noni juice

ননি জুসের (Noni fruit)  পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

ননি ফল এবং এর থেকে প্রস্তুত করা জুস, অর্থাৎ ননি জুস, আজকাল একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় স্বাস্থ্যপানীয় হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং পলিনেশিয়া অঞ্চলে এই ফলটি হাজার বছর ধরে চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে।

ননি ফল ননি জুসের পরিচিতি

ননি ফল কী?

ননি ফল, যার বৈজ্ঞানিক নাম Morinda citrifolia, মূলত একটি ক্রান্তীয় ফল। এটি “চিজ ফ্রুট” নামেও পরিচিত। ননি ফল দেখতে Bumpy এবং এর কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙ থাকে। পরিপক্ক অবস্থায় এটি হলুদ বা সাদা রঙ ধারণ করে।

ননি জুস কীভাবে তৈরি হয়?

ননি ফলের শাঁস থেকে জুস নিষ্কাশিত হয়। এটি সাধারণত কাঁচা বা গাঁজন প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত করা হয়, যা এর কার্যকারিতা বাড়ায়।

ননি জুসের পুষ্টিগুণ

ননি জুস একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর পানীয়। এতে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পুষ্টিকর ফাইটো-কেমিক্যাল।

পুষ্টি উপাদান (১০০ মিলি ননি জুসে)

উপাদানপরিমাণ
ক্যালরি৪৭ ক্যালরি
কার্বোহাইড্রেট১১ গ্রাম
প্রোটিন১ গ্রাম
ফাইবার০.৫ গ্রাম
ভিটামিন সি৩৪ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম১৫০ মিলিগ্রাম
আয়রন০.৫ মিলিগ্রাম
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টপর্যাপ্ত

ননি জুসে জেরোনিন, স্কোপলেটিন (Scoplatin), এবং অ্যান্থ্রাকুইনোনস (Anthraquinone) নামক উপাদান রয়েছে, যা ননি জুসের অন্যতম কার্যকর বৈশিষ্ট্য।

ননি জুসের স্বাস্থ্য উপকারিতা

ননি জুস (Noni Juice) একটি বহুগুণসম্পন্ন প্রাকৃতিক পানীয়, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে কার্যকরী। এতে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটো-কেমিক্যাল সমৃদ্ধ উপাদান রয়েছে, যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। নিচে ননি জুসের প্রধান স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি বিশদভাবে আলোচনা করা হলো।

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

ননি জুসে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এটি সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।

কীভাবে কার্যকর:
  • ভিটামিন সি ফ্রি-র‌্যাডিক্যাল দ্বারা সৃষ্ট কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে।

২. প্রদাহ কমায়

ননি জুস অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যে ভরপুর, যা আর্থ্রাইটিস বা সংযুক্তি ব্যথার মতো সমস্যার জন্য উপকারী।

কীভাবে কার্যকর:
  • এতে থাকা স্কোপলেটিন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  • পেশি এবং জয়েন্টের ব্যথা হ্রাস করে।

৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

ননি জুস রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়।

কীভাবে কার্যকর:
  • রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস করে।
  • ডায়াবেটিসজনিত জটিলতার ঝুঁকি কমায়।

৪. ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি

ননি জুসের ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বার্ধক্য প্রতিরোধ করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

কীভাবে কার্যকর:
  • ব্রণ এবং দাগ দূর করে।
  • ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
  • কোষ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া উন্নত করে।

৫. চুলের পুষ্টি যোগায়

ননি জুস চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধি করে। এটি খুশকির সমস্যাও সমাধান করে।

কীভাবে কার্যকর:
  • এতে থাকা প্রাকৃতিক ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের গোড়ায় পুষ্টি সরবরাহ করে।
  • চুল পড়া হ্রাস করে।

৬. হজমশক্তি উন্নত করে

ননি জুস অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ করে।

কীভাবে কার্যকর:
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে।

৭. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

ননি জুস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

কীভাবে কার্যকর:
  • এতে থাকা স্কোপলেটিন রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে।
  • রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।

৮. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি

ননি জুস স্ট্রেস এবং উদ্বেগ কমাতে সহায়ক। এটি মানসিক স্বস্তি প্রদান করে।

কীভাবে কার্যকর:
  • জেরোনিন স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
  • মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।

৯. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক

ননি জুসে থাকা ফাইটোকেমিক্যাল ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করতে সাহায্য করে।

কীভাবে কার্যকর:
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
  • কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে।

১০. হৃদরোগ প্রতিরোধ

ননি জুস কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

কীভাবে কার্যকর:
  • ধমনী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
  • রক্তে ফ্যাটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

১১. এনার্জি বাড়ায়

ননি জুস শারীরিক ক্লান্তি দূর করে এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়।

কীভাবে কার্যকর:
  • শরীরের কোষে শক্তি উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
  • পেশি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।

১২. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

ননি জুস পেট ভরা রাখে এবং অপ্রয়োজনীয় ক্ষুধা দমন করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

কীভাবে কার্যকর:
  • এতে ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি।
  • মেটাবলিজম উন্নত করে।

ননি জুসের সঠিক ব্যবহার

. পরিমাণ

প্রতিদিন ৩০-৬০ মিলি ননি জুস পান করা যেতে পারে। তবে, চিকিৎসকের পরামর্শে পরিমাণ নির্ধারণ করা ভালো।

. কখন খাবেন?

খালি পেটে সকালে ননি জুস পান করলে সর্বোচ্চ কার্যকারিতা পাওয়া যায়।

. অন্যান্য উপায়

  • ফলের রস বা স্মুদির সঙ্গে মিশিয়ে।
  • মধু বা লেবুর রস মিশিয়ে খেলে স্বাদ বাড়ে।

ননি জুসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যদিও ননি জুস সাধারণত নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত গ্রহণ করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে:

১. লিভার সমস্যা: অতিরিক্ত গ্রহণ লিভারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
২. রক্তচাপের সমস্যা: নিম্ন রক্তচাপের ব্যক্তিদের এটি সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত।
৩. অ্যালার্জি: কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে।
৪. গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যদানের সময়: গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করা উচিত।

ননি জুস কেন খাবেন?

ননি জুসের বহুমুখী স্বাস্থ্য উপকারিতা এটিকে একটি সুপারফুড হিসেবে তুলে ধরে। এটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্যের সামগ্রিক উন্নতিতে ভূমিকা রাখে।

উপকারিতার সংক্ষেপণ

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি।
  • ত্বক এবং চুলের যত্ন।
  • হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধ।
  • মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ।

ননি জুস একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর পানীয়। এটি প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ এবং শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা রক্ষায় সহায়ক। তবে, সঠিক পরিমাণ এবং সঠিক পদ্ধতিতে গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Check Also

ব্রুয়ার্স ইস্টের (Brewer’s Yeast) স্বাস্থ্য উপকারিতা

ব্রুয়ার্স ইস্ট একটি প্রাকৃতিক ফার্মেন্টেশন উপাদান যা খাদ্য ও পানীয় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত …

মশলাদার খাবারের (Spicy Food) স্বাস্থ্য উপকারিতা

মশলাদার খাবারের প্রতি আকর্ষণ বিশ্বজুড়ে এক অদ্ভুত প্রভাব ফেলেছে। খাবারে তীব্র মশলা, ঝাল বা ঝাঁঝালো …

Exit mobile version