ভারত তার বৈচিত্র্যময় ভূতাত্ত্বিক গঠন এবং ভূ-প্রকৃতির জন্য সমৃদ্ধ খনিজ সম্পদের অধিকারী একটি দেশ। ভারতে বিভিন্ন ধরণের খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়, যা দেশের অর্থনীতি ও শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে খনিজ সম্পদের বিভিন্ন বিভাগ নিয়ে আলোচনা করা হল।
প্রচুর পরিমাণে পাওয়া খনিজ সম্পদ:
১. লোহা আকরিক (Iron Ore)
উৎপাদন:
ভারত বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম লোহা আকরিক উৎপাদনকারী দেশ। ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড এবং ছত্তিশগড়ের খনিগুলি লোহা আকরিকের মূল উত্স।
মাইনস:
- ওড়িশা: কৈরনজার, বারবিল
- ঝাড়খণ্ড: নোয়ামুন্ডি, গোমোহ
- ছত্তিশগড়: দান্তেওয়াড়া
ব্যবহার:
লোহার আকরিক ইস্পাত তৈরির প্রধান উপাদান। ইস্পাত শিল্পের পাশাপাশি এটি নির্মাণ এবং মেশিন তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়।
পরিমান এবং মূল্য:
ভারতে প্রচুর পরিমাণে লোহা আকর রয়েছে, যার মোট পরিমাণ 33.276 বিলিয়ন টনেরও বেশি।এর আনুমানিক বাজার মূল্য ২ লক্ষ কোটি টাকার মতো।
২. বক্সাইট (Bauxite)
উৎপাদন:
ভারতে বক্সাইটের বড় খনি রয়েছে, যা অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল। ওড়িশা, ছত্তিশগড়, এবং মহারাষ্ট্রে প্রধান বক্সাইটের মাইনস রয়েছে।
মাইনস:
- ওড়িশা: পঞ্চপত্রা, কোরাপুট
- ছত্তিশগড়: মইনার
- মহারাষ্ট্র: কলসুবাই
ব্যবহার:
বক্সাইট থেকে অ্যালুমিনিয়াম তৈরি করা হয়, যা বিমান চলাচল, গাড়ি, এবং প্যাকেজিং শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
পরিমান এবং মূল্য:
ভারতের বক্সাইট মজুদ প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন টন বলে অনুমান করা হয়। অনুমানিত বক্সাইট মজুদ এবং অনুমানিত দামের ভিত্তিতে ভারতের বক্সাইট মজুদের মোট মূল্য ₹২১,০৩৭.৫ কোটি থেকে ₹২৩,৩৭৫ কোটির মধ্যে হতে পারে।
৩. ম্যাঙ্গানিজ (Manganese)
উৎপাদন:
ভারত বিশ্বের অন্যতম প্রধান ম্যাঙ্গানিজ উৎপাদনকারী দেশ। ভারতে মূলত মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, কর্ণাটক এবং অন্ধ্রপ্রদেশে ম্যাঙ্গানিজের প্রধান খনিগুলি রয়েছে।
মাইনস:
- মধ্যপ্রদেশ: বলাঘাট
- মহারাষ্ট্র: নাগপুর
- ওড়িশা: সুকিন্দা
- কর্ণাটক: সাঁতারা
- অন্ধ্রপ্রদেশ: বিশাখাপত্তনম
ব্যবহার:
ম্যাঙ্গানিজ প্রধানত ইস্পাত উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। ইস্পাতের শক্তি বৃদ্ধি এবং জং প্রতিরোধে ম্যাঙ্গানিজ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এছাড়াও, এটি রাসায়নিক শিল্প এবং ব্যাটারি তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
পরিমান এবং মূল্য:
ভারতের ম্যাঙ্গানিজ মজুদ প্রায় ২০০ মিলিয়ন টন বলে অনুমান করা হয়।ম্যাঙ্গানিজের বাজার মূল্য ইস্পাত শিল্পের চাহিদার ওপর নির্ভরশীল। ভারতে এবং বিশ্ববাজারে এর চাহিদা ক্রমবর্ধমান, কারণ ইস্পাত শিল্পে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
মধ্যম পরিমাণে পাওয়া খনিজ সম্পদ:
১. তামা (Copper)
উৎপাদন:
তামার প্রধান মাইনস রয়েছে রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড এবং মধ্যপ্রদেশে। এটি ইলেকট্রনিক্স শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
মাইনস:
- রাজস্থান: খেতরি
- ঝাড়খণ্ড: মুসাবনি
- মধ্যপ্রদেশ: মালানজখান্ড
ব্যবহার:
তামা ইলেকট্রিক তার, মোটর, এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
মূল্য:
তামার বাজার মূল্য শিল্পের চাহিদার ওপর নির্ভর করে এবং এটি বৈশ্বিক শিল্প ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
২. কয়লা (Coal)
উৎপাদন:
ভারত বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম কয়লা উৎপাদক দেশ। প্রধান কয়লা খনিগুলি রয়েছে ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে।
মাইনস:
- ঝাড়খণ্ড: ঝরিয়া, বোকারো
- ছত্তিশগড়: কোরবা
- ওড়িশা: তালচের
- মধ্যপ্রদেশ: সিঙ্গরাউলি
ব্যবহার:
কয়লা প্রধানত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ইস্পাত শিল্প এবং সিমেন্ট কারখানায় এর ব্যাপক ব্যবহার হয়।
মূল্য:
ভারতে কয়লার বার্ষিক মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা, যা দেশের জিডিপির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।
অল্প পরিমাণে পাওয়া খনিজ সম্পদ:
১. তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস (Oil and Natural Gas)
উৎপাদন:
ভারতের তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় উৎপাদক রাজ্যগুলি হল রাজস্থান, গুজরাট, এবং আসাম। এছাড়া অফশোর ক্ষেত্রগুলি মুম্বাই এবং কাঁদলার মতো অঞ্চলগুলিতে রয়েছে।
মাইনস ও ক্ষেত্রগুলি:
- রাজস্থান: বারমার
- আসাম: ডিগবই
- গুজরাট: কাঁচ
ব্যবহার:
তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান ব্যবহার বিদ্যুৎ উৎপাদন, গাড়ির জ্বালানি, এবং পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে হয়।
মূল্য:
তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজার মূল্য লক্ষ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে যায়, যা দেশের শক্তি নিরাপত্তা ও অর্থনীতির মেরুদণ্ড।
২. সোনা (Gold)
উৎপাদন:
ভারতে সোনা মূলত কর্ণাটকের কলার গোল্ড ফিল্ডে পাওয়া যায়। তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশেও কিছু পরিমাণে সোনা পাওয়া যায়।
মাইনস:
- কর্ণাটক: কোলার
- তামিলনাড়ু: ভানজারমালা
ব্যবহার:
সোনা মূলত গহনা তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ উপকরণ হিসেবে কাজ করে।
মূল্য:
ভারতে সোনার বাজার মূল্য বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভরশীল এবং এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার একটি প্রতীক।