বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের শরীর অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয়। এই সময় মায়েদের শরীরে অনেক পরিবর্তন ঘটে, এবং কখনো কখনো পেট খারাপের মতো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হলে মা দুর্বল হয়ে পড়েন, যা শিশুর জন্যও প্রভাব ফেলতে পারে। সঠিকভাবে সমস্যাটি চিহ্নিত করা এবং এর সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় পেট খারাপের কারণ
পেট খারাপ বা ডায়রিয়ার জন্য বেশ কয়েকটি কারণ দায়ী হতে পারে।
১. খাদ্যে দূষণ
যে খাবার মা খাচ্ছেন, সেটি যদি জীবাণুযুক্ত বা দূষিত হয়, তবে এটি পেট খারাপের প্রধান কারণ হতে পারে।
২. পানির সংক্রমণ
নিরাপদ পানি না খাওয়া বা দূষিত পানির কারণে ডায়রিয়া হতে পারে।
৩. অ্যালার্জি বা খাবারের প্রতি সংবেদনশীলতা
কিছু খাবার মায়ের হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা পেট খারাপের কারণ হতে পারে।
৪. বাইরের খাবার খাওয়া
বাইরের তেল-মসলাযুক্ত খাবার বা রাস্তার খাবার প্রায়ই পেট খারাপের সমস্যা তৈরি করে।
৫. ইনফেকশন বা ভাইরাস
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, বা পরজীবী সংক্রমণ মায়ের পেট খারাপের কারণ হতে পারে।
৬. মানসিক চাপ
স্তন্যদানকারী মায়ের মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে হজমে সমস্যা এবং পেট খারাপ হতে পারে।
বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় পেট খারাপের গৃহস্থালি প্রতিকার
১. অধিক পানি পান করুন
ডায়রিয়ার ফলে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। শরীরের পানির অভাব পূরণে বিশুদ্ধ পানি, ডাবের পানি বা ঘরে তৈরি ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ORS) পান করতে পারেন।
২. আদার রস
উপকারিতা: আদা পেটের ব্যথা ও গ্যাস কমায় এবং হজমে সহায়ক।
ব্যবহার:
- এক টুকরো আদা কুচি করে গরম পানিতে সিদ্ধ করুন।
- এই চা দিনে ১-২ বার পান করুন।
৩. ইসবগুলের ভুষি
উপকারিতা: এটি ডায়রিয়ায় কার্যকর কারণ এটি মলের পরিমাণ বাড়িয়ে আনে।
ব্যবহার:
- এক গ্লাস দইয়ে ১ চামচ ইসবগুলের ভুষি মিশিয়ে খান।
৪. দই
উপকারিতা: প্রোবায়োটিক দই হজম প্রক্রিয়া সঠিক করতে সাহায্য করে এবং পেটের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে।
ব্যবহার:
- প্রতিদিন এক বা দুই বাটি প্রাকৃতিক দই খান।
৫. গুড় ও লবণ মেশানো লেবুর শরবত
উপকারিতা: শরীরের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং পেটের অস্বস্তি কমায়।
ব্যবহার:
- এক গ্লাস গরম পানিতে লেবুর রস, সামান্য গুড় ও এক চিমটি লবণ মিশিয়ে পান করুন।
৬. কলার পেস্ট
উপকারিতা: পাকা কলা পেটকে স্বস্তি দেয় এবং শরীরকে শক্তি জোগায়।
ব্যবহার:
- একটি পাকা কলা চটকে নিন এবং সামান্য মধু মিশিয়ে খান।
৭. তুলসি পাতা ও মধু
উপকারিতা: তুলসি পাতা ইনফেকশন প্রতিরোধ করে এবং হজমে সহায়তা করে।
ব্যবহার:
- ৫-৬টি তাজা তুলসি পাতা কুচি করে গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খান।
৮. লবণযুক্ত চালের মাড়
উপকারিতা: এটি সহজেই হজম হয় এবং শরীরে পানির অভাব পূরণ করে।
ব্যবহার:
- চাল সিদ্ধ করে তার মাড় সংগ্রহ করুন এবং লবণ মিশিয়ে পান করুন।
বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় সতর্কতা
বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় পেট খারাপ হলে কয়েকটি বিষয় মেনে চলা জরুরি।
১. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন
পেট খারাপের সময় মা যাতে পর্যাপ্ত পুষ্টি পান তা নিশ্চিত করতে হবে। হালকা খাবার যেমন সিদ্ধ চাল, সেদ্ধ ডিম, স্যুপ ইত্যাদি গ্রহণ করুন।
২. শিশুকে দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যান
মায়ের পেট খারাপ হলেও স্তন্যদান চালিয়ে যাওয়া উচিত। এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৩. অ্যান্টিবায়োটিক নিজে থেকে খাবেন না
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো অ্যান্টিবায়োটিক বা ওষুধ গ্রহণ করবেন না।
৪. পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
হাত ধোয়া, খাবার পরিষ্কার করে খাওয়া এবং পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
৫. অতিরিক্ত ক্লান্তি এড়িয়ে চলুন
পেট খারাপের সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার সময়
যদি পেট খারাপ দীর্ঘস্থায়ী হয় বা নীচের উপসর্গগুলো দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন:
- অতিরিক্ত পানিশূন্যতা (মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ত্বক ফ্যাকাসে হওয়া)।
- মলে রক্ত দেখা।
- তীব্র পেট ব্যথা।
- জ্বর।
- দুর্বলতা বা মাথা ঘোরা।
বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় পেট খারাপ একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি এড়ানো বা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। উপরে বর্ণিত গৃহস্থালি প্রতিকারগুলো মায়ের পেটের সমস্যা উপশম করতে পারে। তবে মনে রাখবেন, এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য প্রদান করে এবং এটি কোনো চিকিৎসাপদ্ধতির বিকল্প নয়। মায়েদের উচিত নিজের স্বাস্থ্য এবং শিশুর সুস্থতার জন্য যোগ্য চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা।