pms mood swings

মাসিকের আগে মেজাজ নিয়ন্ত্রণ: ঘরোয়া সমাধান ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন

পিরিয়ড শুরুর আগে অনেক নারী বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সম্মুখীন হন। এর মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হল পিএমএস (প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম) যা মেজাজের ওঠা-নামার কারণ হতে পারে। এই সময়ে হতাশা, দুশ্চিন্তা, রাগ, কান্না, বা অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা অনেক মহিলার জন্য সাধারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে ঘরোয়া প্রতিকার এবং জীবনযাপনের সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যাকে কমানো সম্ভব।

সতর্কীকরণ: এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরামর্শের জন্য অবশ্যই একজন যোগ্য পেশাদারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

পিএমএস মেজাজ পরিবর্তনের কারণ

পিএমএস মূলত হরমোনজনিত সমস্যা। মাসিক চক্রের শেষের দিকে প্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন হরমোনের ওঠা-নামার কারণে মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের (মুড নিয়ন্ত্রণকারী রাসায়নিক) পরিমাণে পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে মেজাজের উপর প্রভাব পড়ে।

অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  1. পুষ্টির অভাব: বিশেষ করে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ভিটামিন বি৬।
  2. মানসিক চাপ: দীর্ঘদিনের স্ট্রেস পিএমএসের লক্ষণ বাড়িয়ে তোলে।
  3. জেনেটিক ফ্যাক্টর: পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে এই লক্ষণ থাকলে এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

পিএমএস মেজাজ পরিবর্তনের লক্ষণ

পিএমএস মেজাজ পরিবর্তনের সাধারণ লক্ষণগুলো হল:

  1. মেজাজের ওঠা-নামা
  2. দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ
  3. হতাশা
  4. অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা
  5. মনোযোগের অভাব
  6. ঘুমের সমস্যা

ঘরোয়া উপায়ে পিএমএস মেজাজ পরিবর্তন কমানোর কার্যকর পদ্ধতি

. সুষম খাদ্য গ্রহণ

পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করলে শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণ এবং মেজাজ উন্নত হয়।

কী খাবেন:

  • ফলমূল শাকসবজি: বিশেষ করে কলা, পালং শাক, ব্রকলি, এবং বীট।
  • সম্পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার: ব্রাউন রাইস, ওটস, এবং বাসমতি চাল।
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: ডিম, মাষকলাই (উরদ ডাল), এবং বাদাম।
  • ওমেগা সমৃদ্ধ খাবার: মাছ (যেমন স্যামন), চিয়া বীজ, এবং আখরোট।

কী এড়িয়ে চলবেন:

  • প্রক্রিয়াজাত খাবার: চিপস, প্যাকেটজাত খাবার।
  • চিনি: অতিরিক্ত চিনি খেলে হরমোন আরও ভারসাম্যহীন হতে পারে।
  • ক্যাফেইন অ্যালকোহল: মেজাজের ওঠা-নামা বাড়াতে পারে।

. নিয়মিত শরীরচর্চা

শরীরচর্চা মানসিক চাপ কমায় এবং সেরোটোনিন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

কার্যকর ব্যায়াম:

  1. ইয়োগা: মন ও শরীরকে শিথিল করতে সাহায্য করে।
  2. এরোবিক এক্সারসাইজ: যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, বা সাইকেল চালানো।
  3. পাইলেটস: বিশেষ করে পিএমএস-এর সময় পেশির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

. হার্বাল চা পান

উপকারী ভেষজ চা:

  • গোলাপ ফলের চা (রোজহিপ): প্রদাহ কমায় এবং হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখে।
  • ক্যামোমাইল চা: মেজাজ শান্ত রাখতে এবং ঘুম উন্নত করতে সাহায্য করে।
  • আদার চা: হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখে এবং বমি বমি ভাব কমায়।

. ম্যাসাজ অ্যারোমাথেরাপি

ম্যাসাজে ব্যবহৃত তেল:

  • ল্যাভেন্ডার তেল: মানসিক চাপ কমায়।
  • জোজোবা তেল: ত্বককে শান্ত করে এবং আরাম দেয়।

পদ্ধতি:

  1. তেলের কয়েক ফোঁটা হাতে নিন।
  2. তলপেট ও পিঠে ধীরে ধীরে মালিশ করুন।
  3. প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এটি করুন।

. হাইড্রেশন নিশ্চিত করুন

পানি কম খেলে শরীর আরও ক্লান্ত এবং মেজাজ খারাপ হয়। প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।

. ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার

উৎস:

  • ম্যাগনেসিয়াম: শূলফা (ডিল), বাদাম, এবং ডার্ক চকলেট।
  • ক্যালসিয়াম: দুধ, দই, এবং সাদা তিল।

. ধ্যান রিল্যাক্সেশন

ধ্যান এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর।

  1. দিনে ১৫-২০ মিনিট ধ্যান করুন।
  2. শ্বাসপ্রশ্বাসের পদ্ধতি: ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন।

. সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার (ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী)

  1. ভিটামিন বি৬: সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়ায়।
  2. ম্যাগনেসিয়াম: মেজাজ উন্নত করে এবং পেশির ব্যথা কমায়।
  3. ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড: মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।

. ঘুমের গুণমান উন্নত করুন

ঘুমের অভাবে পিএমএসের লক্ষণ আরও বাড়ে।

  1. প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন।
  2. শোয়ার আগে মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার কমান।
  3. ঘুমানোর আগে হালকা গরম দুধ পান করুন।

১০. সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখুন

প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো মানসিকভাবে স্বস্তি দেয়। যেকোনো চাপ বা সমস্যা ভাগ করলে তা সহজ হয়।

পিএমএস মেজাজ পরিবর্তনকে পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলেও, উপরোক্ত ঘরোয়া উপায় এবং জীবনযাপনের পরিবর্তন দ্বারা এটি অনেকটাই কমানো সম্ভব। তবে লক্ষণগুলো যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা আপনার দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে, তাহলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

error: Content is protected !!
Scroll to Top