুডও উপভোগ করতে পারবেন। এখানকার পোশাক এবং স্যুভেনিরগুলো ভ্রমণকারীদের জন্য খুবই জনপ্রিয়।
হো চি মিন সিটি (সায়গন) শপিং
হো চি মিন সিটি, যা সায়গন নামেও পরিচিত, ভিয়েতনামের সবচেয়ে বড় শহর এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র, এখানে শপিংয়ের জন্য অনেক কিছু আছে।
বেন থান মার্কেট (Ben Thanh Market)
এই বাজারটি সায়গনের সবচেয়ে পুরানো এবং জনপ্রিয় মার্কেটগুলোর মধ্যে একটি। এখানে আপনি স্থানীয় পোশাক, সিল্কের পণ্য, মশলা, আঞ্চলিক শৈল্পিক দ্রব্য এবং অন্যান্য স্যুভেনির পাবেন। এটি সায়গনের প্রাণকেন্দ্র, তাই এখানে কেনাকাটা করতে আসলে এক ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ হয়।
আপনি এখানে পেতে পারেন:
- আঞ্চলিক সিল্ক: ভিয়েতনামের হাতে তৈরি সিল্কের পোশাক বা স্কার্ফ বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
- মশলা এবং হার্বস: ভিয়েতনামের খাবারের মশলা এবং হরবস খুবই সুস্বাদু এবং ভালো গুণমানের।
- অতুলনীয় স্যুভেনির: সেরকম স্মৃতি হিসেবে কিনতে পারেন স্থানীয় স্যুভেনির যেমন হাতে তৈরি থালা, কাঠের খেলনা বা মূর্তি।
নন গুয়েন হুয়েন রোড (Nguyen Hue Road)
এই রাস্তা সায়গনের একটি আধুনিক শপিং স্ট্রিপ। এখানে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের দোকান এবং অত্যাধুনিক শপিং মল রয়েছে, যেখানে আপনি যে কোন ধরনের শপিং করতে পারবেন।
হ্যালং বে
হ্যালং বে তার চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত, তবে এখানকার বাজারও শপিং প্রেমিকদের জন্য আকর্ষণীয়। এখানে আপনি সুন্দর প্রাকৃতিক পণ্য এবং স্থানীয় হস্তশিল্প খুঁজে পাবেন।
হ্যালং বে মারিনা মার্কেট
হ্যালং বে শহরের প্রধান বাজার, যেখানে আপনি ভিয়েতনামি সিল্ক, হস্তশিল্প, কাঠের কারুকাজ, এবং সুন্দর আঞ্চলিক স্মৃতিচিহ্ন পাবেন। এটা এমন এক জায়গা, যেখানে আপনি হস্তশিল্পের নিদর্শন খুঁজে পাবেন, যা ভিয়েতনামের সংস্কৃতির প্রতিফলন।
ভিয়েতনামে কেনাকাটার টিপস
ভিয়েতনামে কেনাকাটা করতে গেলে কিছু টিপস মনে রাখা জরুরি:
- দামদরকারী কৌশল: ভিয়েতনামে বাজারে দাম দর করা খুবই সাধারণ, বিশেষত স্থানীয় বাজারগুলিতে। তাই, আপনি যদি কিছু পছন্দ করেন, তবে দাম কমানোর চেষ্টা করুন। প্রায় সব পণ্যের দামই আলোচনা করা সম্ভব।
- অথেনটিক স্যুভেনির: স্থানীয় পণ্য কেনার সময় নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি আসল এবং হাতে তৈরি জিনিস কিনছেন। কিছু বাজারে ভুয়া বা কপি জিনিসও বিক্রি হয়।
- ট্যাক্স ফ্রি শপিং: কিছু আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের দোকানে আপনি ট্যাক্স ফ্রি শপিং সুবিধা পেতে পারেন, বিশেষত যদি আপনি বিদেশি নাগরিক হন।
- স্মৃতি হিসেবে কেনা জিনিস: ভিয়েতনাম থেকে কেনা সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মৃতিচিহ্নগুলির মধ্যে সিল্কের পোশাক, কাঠের মূর্তি, স্থানীয় মশলা, এবং হস্তশিল্প পণ্য রয়েছে।
৬. ভিয়েতনামী খাবার এবং রেস্তোরাঁ
ভিয়েতনামের খাবার একটি বহুমুখী এবং সুস্বাদু অভিজ্ঞতা। দেশটির খাবারে প্রচুর স্বাদ, রং, এবং সুগন্ধ রয়েছে, যা প্রতিটি খাবারের সাথে এক নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি করে। আপনি যখন ভিয়েতনামে যাবেন, তখন খাবারের প্রতি আপনার আগ্রহ নিশ্চিতভাবে আরও বেড়ে যাবে। দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই স্থানীয় বিশেষ খাবারের স্বাদ আপনি পেতে পারেন, যা আপনার ভ্রমণকে আরও উপভোগ্য করে তুলবে।
ফো (Pho)
ফো ভিয়েতনামের জাতীয় খাবার। এটি একটি ধরনের স্যুপ, যা সরু চালের নুডল, মাংস, মশলা এবং তাজা ভেজি দিয়ে তৈরি হয়। সাধারণত ফো গরু বা মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়। খাবারটি সাধারণত প্রাতঃরাশ হিসেবে খাওয়া হয়, তবে আপনি দিনের যে কোন সময় এটি উপভোগ করতে পারবেন। আমি যখন প্রথম ফো খেয়েছিলাম, তখন এর স্বাদ এতটা গাঢ় এবং সুস্বাদু ছিল, যা আমাকে পুনরায় এটি খেতে উদ্দীপ্ত করেছে।
বান মি (Banh Mi)
বান মি একটি স্যান্ডউইচ ধরনের খাবার, যা ফ্রেঞ্চ বাগেটের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শাঁস, শাক-সবজি, মাংস (যেমন মুরগি, শূকর বা গরু) এবং বিভিন্ন ধরনের মশলা থাকে। এটি ভিয়েতনামের একটি জনপ্রিয় স্ন্যাকস এবং প্রাতঃরাশ হিসেবে খাওয়া হয়। যখন আমি এটি খেয়েছিলাম, তাজা এবং সুগন্ধযুক্ত উপাদানগুলো একসাথে খেতে বেশ মজাদার ছিল।
বুন চা (Bun Cha)
বুন চা হলো ভিয়েতনামের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার, বিশেষ করে হ্যানয় শহরে। এটি একটি স্যুপের মতো খাবার, যেখানে গরুর মাংস, ভাতের নুডল, তাজা শাক-সবজি এবং মিষ্টি সোস থাকে। এটি একটি হালকা এবং সুস্বাদু খাবার, যা প্রতিদিনের খাবারের জন্য আদর্শ।
গিও (Gio)
গিও ভিয়েতনামের একটি ধরনের সামোসা, যা তেলে ভাজা হয়ে থাকে। এটি মাংস, মিষ্টি শাক বা চিংড়ি দিয়ে ভরা হয় এবং তার সাথে সার্ভ করা হয় এক ধরনের মিষ্টি সসের সাথে। আমি যখন প্রথম গিও খেয়েছিলাম, তখন এটি আমাকে ভিয়েতনামের অন্যতম জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।
কম (Com)
কম হলো ভিয়েতনামের এক ধরণের ভাতের খাবার, যা মাংস, মাছ বা চিংড়ির সাথে পরিবেশন করা হয়। এটি সাধারণত দুটি বা তিনটি প্রধান উপাদান দিয়ে তৈরি হয়, যাতে ভাত, মাংস এবং সস থাকে। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের কম পাওয়া যায়, তবে সবটাই সুস্বাদু।
৭. ভিয়েতনামী কফি (Vietnamese Coffee)
ভিয়েতনামী কফি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়, বিশেষ করে আইস কফি এবং কনডেন্সড মিল্কের সাথে তৈরি কফি (Ca Phe Sua Da)। এটি মিষ্টি, শক্তিশালী এবং প্রশান্তিদায়ক। ভিয়েতনামের রাস্তায় কফি স্টলগুলি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং এক কাপ কফি খেতে আপনি দীর্ঘ সময় বসে থাকতে পারবেন।
রেস্তোরাঁ
ভিয়েতনামে খাবারের অভিজ্ঞতা শুধু রাস্তার ফুড স্টলগুলিতেই সীমাবদ্ধ নয়। এখানে অনেক ভালো রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেগুলিতে ভিয়েতনামী ঐতিহ্য এবং আধুনিক ফিউশন খাবার মিলে থাকে। কিছু জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ নিম্নরূপ:
- কুয়ং এন (Quan An Ngon) – হ্যানয়ে অবস্থিত এই রেস্তোরাঁটি ঐতিহ্যবাহী ভিয়েতনামী খাবারের জন্য বিখ্যাত। আপনি এখানে স্থানীয় সব খাবার পাবেন।
- ফো গাই (Pho Gia) – সাইগনে ফো গাই একটি বিখ্যাত রেস্তোরাঁ যেখানে আপনি খুঁজে পাবেন দেশটির সেরা ফো। এখানে প্রতিটি ফো এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়, যেন একে স্বপ্নের মতো মনে হয়।
- নাম বো (Nam Bo) – এখানে আপনি ভিয়েতনামী ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে পাবেন এবং স্থানীয় পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেন।
৭. নিরাপত্তা এবং টিপস
ভিয়েতনাম একটি নিরাপদ দেশ হলেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত যাতে আপনার ভ্রমণ আরও নিরাপদ এবং আনন্দদায়ক হয়। আমি যখন ভিয়েতনামে ভ্রমণ করেছি, কিছু বিষয় খেয়াল রেখে নিজের অভিজ্ঞতা আরও ভালো করতে পেরেছি। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা টিপস রয়েছে:
১. নগরী এলাকায় সতর্কতা
ভিয়েতনামের শহরগুলো, বিশেষ করে সাইগন (হো চি মিন সিটি) এবং হ্যানয়, বেশ ব্যস্ত থাকে। রাস্তায় হেঁটে চলার সময় বাইক এবং স্কুটারের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি। অনেক সময় পথচারীদের জন্য নির্দিষ্ট লেন থাকে না, তাই আপনি যদি রাস্তায় হাঁটেন, তবে দ্রুত চলতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে।
২. বিনামূল্যে পণ্য বা সেবা থেকে সাবধান
ভিয়েতনামে কিছু পর্যটকদের জন্য ফ্রি সার্ভিসের প্রলোভন থাকতে পারে, যেমন বিশেষ স্থানীয় দ্রব্য অথবা উপহার দেওয়া হবে বলে বলা হয়। এগুলির ক্ষেত্রে সাবধান থাকুন, কারণ অনেক সময় এতে অতিরিক্ত অর্থ চাওয়া হতে পারে। আপনি যদি মনে করেন যে কোনো কিছু অতিরিক্ত মূল্য চাওয়া হচ্ছে, তবে politely সেগুলি এড়িয়ে চলুন।
৩. মূল্য আলোচনা
ভিয়েতনামে রাস্তায় খাবার বা অন্যান্য জিনিস কিনতে গেলে দাম নিয়ে কিছু আলোচনা হতে পারে। সাধারণত আপনি কিছুটা দরদাম করতে পারেন, তবে এটা অবশ্যই সম্মানের সাথে করতে হবে।
৪. স্বাস্থ্য সতর্কতা
ভিয়েতনামে খাবারের ক্ষেত্রে সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন। সড়ক খাবার খাওয়ার আগে নিশ্চিত হোন যে তা তাজা এবং পরিষ্কার। আমি নিজে সাধারণত কাঁচা খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলি, কারণ কিছু খাবার পেটের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
৫. ভ্রমণের সময় হালকা নিরাপত্তা ব্যবস্থা
আপনার মূল্যবান জিনিসপত্র যেমন মোবাইল ফোন, টাকা এবং পাসপোর্ট সবসময় কাছাকাছি রাখুন এবং ব্যাগগুলির দিকে লক্ষ্য রাখুন। ভিয়েতনামে কিছু এলাকা থাকতে পারে যেখানে চুরি বা ছিনতাই হতে পারে, তাই সতর্ক থাকুন।
৬. পর্যটকদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা
আমি সবসময়ই স্বাস্থ্য বীমা নেয়া prefer করি। বিদেশে ভ্রমণকালে স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়লে কিংবা দুর্ঘটনা ঘটলে এর সুবিধা অসাধারণ হতে পারে। তাই, ভ্রমণের আগে নিজের জন্য একটি ভাল স্বাস্থ্য বীমা নিতে ভুলবেন না।
ভিয়েতনাম এমন একটি দেশ, যার প্রতি কোণে আছে এক নতুন অভিজ্ঞতা এবং ভ্রমণের জন্য নতুন কিছু। এখানে আপনি পাবেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থান, চমৎকার খাবার এবং একটি ভিন্ন জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা। ভিয়েতনাম ভ্রমণের সময় এসব দর্শনীয় স্থানগুলি দেখলে আপনি নিশ্চিতভাবে মুগ্ধ হবেন।