ভারত, একটি বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় দেশ, বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। এটি সবার জন্য কিছু না কিছু অফার করে, আপনি যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থান, সংস্কৃতি, বা রুচিশীল খাবারের অভিজ্ঞতা খুঁজে থাকেন। বাংলাদেশের কাছাকাছি অবস্থান এবং সহজ প্রবেশাধিকার সহ, ভারত ভ্রমণ বিশেষ করে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য বেশ জনপ্রিয়। আমি যখন ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছি, তখন অনেক নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করেছি, যেগুলো আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই।
এই গাইডটি আপনাদের জন্য প্রস্তুত করেছি যাতে আপনি ভারত ভ্রমণ সম্পর্কে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারেন। আমি জানি, ভারত ভ্রমণ করার আগে অনেক প্রশ্ন মনে আসে, তাই আমি চেষ্টা করেছি এই গাইডের মাধ্যমে সবকিছু বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করার।
১. ভারত ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতি
ভিসা এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র
বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার জন্য ভিসা প্রয়োজন। যদিও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মুক্ত সীমান্ত থাকলেও পর্যটকদের জন্য ভিসার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা করার আগে এই বিষয়টি নিশ্চিত করুন।
ভিসা প্রক্রিয়া:
ভারতে যাওয়ার জন্য সাধারণত তিন ধরনের ভিসা পাওয়া যায়:
- ট্যুরিস্ট ভিসা: সাধারণ পর্যটকদের জন্য
- বিজনেস ভিসা: ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করার জন্য
- ই–ভিসা: ই-ভিসা পদ্ধতির মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাবার সুবিধা
বাংলাদেশ থেকে ই-ভিসা পাওয়ার ব্যবস্থা সহজ, বিশেষ করে যদি আপনার সফরের উদ্দেশ্য পর্যটন হয়। এছাড়া, সাধারণত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় দূতাবাসে ভিসা আবেদন করতে হয়। আমি যখন ভারতের জন্য ভিসা নিয়েছিলাম, তা কিছুদিনের মধ্যে ইস্যু হয়ে গিয়েছিল। ভিসা প্রাপ্তির জন্য আপনি ভারতীয় হাইকমিশন বা কনস্যুলেটে আবেদন করতে পারেন।
ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র:
- পাসপোর্ট (যার মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস বাকি আছে)
- ভিসা আবেদন ফরম
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- ফ্লাইট টিকিট এবং হোটেল বুকিং কনফার্মেশন
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা অর্থনৈতিক প্রমাণ
২. ভারত ভ্রমণের সেরা সময়
ভারতের ভ্রমণ সময় অনেকটাই নির্ভর করে আপনি কোন অঞ্চলে ভ্রমণ করতে চান তার উপর। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ঋতুতে আলাদা ধরনের আবহাওয়া থাকে। সাধারণভাবে, ভারতে ভ্রমণের জন্য অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে সেরা সময়, কারণ এই সময়ে আবহাওয়া শীতল এবং আরামদায়ক।
শীতকাল (নভেম্বর – ফেব্রুয়ারি):
এই সময় ভারতের বেশিরভাগ জায়গাতেই ঠাণ্ডা থাকে। বিশেষ করে উত্তর ভারতের শহরগুলি যেমন দিল্লি, আগ্রা, জয়পুর, এবং কাঠমাণ্ডু অঞ্চল এই সময় দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়। সেন্ট্রাল এবং দক্ষিণ ভারতেও এই সময়টি উপভোগ্য, কারণ গরম কম থাকে।
গরমকাল (মার্চ – জুন):
গরম মাসে ভারত বেশ গরম থাকে, বিশেষত পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। যেসব জায়গায় গরম বেশি, সেগুলোতে ভ্রমণ পরিহার করা ভাল। তবে, যদি আপনি পাহাড়ি অঞ্চলে যেতে চান, তবে এই সময়টি আদর্শ হতে পারে।
বর্ষাকাল (জুলাই – অক্টোবর):
বর্ষাকালে ভারতে মুষলধারে বৃষ্টি হতে পারে। তবে, এই সময়টিতে ভারতীয় হিল স্টেশনগুলো ভ্রমণের জন্য ভালো। আমি যখন মুম্বাই, কেরালা, বা কাশ্মীর গিয়েছিলাম, সেখানে রেইন ফরেস্টের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এই সময়টি আদর্শ ছিল।
ভারতে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য
ভারত, বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম দেশ এবং এক অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় গন্তব্যস্থল। এখানকার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেশের পর্যটন শিল্পকে বিশেষভাবে প্রসারিত করেছে। ভারত ভ্রমণ করার সময় আপনার কাছে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা হতে পারে, যেগুলো আপনাকে বিস্মিত করবে। আপনি যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থান, কিংবা সংস্কৃতি দেখতে চান, তাহলে ভারত একটি অমূল্য রত্ন। এই লেখায় আমি ভারতীয় কিছু জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যাতে আপনি আপনার পরবর্তী ভ্রমণের জন্য সঠিক পরিকল্পনা নিতে পারেন।
১. তাজমহল, আগ্রা
তাজমহল, ভারতের অন্যতম বিখ্যাত এবং বিশ্ববিখ্যাত স্থাপনা। এটি আগ্রার একটি মুঘল সমাধি, যা সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়। এটি একটি সাদা মার্বেল প্যালেস, যা উজ্জ্বল শিলালিপি এবং মার্বেল কাটা কাজের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে পরিচিত এবং একে “প্রেমের প্রতীক” হিসেবেও জানানো হয়। তাজমহল শুধু ভারত নয়, পুরো পৃথিবীর দর্শনার্থীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় গন্তব্য।
কী দেখবেন:
- তাজমহলের প্রধান গেট
- তাজমহলের প্রাঙ্গণ
- তাজমহলের ভেতরে থাকা শাহজাহান ও মমতাজ মহলের সমাধি
- মুঘল গার্ডেন এবং লেক
২. দিল্লি
দিল্লি, ভারতের রাজধানী এবং একটি ঐতিহাসিক শহর যা রাজনীতি, ব্যবসা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের মেলবন্ধন। দিল্লি ভ্রমণ করতে আসলে আপনি ভারতের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সাথে পরিচিত হবেন। দিল্লির বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান যেমন লাল কেল্লা, কুতুব মিনার, ইন্ডিয়া গেট, জামা মসজিদ, রাজঘাট, ও আকবরের সাম্রাজ্যের স্থাপত্যের নিদর্শন দেখতে পাবেন।
দিল্লির প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- লাল কেল্লা: মুঘল সাম্রাজ্যের বিখ্যাত স্থাপনা, যার ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ।
- কুতুব মিনার: ভারতের সবচেয়ে উঁচু মিনার, যা ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত।
- ইন্ডিয়া গেট: একটি যুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, যা ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নির্মিত।
- জামা মসজিদ: ভারতের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ, যা মুঘল স্থাপত্যের একটি সুন্দর উদাহরণ।
৩. রাজস্থান
রাজস্থান, ভারতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধ এক অঞ্চল। এখানে রয়েছে অসাধারণ রাজমহল, দুর্গ, এবং মরুভূমি। রাজস্থানের বিভিন্ন শহর, যেমন জয়পুর, উদয়পুর, এবং জয়সালমির, ভারতের ঐতিহ্য এবং রাজকীয় স্থাপত্যের একটি সুন্দর মিশ্রণ। রাজস্থানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন অবিশ্বাস্য স্থাপত্য এবং চমৎকার ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ।
রাজস্থানের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- জয়পুর (পিংক সিটি): রাজস্থানের রাজধানী, যা তার রাজকীয় মহল এবং দুর্গের জন্য বিখ্যাত।
- উদয়পুর (লেক সিটি): এর সুন্দর লেক এবং রাজকীয় প্রাসাদ দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে।
- জয়সালমির: এটি সোনালি শহর নামে পরিচিত এবং এখানকার সোনালী দুর্গ এবং মরুভূমি পর্যটকদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়।
- জোধপুর: ব্লু সিটি, যেখানে অতি পরিচিত মেহরানগড় দুর্গ অবস্থিত।
৪. কাশ্মীর
কাশ্মীর, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত, এক বিশেষ ধরনের স্থান যা আপনাকে এক ভিন্ন পৃথিবীতে নিয়ে যাবে। কাশ্মীরের শ্বেতপাথর পাহাড়, সুবিন্যস্ত গাছপালা, এবং মনোরম হ্রদ এক ধরনের শান্তি ও প্রশান্তি এনে দেয়। শ্রীনগর, পাহালগাম, গুলমার্গ, এবং সোপুর—এই স্থানগুলো কাশ্মীরের বিশেষ আকর্ষণ।
কাশ্মীরের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- শ্রীনগর: এর সুপরিচিত ডাল লেক এবং শিকারা রাইড বিশেষ আকর্ষণীয়।
- গুলমার্গ: একটি শীতকালীন পর্যটন কেন্দ্র, যা স্কিইং এর জন্য খুবই বিখ্যাত।
- পাহালগাম: এটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ গন্তব্য, যা নিরিবিলি পরিবেশ এবং পাহাড়ের সৌন্দর্য দিয়ে ঘেরা।
- সোপুর: এটি কাশ্মীরের আরও একটি মনোরম স্থান, যেখানে সুদৃশ্য পাইন গাছের বন রয়েছে।
৫. কেরালা
কেরালা, ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং শান্ত পরিবেশের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। কেরালাকে ‘গডস অন কান্ট্রি’ বলা হয়, কারণ এখানে রয়েছে সুন্দর ব্যাকওয়াটার, সমুদ্র সৈকত, এবং সবুজ বনাঞ্চল। কেরালার আলাপ করে আপনি শান্তির অনুভূতি পাবেন এবং তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
কেরালার প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- আলাপুজা: এখানকার ব্যাকওয়াটার ট্রিপ একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটন কার্যকলাপ।
- কোচি: ভারতের বাণিজ্যিক শহর, যেখানে ভারতের ইতিহাস এবং পর্তুগিজ, ডাচ এবং ব্রিটিশ উপনিবেশের চিহ্ন রয়েছে।
- ভিক্রমনগর: এখানকার সুপ্রসিদ্ধ বোট রাইড এবং সুন্দর দৃশ্য এক বিশেষ আকর্ষণ।
- মুন্নার: এক শান্ত পাহাড়ী শহর, যা তার চা বাগান এবং ঠাণ্ডা আবহাওয়ার জন্য পরিচিত।
৬. গোয়া
গোয়া, ভারতীয় উপকূলে অবস্থিত একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সৈকত গন্তব্য। এটি তার সোনালী সৈকত, নাইটলাইফ, এবং জলক্রীড়া কার্যক্রমের জন্য বিখ্যাত। গোয়া বিশেষ করে পর্যটকদের কাছে একটি রিল্যাক্সিং গন্তব্য হিসেবে পরিচিত।
গোয়ার প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- পালোলেম সৈকত: এটি গোয়ার অন্যতম জনপ্রিয় সৈকত এবং এখানে পর্যটকরা বিভিন্ন জলক্রীড়া উপভোগ করতে পারেন।
- বাগা সৈকত: এখানে নাইটলাইফ এবং রেস্টুরেন্টে খাওয়ার জন্য অনেক বিকল্প রয়েছে।
- ক্যান্ডোলিম সৈকত: একটি শান্ত এবং সুস্থ পরিবেশ, যা শিথিল করতে সাহায্য করে।
- ভারসোই সৈকত: এক ধরনের অসাধারণ এবং কম জনাকীর্ণ সৈকত, যা নীরবতার অনুভূতি দিয়ে পূর্ণ।
৭. মুম্বাই
মুম্বাই, ভারতীয় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি “বলিউড”-এর কেন্দ্রস্থল, এছাড়া এটি ভারতের আর্থিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত। মুম্বাইতে আপনি পাবেন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, আকর্ষণীয় উপকূলীয় স্থান এবং একাধিক ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ।
মুম্বাইয়ের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া: এটি মুম্বাইয়ের অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান, যা ব্রিটিশ রাজের সময় তৈরি হয়েছিল।
- চোপরী বিচ: এখানকার সমুদ্র সৈকত ও রেস্টুরেন্টগুলো মুম্বাইয়ের বিশেষ আকর্ষণ।
- ঐতিহাসিক স্থানগুলি: যেমন, কোলাবা, লিওনার্ড মিউজিয়াম, এবং মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য।
৮. বেঙ্গালুরু
বেঙ্গালুরু, ভারতীয় প্রযুক্তি হাব, যা উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রের উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। তবে, বেঙ্গালুরু তার আকর্ষণীয় উদ্যান এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্যও পরিচিত।
বেঙ্গালুরুর প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- লালবাগ উদ্যান: ভারতের অন্যতম বৃহত্তম উদ্যান এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থান।
- বিদ্যাভরতি উদ্যান: যেখানে আপনি বেঙ্গালুরুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
৯. মাঞ্চারী
মাঞ্চারী পশ্চিমবঙ্গের একটি ছোট্ট শহর, যা এর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং শান্ত পরিবেশের জন্য পরিচিত। এই শহরটি বিভিন্ন পাহাড়, বনভূমি এবং জলপ্রপাতের জন্য বিখ্যাত, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য।
মাঞ্চারীর প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- মাঞ্চারী জলপ্রপাত: এটি একটি অত্যন্ত সুন্দর জলপ্রপাত, যা এখানে আসা পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।
- ফলস পর্বত: এটি মাঞ্চারী অঞ্চলের একটি বিশেষ পাহাড়, যা ট্রেকিং এবং অন্যান্য অ্যাডভেঞ্চার কার্যক্রমের জন্য জনপ্রিয়।
১০. সিকিম
সিকিম ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত একটি পাহাড়ি রাজ্য, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং শান্ত পরিবেশের জন্য বিখ্যাত। সিকিমে বিভিন্ন পর্বতশৃঙ্গ, প্রাকৃতিক উদ্যান, লেক এবং মনাস্ট্রি রয়েছে, যা এটি পর্যটকদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য করে তুলেছে।
সিকিমের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- গ্যাংটক: সিকিমের রাজধানী, যেখানে আপনি নানান পাহাড়ের সৌন্দর্য এবং স্থানীয় বাজার উপভোগ করতে পারবেন।
- থাঙ্গু ভ্যালি: এটি একটি বিখ্যাত পাহাড়ী ভ্যালি, যেখানে আপনি শীতকালীন ক্রীড়া, যেমন স্কিইং, উপভোগ করতে পারেন।
- চাঙ্গু লেক: এক অত্যন্ত শান্ত এবং সুন্দর লেক, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অত্যাশ্চর্য স্থান।
১১. মণিপুর
মণিপুর, ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় রাজ্য। এটি তার সুদৃশ্য পাহাড়, জলপ্রপাত, এবং ঐতিহ্যবাহী নৃত্যশিল্পের জন্য পরিচিত। মণিপুরে আপনি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থানগুলো দেখতে পাবেন, এবং এখানকার সংস্কৃতি আপনাকে মুগ্ধ করবে।
মণিপুরের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- ইম্ফল: মণিপুরের রাজধানী, যেখানে ঐতিহাসিক স্থান যেমন, খঞ্জাবলী মন্দির এবং পারম্পরিক নৃত্যশালা রয়েছে।
- লেকওয়ার মঠ: এটি মণিপুরের একটি প্রাচীন মঠ, যা ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রাখে।
- সেনাপতি: এটি একটি সুন্দর পাহাড়ি এলাকা, যেখানে আপনি ট্রেকিং এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
১২. হিমাচল প্রদেশ
হিমাচল প্রদেশ ভারতের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ রাজ্য, যেখানে আপনি পাহাড়, জঙ্গল এবং হ্রদ দেখতে পাবেন। এই রাজ্যের বিশেষ আকর্ষণ হলো এর বরফাবৃত পাহাড়, যা শীতকালীন ক্রীড়ার জন্য আদর্শ গন্তব্য।
হিমাচল প্রদেশের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- মানালি: একটি জনপ্রিয় হিল স্টেশন, যেখানে আপনি ট্রেকিং, স্কিইং এবং অন্যান্য অ্যাডভেঞ্চার ক্রীড়া উপভোগ করতে পারেন।
- দালহৌসি: পাহাড়ের উপর অবস্থিত একটি শান্ত শহর, যেখানে আপনি প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করতে পারবেন।
- কুলু: এখানকার আল্পস পাহাড়, নদী এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
- কান্দাঘাট: এটি একটি শান্ত এবং প্রাকৃতিক স্থান, যেখানে আপনি তাজা পাহাড়ি হাওয়ার মাঝে বিশ্রাম নিতে পারবেন।
১৩. মহাবলিপুরম
মহাবলিপুরম, তামিলনাডুর একটি ঐতিহাসিক স্থান, যা তার প্রাচীন মন্দির এবং স্থাপত্যের জন্য বিশ্বখ্যাত। এটি একটি UNESCO বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান এবং এটি তার স্থাপত্য সৌন্দর্যের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত।
মহাবলিপুরমের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- শোর টেম্পল: এটি একটি প্রাচীন মন্দির, যা মহাবলিপুরমের অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান।
- পানচ রথ: এটি ৫টি প্রাচীন মন্দিরের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ স্থাপনা, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
- কৃষ্ণ মন্দির: মহাবলিপুরমের একটি প্রাচীন মন্দির, যা তার স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে জনপ্রিয়।
১৪. মুম্বাই – স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য
মুম্বাই, ভারতের বাণিজ্যিক কেন্দ্র, যেখানে আপনাকে ঐতিহাসিক এবং আধুনিকতার একটি নিখুঁত মিশ্রণ দেখতে হবে। মুম্বাইয়ের উৎসব, রান্নার ঐতিহ্য এবং প্রাণবন্ত পরিবেশ পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এখানে আপনি বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান দেখতে পাবেন, যেমন গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া, চোপরী বিচ এবং সমুদ্রসৈকত।
১৫. উত্তরাখণ্ড
উত্তরাখণ্ড, ভারতের একটি শান্ত এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর রাজ্য, যেখানে আপনি হিমালয়ের গাঢ় সৌন্দর্য দেখতে পাবেন। এখানে রয়েছে বেশ কিছু বিখ্যাত তীর্থস্থান, যেমন কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, এবং হরিদ্বার।
উত্তরাখণ্ডের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- নৈনিতাল: এটি একটি জনপ্রিয় হিল স্টেশন, যা তার উঁচু পাহাড়, হ্রদ এবং শান্ত পরিবেশের জন্য বিখ্যাত।
- কুমায়ুন: কুমায়ুন অঞ্চলের পাহাড়, জঙ্গল এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
- রানি কিটি: এটি একটি সুন্দর পর্যটন গন্তব্য, যা তার শীতকালীন সৌন্দর্য এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য জনপ্রিয়।
১৬. রাজস্থান
রাজস্থান ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি রাজ্য, যা তার রাজকীয় ঐতিহ্য, দুর্গ, মন্দির এবং প্রাচীন স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত। রাজস্থান ভ্রমণ আপনার জন্য এক ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা হবে।
রাজস্থানের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- জয়পুর: “পিংক সিটি” নামে পরিচিত জয়পুর রাজস্থানের রাজধানী। এখানে আপনি আম্বা দুর্গ, হাওয়া মহল, সিটি প্যালেস এবং জান্তর মন্টার মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলি দেখতে পারবেন।
- উদয়পুর: রাজস্থানের অন্যতম রোমান্টিক শহর, যেখানে আপনি উদয়পুর লেক, সিটি প্যালেস এবং জল মন্দির দেখতে পাবেন।
- জোধপুর: “ব্লু সিটি” নামে পরিচিত, যেখানে আপনি মেহরানগড় দুর্গ, উমেদ ভবন এবং জসওয়ান থাদা দেখতে পাবেন।
- জৈপুর: রাজস্থানের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় শহর, যেখানে আপনি ঐতিহাসিক দুর্গ, মন্দির এবং প্যালেসগুলি দেখতে পাবেন।
১৭. কেরালা
কেরালা, ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত একটি রাজ্য, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমুদ্রসৈকত এবং ঐতিহ্যবাহী আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। কেরালার backwaters এবং সুন্দর সৈকতগুলি পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
কেরালার প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- আলেপ্পি: কেরালার বিখ্যাত ব্যাকওয়াটার অঞ্চল, যেখানে আপনি houseboat ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন।
- কোজিকোড: এক ঐতিহাসিক শহর যেখানে আপনি সঙ্গীত, নৃত্য এবং প্রাচীন স্থাপত্য দেখতে পারবেন।
- ভিঞ্জারাম সৈকত: এটি কেরালার একটি শান্ত এবং সুন্দর সমুদ্রসৈকত, যেখানে আপনি সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন।
- থিরুঅন্নন্তপুরম: কেরালার রাজধানী, যা তার বিশাল শিব মন্দির এবং ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত।
১৮. নাগাল্যান্ড
নাগাল্যান্ড ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি রাজ্য, যা তার পাহাড়, মৃন্ময় স্থাপত্য এবং উপজাতীয় সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। নাগাল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং শান্ত পরিবেশ ভ্রমণকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।
নাগাল্যান্ডের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- কোহিমা: নাগাল্যান্ডের রাজধানী, যেখানে আপনি ঐতিহ্যবাহী উপজাতীয় নৃত্য, মেলা এবং শিল্পকলাগুলি দেখতে পাবেন।
- ডিমাপুর: এখানে আপনি উজ্জ্বল সবুজ প্রকৃতি, পাহাড় এবং বনাঞ্চল উপভোগ করতে পারবেন।
- নোকলাক হিলস: এটি একটি অত্যন্ত সুন্দর পাহাড়ি এলাকা, যেখানে আপনি ট্রেকিং করতে পারবেন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
১৯. আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ভারতের একটি দ্বীপগ্রুপ, যা তার অত্যাশ্চর্য সমুদ্রসৈকত, প্রাচীন বনভূমি এবং জলজ জীবনযাত্রার জন্য পরিচিত। এটি ভারতের একটি আদর্শ গন্তব্য যেখানে আপনি শান্তি, প্রকৃতি এবং অ্যাডভেঞ্চার একসঙ্গে উপভোগ করতে পারবেন।
আন্দামান ও নিকোবরের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- পোর্ট ব্লেয়ার: এই শহরটি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী এবং এটি তার ঐতিহাসিক স্থান, যেমন সেলুলার জেল এবং রোজ আইল্যান্ডের জন্য বিখ্যাত।
- হ্যাভলক আইল্যান্ড: এটি একটি অত্যন্ত সুন্দর দ্বীপ যেখানে আপনি স্নরকেলিং, ডাইভিং এবং শান্ত সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
- নেইল আইল্যান্ড: এটি একটি নির্জন দ্বীপ, যা তার সাদা বালির সৈকত এবং শ্বেতলবণ সাগরের জন্য জনপ্রিয়।
২০. কাশ্মীর
কাশ্মীর, ভারতের উত্তরে অবস্থিত একটি রাজ্য, যা “পৃথিবীর বেহেশত” হিসেবে পরিচিত। কাশ্মীরের সবুজ উপত্যকা, বরফাবৃত পাহাড় এবং উঁচু জলপ্রপাতগুলি পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়।
কাশ্মীরের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- শ্রীনগর: কাশ্মীরের রাজধানী, যা তার ডাল লেক এবং নৌকা ভ্রমণের জন্য বিখ্যাত।
- গুলমার্গ: এটি কাশ্মীরের একটি জনপ্রিয় হিল স্টেশন, যা শীতকালে স্কিইং এবং অন্যান্য বরফ ক্রীড়ার জন্য একটি আদর্শ স্থান।
- পাহলগাম: একটি শান্ত এবং সুন্দর গ্রাম, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং রোমান্টিক পরিবেশের জন্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়।
- সোনামার্গ: এটি একটি অত্যন্ত সুন্দর স্থান, যেখানে আপনি পাহাড়, নদী এবং গ্রীষ্মকালীন শোভা উপভোগ করতে পারেন।
২১. মেঘালয়
মেঘালয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি রাজ্য, যা “মেঘের বাসস্থান” হিসেবে পরিচিত। মেঘালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঝরনা এবং পাহাড়ি পরিবেশ পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
মেঘালয়ের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- শিলং: এটি মেঘালয়ের রাজধানী এবং এখানকার পাহাড়, হ্রদ এবং শান্ত পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
- চেরাপুঞ্জি: এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ভেজা স্থান এবং এর জলপ্রপাত এবং সবুজ প্রকৃতি দর্শকদের মুগ্ধ করে।
- মাওলিংনং: এটি বিশ্বের পরিচ্ছন্নতম গ্রাম এবং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
২২. তামিলনাড়ু
তামিলনাড়ু দক্ষিণ ভারতের একটি অত্যন্ত ঐতিহাসিক রাজ্য, যা তার প্রাচীন মন্দির, রাজকীয় স্থাপত্য এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে বিভিন্ন প্রাচীন মন্দির এবং ঐতিহাসিক স্থান দেখতে পাবেন।
তামিলনাড়ুর প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- চেন্নাই: তামিলনাড়ুর রাজধানী, যা তার প্রাচীন মন্দির এবং সমুদ্রসৈকতের জন্য বিখ্যাত।
- মদুরাই: একটি ঐতিহাসিক শহর, যা মীনাক্ষী মন্দির এবং প্রাচীন স্থাপত্যের জন্য পরিচিত।
- কুম্বকোনম: এটি একটি ঐতিহাসিক শহর, যেখানে আপনি নানা প্রাচীন মন্দির এবং রাজার প্যালেস দেখতে পারবেন।
২৩. অরুণাচল প্রদেশ
ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত অরুণাচল প্রদেশ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়, বন্যপ্রাণী এবং আদিবাসী সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। অরুণাচল প্রদেশের প্রতিটি স্থান ভ্রমণের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করে।
অরুণাচল প্রদেশের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- তাওয়াং: অরুণাচল প্রদেশের অন্যতম জনপ্রিয় স্থান, যা তার প্রাচীন মঠ এবং মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত।
- জিরি: এটি একটি শান্ত ও সুন্দর স্থান, যা হাইকিং এবং ক্যাম্পিংয়ের জন্য আদর্শ।
- বোমডিলা: পাহাড়ের কোলে অবস্থিত একটি ছোট শহর, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং শান্ত পরিবেশের জন্য পরিচিত।
- ইটানগর: রাজ্যের রাজধানী, যেখানে আপনি ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং আধুনিক জীবনযাত্রার সংমিশ্রণ দেখতে পাবেন।
২৪. হিমাচল প্রদেশ
হিমাচল প্রদেশ ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। এখানকার পাহাড়, ঝরনা, অরণ্য এবং হিমবাহরা ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করে। হিমাচল প্রদেশের বিভিন্ন শহর পর্যটকদের জন্য এক দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা এনে দেয়।
হিমাচল প্রদেশের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- মানালি: জনপ্রিয় হিল স্টেশন, যেখানে আপনি স্কিইং, ট্রেকিং এবং রিভার রাফটিং উপভোগ করতে পারবেন।
- দালহৌসি: এটি এক শান্ত এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত হিল স্টেশন, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য জনপ্রিয়।
- কুলু: কুলু উপত্যকা অত্যন্ত সুন্দর এবং পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত, যা স্নোফল এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত।
- স্পিতি ভ্যালি: এটি একটি অত্যন্ত সুন্দর এবং নির্জন পাহাড়ি এলাকা, যা ট্রেকিং এবং মাউন্টেন বাইকিংয়ের জন্য আদর্শ।
২৫. উত্তরাখণ্ড
উত্তরাখণ্ড ভারতীয় হিমালয়ের অংশ, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধ্যাত্মিক স্থান এবং পর্যটকদের জন্য ট্রেকিং এবং অ্যাডভেঞ্চার একটিভিটিতে পূর্ণ।
উত্তরাখণ্ডের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- নৈনিতাল: একটি প্রাকৃতিক হ্রদ শহর, যা তার মনোরম দৃশ্য এবং শান্ত পরিবেশের জন্য বিখ্যাত।
- কোম্বা: ভারতের অন্যতম বৃহত্তম শিখর, যেখানে আপনি ট্রেকিং এবং স্কিইং উপভোগ করতে পারবেন।
- রিশিকেশ: এটি একটি আধ্যাত্মিক শহর, যা গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এখানে আপনি রাফটিং, যোগব্যায়াম এবং আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারেন।
- কেদারনাথ: একটি প্রাচীন মন্দির এবং তীর্থস্থান, যেখানে হাজার হাজার ভক্ত সারা বছর ভ্রমণ করেন।
২৬. পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গ ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি বৈচিত্র্যময় রাজ্য, যা তার ঐতিহাসিক স্থান, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।
পশ্চিমবঙ্গের প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- কলকাতা: ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী, যেখানে আপনি ঐতিহাসিক স্থান যেমন, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল এবং হাওড়া ব্রিজ দেখতে পাবেন।
- দার্জিলিং: এটি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হিল স্টেশন, যেখানে আপনি মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং চায়না-পিক দেখতে পারবেন।
- সন্তিরা: এটি একটি সুন্দর পাহাড়ি স্থান, যা তার সবুজ প্রকৃতি এবং পাহাড়ি বাতাসের জন্য বিখ্যাত।
- বন্দেল: এটি কলকাতার একটি কাছে অবস্থিত সুন্দর সমুদ্রসৈকত, যেখানে আপনি সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
২৭. তামিলনাড়ু
তামিলনাড়ু ভারতের একটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক রাজ্য, যা তার মন্দির, রাজকীয় স্থাপত্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।
তামিলনাড়ুর প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
- চেন্নাই: তামিলনাড়ুর রাজধানী, এটি ঐতিহাসিক মন্দির, সুন্দর সৈকত এবং সাংস্কৃতিক স্থানের জন্য বিখ্যাত।
- কুম্বকোনম: ঐতিহাসিক শহর, যা তার রাজকীয় স্থাপত্য এবং মন্দিরের জন্য পরিচিত।
- মদুরাই: এটি ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় শহর, যেখানে আপনি মীনাক্ষী মন্দির এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থান দেখতে পাবেন।
- রামেশ্বরম: এটি একটি পবিত্র স্থান, যা ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত।
পরিবহন ব্যবস্থাপনা
ভারতে পর্যটন করতে গিয়ে আপনার পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এখানে বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে যা দেশব্যাপী চলাচলের সুবিধা প্রদান করে। আপনি যদি বাংলাদেশ বা ভারত থেকে ভারতে ভ্রমণ করতে চান, তবে আপনার পছন্দের পরিবহন মাধ্যম বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আমি এখানে ভারতীয় পরিবহন ব্যবস্থার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
১. আকাশপথ (Air Travel)
ভারতের শহরগুলোর মধ্যে আকাশপথে যোগাযোগ খুবই সুবিধাজনক। বড় বড় শহর যেমন দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই, কলকাতা, ব্যাঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, পুনে, কোচি ইত্যাদি থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সরাসরি চলাচল করে। বাংলাদেশের ঢাকা শহর থেকেও ভারতের প্রধান শহরগুলোতে সরাসরি ফ্লাইট পাওয়া যায়।
এয়ারলাইন্স
- ইন্ডিগো: ভারতের সবচেয়ে বড় এবং কম খরচে বিমান পরিবহন প্রতিষ্ঠান। এটি অধিকাংশ অভ্যন্তরীণ এবং কিছু আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
- এয়ার ইন্ডিয়া: ভারতের রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থা। এয়ার ইন্ডিয়া আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উড়ান পরিচালনা করে।
- স্পাইসজেট: এটি একটি বাজেট এয়ারলাইন্স, যা ছোট থেকে মাঝারি রেঞ্জের ফ্লাইট সেবা প্রদান করে।
এয়ারপোর্টগুলো
ভারতে প্রায় সব বড় শহরের একটি প্রধান বিমানবন্দর রয়েছে:
- ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (দিল্লি)
- চিএমআর (চেন্নাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর)
- মুম্বাই চক্রপানি বিমানবন্দর
- কোলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
২. রেলপথ (Rail Travel)
ভারতীয় রেলওয়ে একটি বিশাল ও অত্যন্ত জনপ্রিয় পরিবহন ব্যবস্থা। দেশজুড়ে প্রশস্ত রেল নেটওয়ার্ক রয়েছে, যা সস্তায় এবং দ্রুত দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। অনেক পর্যটক ভারতের বিভিন্ন শহরে ট্রেন ভ্রমণ করে থাকেন।
রেলওয়ে সেবা
- ভারতীয় রেল: ভারতীয় রেলের অধীনে প্রায় ৭,০০০টি স্টেশন রয়েছে এবং এটি বিশ্বের বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্কের একটি। রেলওয়ে সেবা বিভিন্ন ক্যাটাগরির ট্রেন যেমন রাজধানী এক্সপ্রেস, দুরন্ত এক্সপ্রেস, শতাব্দী এক্সপ্রেস, অক্টোবর এক্সপ্রেস ইত্যাদির মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।
ট্রেনের শ্রেণি
- ক্লাস ১ (AC 1st Class): এটি সবচেয়ে বিলাসবহুল শ্রেণী, যেখানে ভ্রমণকারীরা একেবারে আলাদা কামরায় বসে ভ্রমণ করেন।
- ক্লাস ২ (AC 2nd Class): আরামদায়ক এবং শীতল এক্সপ্রেস ট্রেন শ্রেণী।
- ক্লাস ৩ (Sleeper Class): এই শ্রেণী সস্তা এবং সাধারণ যাত্রীদের জন্য, যারা ভারতে কম খরচে যাতায়াত করতে চান।
- সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেন: উচ্চগতিতে চলাচলকারী ট্রেন যা অধিকাংশ বড় শহরগুলোতে সংযোগ করে।
৩. সড়কপথ (Road Travel)
ভারতে সড়কপথে ভ্রমণ এক অত্যন্ত জনপ্রিয় উপায়, বিশেষ করে যারা অফ-বিট জায়গায় যেতে চান তাদের জন্য। সড়কপথে আপনি সাধারণত বাস, ট্যাক্সি বা নিজের গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারেন।
বাস পরিষেবা
ভারতের সড়কপথে বাসগুলো একটি ব্যাপক নেটওয়ার্কে চলাচল করে, যা রাজ্য থেকে রাজ্যে এবং শহর থেকে শহরে যাতায়াতের সুবিধা প্রদান করে।
- রাজ্য বাস পরিষেবা: প্রতিটি রাজ্যেই রাজ্য পরিবহণ সংস্থা রয়েছে যা বাস সেবা প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বাস পরিষেবা “WBSTC” এবং মহারাষ্ট্রের “MSRTC”।
- অনলাইন বাস বুকিং: আপনি অনলাইনে বাসের টিকিট বুক করতে পারেন। কিছু জনপ্রিয় বাস অপারেটর রয়েছে, যেমন “এ.সি. এস. বাস” এবং “কল্পনা ট্রাভেলস”।
ট্যাক্সি ও ক্যাব
ভারতে বিভিন্ন শহরে ট্যাক্সি বা ক্যাব পরিষেবা সহজে পাওয়া যায়। শহরের প্রধান স্থান থেকে আপনি সাধারণত ট্যাক্সি বা ক্যাব ভাড়া করতে পারেন। এছাড়া, উবের এবং ওলা এর মতো অ্যাপ-ভিত্তিক ক্যাব সেবা এখানে খুবই জনপ্রিয়।
৪. জলপথ (Waterways)
ভারতে জলপথেও ভ্রমণ করার সুযোগ রয়েছে, বিশেষত কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। কেরালার ব্যাকওয়াটার্সের বিখ্যাত বোট হাউস তে ভ্রমণ এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা প্রদান করে। মুম্বাই এবং কলকাতা থেকেও সারা ভারতীয় উপকূলে ফেরি সেবা পাওয়া যায়।
বোট হাউস (Kerala)
কেরালার ব্যাকওয়াটারে আপনি একাধিক ভাসমান হোটেল বা বোট হাউস ভাড়া নিতে পারেন, যা একটি ঐতিহ্যবাহী অভিজ্ঞতা।
ফেরি
কলকাতা, মুম্বাই, কোচি, চেন্নাইসহ অন্যান্য শহরে সমুদ্রপথে ভ্রমণ সুবিধা রয়েছে। এতে খুব কম খরচে উপকূলীয় অঞ্চলে পৌঁছানো যায়।
৫. সাইকেল এবং রিকশা
ভারতের শহরগুলোতে সাইকেল এবং রিকশা একটি জনপ্রিয় পরিবহন মাধ্যম। বিশেষ করে পুরানো শহর এলাকায় আপনি সাইকেল রিকশা ভাড়া করে ছোট ছোট রাস্তায় ঘুরতে পারবেন। এটি শহরের সংস্কৃতি এবং পরিবেশ উপভোগ করার এক দারুণ উপায়।
রিকশা
বিশেষত কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি এবং অন্যান্য শহরে রিকশা একটি জনপ্রিয় পরিবহন মাধ্যম। যাত্রীরা সাধারণত সস্তায় রিকশায় ভ্রমণ করতে পারেন।
৬. ব্যক্তিগত গাড়ি (Car Hire)
ভারতে ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করেও ভ্রমণ করা সম্ভব। আপনি চাইলে ড্রাইভারসহ গাড়ি ভাড়া করতে পারেন, বিশেষ করে বড় শহরের বাইরের গন্তব্যে যাওয়ার সময়।
গাড়ি ভাড়া করার প্রক্রিয়া
- ওলা এবং উবের এর মতো অ্যাপ-ভিত্তিক পরিষেবা ছাড়াও আপনি স্থানীয় পর্যটন সংস্থা থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করতে পারেন।
- বড় শহরগুলিতে গাড়ি ভাড়া নিতে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বা কনসিয়ার্জ সেবা থেকে সাহায্য নিতে পারেন।
৭. বিশেষ পরিবহন ব্যবস্থা
ভারতে কিছু বিশেষ পরিবহন ব্যবস্থাও আছে যা ভ্রমণের জন্য এক বিশেষ অভিজ্ঞতা প্রদান করে:
- টয় ট্রেন (ডার্জিলিং): এটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান, যেখানে ছোট ট্রেন যাত্রীদের পাহাড়ি পথে নিয়ে যায়।
- মেট্রো: দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই এবং বেঙ্গালুরুতে মেট্রো সেবা রয়েছে যা শহরের মধ্যে দ্রুত যাতায়াতের সুবিধা প্রদান করে।
স্থানীয় খাবারভারতের স্থানীয় খাবার পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত এবং প্রতিটি রাজ্য ও অঞ্চলে খাদ্য সংস্কৃতি আলাদা ও বৈচিত্র্যময়। যদি আপনি বাংলাদেশ থেকে ভারতে ভ্রমণ করেন, তবে আপনি একটি রুচিপূর্ণ যাত্রা উপভোগ করতে পারবেন, যেখানে প্রতিটি শহর, রাজ্য বা অঞ্চল ভিন্ন স্বাদ ও রান্নার সংস্কৃতি উপস্থাপন করে। আমি এখানে ভারতের কিছু জনপ্রিয় খাবার এবং সেগুলোর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
১. উত্তর ভারতীয় খাবার
উত্তর ভারতীয় খাবারগুলি প্রায়ই রুটি, তরকারী এবং মিষ্টান্নের সমন্বয়ে তৈরি। এখানে খাবারে বিভিন্ন মশলার ব্যবহারের জন্য পরিচিত।
এলাহাবাদী অরতি (Tandoori Roti and Paneer Tikka)
এটি উত্তর ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার, যেখানে তন্দুরে রান্না করা রুটি এবং পনিরের তৈরি নানা ধরনের খাবার খুবই জনপ্রিয়। পনির তিক্কা একটি ভেজিটেরিয়ান ডিশ যা সাধারণত গ্রিল বা তন্দুরে তৈরি করা হয়। এই খাবারে সাধারণত বিভিন্ন মশলা ব্যবহার করা হয়।
পঞ্জাবি খাদ্য
পঞ্জাবিরা খুবই রুচিশীল এবং মিষ্টান্নপ্রিয়। পঞ্জাবি খাবারে জনপ্রিয় কিছু আইটেম হলো:
- মাখানী দাল (Dal Makhani): এটি একটি বিখ্যাত মিষ্টি দাল, যা মাখন ও ক্রিম দিয়ে তৈরি করা হয়।
- বাটুরে এবং চোল্লা (Chole Bhature): এই মসলা দার চোল্লা এবং তেলতেলে বাটুরের সংমিশ্রণ ভারতীয় রাস্তায় অত্যন্ত জনপ্রিয়।
হরি মুঘল খাবার
মুঘল আমলে বিভিন্ন ধরনের মাংসের তরকারি বা কাবাবের প্রচলন হয়েছিল। এর মধ্যে বিরিয়ানি, কাবাব এবং রাহরা গোয়ান (Mughlai cuisine) খুব জনপ্রিয়।
২. দক্ষিণ ভারতীয় খাবার
দক্ষিণ ভারতীয় খাবারগুলো সাধারণত ভাতের উপর ভিত্তি করে এবং এখানে নারকেল ও মশলার ব্যবহার বেশি। এই খাবারগুলি প্রায়ই সুগন্ধি এবং সুস্বাদু হয়।
ডোসা এবং ইডলি
ডোসা দক্ষিণ ভারতের অন্যতম বিখ্যাত খাবার, যা তৈরি হয় চাল ও মুসুরির ডাল দিয়ে। এটি সাধারণত সেদ্ধ করা আলু ও নারকেলের চাটনির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। ইডলি হচ্ছে খাওয়ার আগে তেলে সেঁকা ছোট ছোট পিঠা যা তেঁতুলের সস বা মসলাযুক্ত স্যুপের সাথে খাওয়া হয়।
বিরিয়ানি
তামিলনাড়ু, কেরালা, এবং অন্ধ্রপ্রদেশের বেশ কিছু অঞ্চলে, বিশেষত চেন্নাই বা কোচিতে বিরিয়ানি খুবই জনপ্রিয়। এটির স্বাদ বিশেষত মাংস, মশলা এবং বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি ভাতের সংমিশ্রণে অদ্বিতীয় হয়।
মালাবার মাটন স্ট্যু
এটি কেরালার বিখ্যাত স্ট্যু খাবার, যেখানে মাংস এবং নারকেলের সস দিয়ে তৈরি করা হয়। এর সঙ্গে রুটির একটি বিশেষ মিল রয়েছে, যা অত্যন্ত সুস্বাদু।
৩. পূর্ব ভারতীয় খাবার
পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ওড়িশা এবং মেঘালয়ের খাবারগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
রসগোল্লা এবং সন্দেশ
রসগোল্লা পশ্চিমবঙ্গের এক অত্যন্ত জনপ্রিয় মিষ্টান্ন, যা চিনি ও দুধের তৈরি এক ধরনের মিষ্টি। এর পাশাপাশি, সন্দেশ মিষ্টান্নও পশ্চিমবঙ্গের খুবই জনপ্রিয়। সন্দেশ চিনি, দুধ, সাদা পনিরের তৈরি অত্যন্ত সুস্বাদু একটি খাবার।
মাছের ঝোল (Bengali Fish Curry)
বাংলার খাবারে মাছের ঝোল খুবই জনপ্রিয়। এখানে মিষ্টি পানি মাছ যেমন ইলিশ, রুই, কাতলা ইত্যাদির মধ্যে ঝোল মিষ্টি এবং মশলাযুক্ত হয়, যা সাধারণত ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়।
পিঠা
পিঠা পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন যা চালের আটা এবং গুড় বা নারকেল দিয়ে তৈরি করা হয়।
৪. পশ্চিম ভারতীয় খাবার
গুজরাট, মহারাষ্ট্র এবং রাজস্থানের খাবারগুলি তাদের মিষ্টতা ও ভিন্ন স্বাদের জন্য পরিচিত।
ভুজিয়া এবং দোসা
গুজরাটের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার হলো ভুজিয়া, যা একটি সুস্বাদু স্ন্যাক্স। এছাড়া দোসা রাজস্থানে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
পাও ভাজি (Mumbai)
মুম্বাইয়ের রাস্তায় পাও ভাজি খাওয়া যায়, যা একটি সিজলিং মিশ্রিত সবজি এবং মাখন দিয়ে তৈরি করা হয়, যা জনপ্রিয় স্ন্যাকস হিসেবে বিক্রি হয়।
দাল বাটি চুর্মা (Rajasthani Cuisine)
রাজস্থানের দাল বাটি চুর্মা অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার, যা দাল, বাটি (মিষ্টি রুটি) এবং চুর্মা (গুড়, মাখন ও আটা মিশ্রিত রুটি) এর সংমিশ্রণে তৈরি হয়।
৫. উত্তর–পূর্ব ভারতীয় খাবার
অরুণাচল, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং অসমের খাবারগুলো খুবই মসলাদার এবং বিভিন্ন ধরনের মাছ ও মাংসের সংমিশ্রণে তৈরি হয়।
থুক্পা (Tibetan Cuisine)
এটি স্নিগ্ধ সুপের মতো মাংস এবং নুডলসের একটি খাবার, যা তিব্বতি লোকেরা খেতে পছন্দ করে।
পকোড়া (Manipur)
মণিপুরে মাংস ও শাকসবজি দিয়ে তৈরি পাকোড়া বিশেষ জনপ্রিয়। এটি ভাজা হয়ে খেতে খুব সুস্বাদু।
৬. তামিলনাড়ু ও কেরালার খাবার
দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু এবং কেরালা প্রদেশের খাবার মশলা ও নারকেলের ব্যবহার করে খুবই সুস্বাদু।
বিরিয়ানি (Kerala and Tamil Nadu)
এটি বিশেষত চেন্নাই, কোচি এবং তিরুচিরাপল্লিতে জনপ্রিয়। এর মধ্যে প্রচুর মশলা এবং নির্দিষ্ট ধরনের চাওল ব্যবহার করা হয়।
কাডালাহাম (Kerala)
কেরালার প্রামাণিক খাবার, যা কেরালার ঐতিহ্যবাহী মাছের তরকারি। এটি বিশেষত নারকেল, তেঁতুল, এবং মশলা দিয়ে তৈরি করা হয়।কেনাকাটা ভারতে কেনাকাটা একটি আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা হতে পারে, কারণ এখানে আপনি প্রাচীন ঐতিহ্য থেকে শুরু করে আধুনিক শপিং মল, বাজার এবং হস্তশিল্পের বিপুল ভাণ্ডার পাবেন। দেশটির প্রতিটি রাজ্য এবং শহরে রয়েছে এক একটি বিশেষ ধরনের বাজার, যেখানে আপনি ভিন্ন রকমের পণ্য, কাপড়, গহনা, হস্তশিল্প, এবং অনেক কিছু কিনতে পারবেন। ভারতীয় বাজারগুলির বৈচিত্র্যই একে বিশেষ করে তোলে। এখানে আমি ভারতের জনপ্রিয় কিছু কেনাকাটা কেন্দ্র এবং বাজার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
১. দিল্লির বাজার:
দিল্লি, ভারতের রাজধানী, কেনাকাটার জন্য একটি অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। এখানে বিভিন্ন ধরনের বাজার রয়েছে, যেখানে আপনি হস্তশিল্প, পোশাক, গহনা এবং আরও অনেক কিছু খুঁজে পাবেন।
চাঁদনি চক (Chandni Chowk):
দিল্লির অন্যতম ঐতিহাসিক এবং জনপ্রিয় বাজার হল চাঁদনি চক। এটি একটি পুরোনো বাজার, যেখানে আপনি ভারতের ঐতিহ্যবাহী পোশাক যেমন শাড়ি, কুর্তা, সিল্ক এবং হস্তশিল্পের বিভিন্ন দ্রব্য কিনতে পারবেন। এখানে অনেক ধরনের গহনা, মসলাযুক্ত খাবারও বিক্রি হয়।
কনট প্লেস (Connaught Place):
এটি দিল্লির একটি আধুনিক বাজার, যেখানে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের দোকানগুলির পাশাপাশি অনেকটা পুরনো ভারতীয় দোকানও রয়েছে। আপনি এখানে বিভিন্ন ধরনের কাপড়, গহনা, বই, এবং সস্তা উপহার সামগ্রী পেতে পারেন।
ডিপ্লেক্স মার্কেট (Dilli Haat):
ডিপ্লেক্স মার্কেট ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের হস্তশিল্প সামগ্রী, পোশাক এবং শৌখিন উপহার সামগ্রী কিনতে একটি জনপ্রিয় স্থান। এটি একটি উন্মুক্ত বাজার, যেখানে আপনি সুন্দর এবং বৈচিত্র্যময় আইটেম পেতে পারেন।
২. মুম্বাইয়ের বাজার:
মুম্বাই, ভারতের বাণিজ্যিক কেন্দ্র, এখানেও অসংখ্য শপিং কেন্দ্র রয়েছে যেখানে আপনি আধুনিক এবং ঐতিহ্যবাহী দ্রব্যের একটি ভিন্ন সমাহার পাবেন।
কলাবা কসম্বাস (Colaba Causeway):
কলাবা কসম্বাস মুম্বাইয়ের অন্যতম জনপ্রিয় বাজার। এখানকার দোকানগুলিতে আপনি ভারতীয় এবং বিদেশী ফ্যাশন আইটেম, গহনা, হস্তশিল্প, এবং শৌখিন উপহার সামগ্রী পেতে পারেন।
ভিলা মার্কেট (Bandra Linking Road):
এটি একটি অন্যতম শপিং রাস্তা, যেখানে আপনি তরুণদের জন্য ফ্যাশনেবল পোশাক, জুতা এবং অ্যাকসেসরিজ কিনতে পারবেন। একে অনেক সময় “মুম্বাইয়ের হালকা বাজার” বলা হয়।
লোরেন্স এন্ড ব্যানার্জি (Lawrence and Mayo):
এটি মুম্বাইয়ের একটি জনপ্রিয় গহনা দোকান, যেখানে আপনি ম্যানচেস্টার, গোল্ড এবং ডায়মন্ড গহনা কিনতে পারবেন। এটি দেশটির অন্যতম শ্রেষ্ঠ গহনা বাজারগুলির মধ্যে একটি।
৩. কলকাতার বাজার:
কলকাতা, ভারতের সংস্কৃতির এবং ঐতিহ্যের কেন্দ্র, এখানে বিভিন্ন ধরনের শপিং অঞ্চল রয়েছে যেখানে আপনি কলকাতার ঐতিহ্যবাহী শাড়ি, পুতুল, শিল্পকর্ম এবং আরও অনেক কিছু খুঁজে পাবেন।
New Market (নিউ মার্কেট):
কলকাতার নিউ মার্কেট একটি ঐতিহাসিক শপিং স্পট। এখানে আপনি কসমেটিক্স, পোশাক, ফ্যাশন আইটেম, বই এবং খাবারের আইটেম কিনতে পারবেন। এটি কলকাতার পুরনো শপিং বাজারগুলির মধ্যে একটি এবং এখানকার বিখ্যাত দোকানগুলির মধ্যে রয়েছে কসপ, কৌলির বাজার ইত্যাদি।
বড়ুয়া বাজার (Bada Bazaar):
এটি কলকাতার অন্যতম প্রধান হস্তশিল্প বাজার। এখানকার দোকানগুলিতে আপনি হস্তশিল্প, কাঠের গহনা, কাঁসার পাত্র, পোশাক এবং আনুষঙ্গিক পণ্য পাবেন।
৪. রাজস্থানের বাজার:
রাজস্থান ভারতীয় সংস্কৃতির এক বড় অংশ এবং এখানে আপনি ঐতিহ্যবাহী কাপড়, কাঁচামাল, হস্তশিল্প এবং পোশাকের বিপুল ভাণ্ডার পাবেন।
জয়পুর (Jaipur) – সোয়ারী পাল্লি (Sawai Palani):
জয়পুর শহরের সোয়ারী পাল্লি একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। এখানকার দোকানগুলি প্রতিটি রাজস্থানি পণ্যের সমাহার দেয়, যেমন ব্লক প্রিন্ট শাড়ি, হস্তশিল্প সামগ্রী, হালকা সিল্ক এবং বেশিরভাগ হস্তশিল্প সামগ্রী।
উম্মেদ ভবন (Umaid Bhawan Market) – যোধপুর:
এটি যোধপুরের সবচেয়ে সুন্দর বাজারগুলির মধ্যে একটি। এখানে আপনি রাজস্থানির শিল্পকর্ম, কাঠের আইটেম, কাঁসার পাত্র, অদ্বিতীয় পোশাক এবং বস্ত্র পাবেন।
সন্তোলী বাজার (Santoor Bazaar) – উদয়পুর:
এই বাজারে আপনি রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী গহনা, রংবেরঙের কাপড় এবং বিভিন্ন ধরনের হাত তৈরি উপহার সামগ্রী পাবেন।
৫. দক্ষিণ ভারতের বাজার:
দক্ষিণ ভারতের বাজারগুলিতে আপনি ভারতীয় হস্তশিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী উপহার সামগ্রী পাবেন। তামিলনাড়ু, কেরালা, এবং কন্নাটকা প্রদেশের বাজারগুলো বিশেষভাবে বিখ্যাত।
চেন্নাই – প্যারকুম্বক বাজার (Parakumbar Market):
চেন্নাইয়ের প্যারকুম্বক বাজার খ্যাত কেরালার শিল্পকর্ম, মাধুরী, কাঠের গহনা এবং দক্ষিণ ভারতীয় কাপড়ের জন্য।
থিরুভানন্তপুরম (Thiruvananthapuram) – মন্নার্মালা বাজার:
কেরালার অন্যতম বিখ্যাত বাজার, এখানে আপনি কেরালার ঐতিহ্যবাহী কাঠের পুতুল, মাটির পাত্র এবং নারকেল ব্যবহারকারী শিল্প দেখতে পাবেন।
৬. উত্তর–পূর্ব ভারতের বাজার:
অরুণাচল, মণিপুর, অসম, ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ড এই অঞ্চলের বাজারগুলিতে আপনি স্থানীয় হস্তশিল্প এবং মুদ্রার পোশাক পাবেন।
গুয়াহাটির হাট (Guwahati Market):
এটি অসমের একটি পরিচিত বাজার, যেখানে আপনি চা, ঐতিহ্যবাহী রেশম কাপড়, হস্তশিল্প এবং একাধিক বাচ্চাদের খেলনা পাবেন।
ইম্ফল বাজার (Imphal Market) – মণিপুর:
মণিপুরের ইম্ফল বাজারের মধ্যে রয়েছে লোভনীয় স্থানীয় হস্তশিল্প, ভেষজ, কাঠের দ্রব্য এবং ফ্যাশনেবল আইটেম।
ভাষা, সংস্কৃতি ও রীতি-নীতিভারত একটি বিশাল এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ, যেখানে হাজার হাজার বছর ধরে বিভিন্ন জাতি, ভাষা, ধর্ম এবং সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটেছে। বাংলাদেশ থেকে ভারত বা ভারতের বিভিন্ন স্থানগুলিতে ভ্রমণ করার সময় ভাষা, সংস্কৃতি এবং রীতি-নীতি সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমি ভারতীয় ভাষা, সংস্কৃতি এবং রীতি-নীতির কিছু দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
১. ভাষা:
ভারত একাধিক ভাষায় সমৃদ্ধ একটি দেশ। দেশটির সংবিধানে ২২টি ভাষাকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং এটি ১,600-এরও বেশি আঞ্চলিক ভাষা ও উপভাষার অধিকারী। কিন্তু আপনি বাংলাদেশ থেকে ভারত ভ্রমণ করলে, প্রধানত যে ভাষাগুলির সাথে পরিচিত হওয়া উচিত তা হলো:
হিন্দি:
হিন্দি ভারতের অন্যতম প্রধান ভাষা। বিশেষ করে উত্তর ভারত, উত্তর-পশ্চিম এবং মধ্যভারতে হিন্দি প্রচলিত। দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, হরিয়ানা, এবং মধ্য প্রদেশের মতো রাজ্যে আপনি হিন্দি ব্যবহার করতে পারবেন। এটি ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত এবং অধিকাংশ শহর ও গ্রামেও কথা বলা হয়।
বাংলা:
বাংলা বাংলাদেশের সরকারি ভাষা এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একেবারে প্রধান ভাষা। কলকাতা, শিলিগুড়ি এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য শহরগুলিতে বাংলা অত্যন্ত প্রচলিত। যেহেতু আপনি বাংলাদেশের নাগরিক, তাই আপনি কলকাতা, ডায়মন্ড হারবার, খড়গপুর ইত্যাদি শহরে স্বাচ্ছন্দ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারবেন।
তামিল:
দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে তামিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা। চেন্নাই, কোয়েম্বাটোর, মাদুরাইসহ অন্যান্য শহরে আপনি তামিল ভাষায় যোগাযোগ করতে পারবেন। তামিল ভাষার একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে, এবং এর সাহিত্য, সংগীত ও চলচ্চিত্রও বিশ্বব্যাপী পরিচিত।
পঞ্জাবি:
পঞ্জাবি ভাষা ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আমৃতসর, চণ্ডীগড়, এবং পাঞ্জাবের অন্যান্য অঞ্চলে পঞ্জাবি ব্যবহৃত হয়। এটি একটি শাক্তিশালী সংস্কৃতির ভাষা, বিশেষত শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে।
মালয়ালম:
কেরালার মূল ভাষা মালয়ালম। কেরালায়, বিশেষ করে তিরুভানন্তপুরম, কোঝিকোড, কোট্টায়াম শহরে আপনি মালয়ালম ভাষায় কথা বলতে পারবেন।
গুজরাটি:
গুজরাত রাজ্যের মূল ভাষা গুজরাটি। সুরাত, আহমেদাবাদ এবং ভদ্রেশ্বরের মতো জায়গায় গুজরাটি ভাষায় প্রচুর মানুষ কথা বলে।
এছাড়াও, মারাঠি, উড়িয়া, হরিয়ানভি, কন্নড়, তেলুগু, Assamese, ওড়িয়া, আর অনেক ভাষা রয়েছে যা ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। তবে, বড় শহরগুলোতে ইংরেজিও প্রচলিত, বিশেষ করে টুরিস্ট গন্তব্যে, তাই ইংরেজিতে যোগাযোগ করা সম্ভব।
২. সংস্কৃতি:
ভারতীয় সংস্কৃতি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি। এখানে একাধিক ধর্ম, নৃত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, সাহিত্য এবং কৃষ্টির মিশ্রণ রয়েছে। ভারতের সংস্কৃতি ধ্রুপদী ও আধুনিক সংস্কৃতির একটি অনন্য সমাহার। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করা হলো:
ধর্ম:
ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হলেও এখানকার জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস গভীর। হিন্দু ধর্ম, ইসলাম, খ্রিষ্টান, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, এবং সিখ ধর্মের অনুগামীদের একটি বৈচিত্র্যময় সম্প্রদায়ের উপস্থিতি রয়েছে। ভারতের ধর্মীয় উৎসব যেমন দীপাবলি, ঈদ, দুর্গাপূজা, হোলি, ক্রিসমাস ইত্যাদি আনন্দের সাথে পালিত হয় এবং প্রতিটি ধর্মের নিজস্ব রীতিনীতি রয়েছে।
নৃত্য এবং সংগীত:
ভারতের নৃত্য এবং সংগীত অত্যন্ত ঐতিহ্যবাহী এবং বৈচিত্র্যময়। কিছু ঐতিহ্যবাহী নৃত্যশৈলী যেমন-কথাকলি, মণিপুরি, kathak, bharatanatyam, কুচিপুড়ি, ওড়িয়া নৃত্য ইত্যাদি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত। সংগীতের ক্ষেত্রেও ক্লাসিক্যাল মিউজিক যেমন হিন্দুস্তানি, কর্ণাটিক মিউজিক এবং লোক সংগীতও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাহিত্য:
ভারতে অনেক পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেমন নালন্দা, তক্ষশীলা, কাশী বিদ্যাপীঠ, এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ভারতের পুরনো সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ভারতীয় সাহিত্যের একটি বিশাল ঐতিহ্য রয়েছে, যেখানে রামায়ণ, মহাভারত, বেদ, উপনিষদ ইত্যাদি শাস্ত্রীয় গ্রন্থ রয়েছে। বর্তমানে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চিত্রশিল্পী সলভাদোর দালি, লেখক আর. কে. নারায়ন, আয়েশা ইমাম এবং অন্য অনেক নামকরা সাহিত্যিকদের বিশিষ্ট কাজের জন্য ভারত সম্মানিত।
৩. রীতি–নীতি এবং সামাজিক অভ্যাস:
ভারতের সমাজে বিভিন্ন রীতি-নীতি এবং সামাজিক শিষ্টাচার বিদ্যমান। বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেলে কিছু বিশেষ সামাজিক আচরণ এবং রীতি-নীতি মান্য করা উচিত:
স্বাগত ও সৌজন্যতা:
ভারতে কাউকে সম্মান প্রদর্শন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, যখন আপনি কারো সঙ্গে কথা বলেন, আপনি “নমস্তে” বা “নমস্কার” বলতে পারেন। মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সময় একটি নম্র এবং শালীন আচরণ রাখতে হবে।
খাবার খাওয়া:
ভারতে খাবারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু রীতি রয়েছে। অনেক জায়গায় আপনার ডান হাত দিয়ে খাবার খাওয়ার প্রথা রয়েছে, কারণ বাঁ হাতকে অপবিত্র বলে গণ্য করা হয়। আপনি যদি একটি ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করেন তবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পোষাক:
ভারতীয় সমাজে পোশাকের রীতি সংস্কৃতির উপর নির্ভর করে। দক্ষিণ ভারতে সাধারণত সালোয়ার কামিজ এবং শাড়ি পরা হয়, তবে উত্তর ভারতে পাঞ্জাবি এবং কুর্তা পরার প্রথা প্রচলিত। ভারতের বেশিরভাগ এলাকায় সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে শালীন পোশাক পরিধান করা উচিত।
ধর্মীয় স্থানসমূহে:
ধর্মীয় স্থানসমূহে প্রবেশ করার আগে আপনাকে অনেকসময় জুতা খুলে রাখতে হবে এবং মাথা গোঁজানো নিষেধ হতে পারে। বিশেষ করে মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার ইত্যাদি স্থানে এটি শিষ্টাচারের অংশ।
অতিথিপরায়ণতা:
ভারতীয় সংস্কৃতিতে অতিথিকে দেবতার মতো সম্মান দেওয়া হয়। আপনি যখন স্থানীয়দের বাড়িতে যাবেন, তারা আপনাকে সর্বোচ্চ সম্মান জানাবে এবং সাধ্যমতো অতিথিপরায়ণতা দেখাবে। আপনি তাদের আতিথেয়তার প্রতি সম্মান জানানোর জন্য একটি ছোট উপহার দিতে পারেন।
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতাভারত ভ্রমণ করার সময় কিছু বিশেষ টিপস এবং সতর্কতা অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত একটি বৈচিত্র্যময় দেশ, যেখানে প্রতিটি রাজ্য এবং অঞ্চল আলাদা রীতি-নীতি, পরিবেশ, সংস্কৃতি এবং আচরণগত পার্থক্য রয়েছে। তাই আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে সুরক্ষিত এবং সুখকর করতে, আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ টিপস এবং সতর্কতা তুলে ধরব।
১. নিরাপত্তা এবং সতর্কতা
ভারত একটি নিরাপদ ভ্রমণ গন্তব্য, তবে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত:
ব্যাগ এবং মূল্যবান জিনিস নিরাপদে রাখা:
- যেখানেই যান, আপনার ব্যাগ এবং মূল্যবান জিনিস যেমন মোবাইল, ক্যামেরা, ট্যাবলেট, অর্থ, পাসপোর্ট এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ নথি নিরাপদ স্থানে রাখুন।
- পাবলিক প্লেসে ভিড় বা বাজারের এলাকায় যেতে হলে সবসময় ব্যাগ সোজা ধরে রাখুন, যাতে কেউ তা চুরি করতে না পারে।
রাতের বেলা একা চলাফেরা পরিহার করুন:
- রাতের বেলা একা চলাফেরা করার সময় সতর্ক থাকুন। কিছু শহরে রাত্রি বেলা জনসমাগম কম থাকে এবং অপরাধের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। তাই রাতে একা বেরোনোর ক্ষেত্রে সঙ্গী রাখা ভালো।
আলাদা জায়গার দিকে যাত্রা করার আগে স্থানীয় পুলিশ বা হোটেলের সাথে যোগাযোগ করুন:
- আপনি যখন নতুন স্থানে পৌঁছান, তখন স্থানীয় পুলিশ বা হোটেল স্টাফের সাথে যোগাযোগ করে সেখানে কোথায় যেতে হবে বা কোথায় না যেতে হবে তা জানতে পারেন।
স্বাস্থ্য সতর্কতা:
- ভারতের কিছু অঞ্চল মশা দ্বারা সৃষ্ট রোগ যেমন ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হতে পারে। তাই মশারি এবং মশার প্রতিকারক ক্রিম ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
- খাবার পানের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন, বিশেষ করে রাস্তায় বা পথের পাশে খাবার খাওয়ার সময়। বিশুদ্ধ পানি পান করার চেষ্টা করুন এবং খাবার সঠিকভাবে রান্না করা হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন।
২. পরিবহন ব্যবস্থা এবং চলাচল
ভারতে ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে, তবে কিছু নিরাপত্তার দিক ও সতর্কতা মনে রাখা জরুরি:
ট্রেন এবং বাসে ভ্রমণ:
- ভারতীয় রেলওয়ের ট্রেনগুলি বিশাল এবং বিভিন্ন শ্রেণির রয়েছে। ট্রেনের টিকিট কাটার সময় সর্বদা যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে টিকিট নিন এবং যে কোনো অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি এড়াতে নিজের আসনটি নিরাপদ রাখুন।
- বাসে ভ্রমণ করার সময় সিট ব্যাগে থাকা মূল্যবান জিনিসগুলো চেক করুন, যেন সেগুলি নিরাপদ থাকে।
অটো রিকশা এবং ট্যাক্সি:
- ট্যাক্সি বা অটো রিকশা নেওয়ার আগে ভাড়া নির্ধারণ করে নেওয়া উচিত। কোথাও ভাড়া না জানালে বা অপরিচিত পরিবহনে উঠলে সতর্ক থাকুন।
- যদি আপনি জনপ্রিয় শহরে ভ্রমণ করেন, যেমন দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, চেন্নাই ইত্যাদি, তাহলে ওলা বা উবারের মতো রাইড-শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন, যা নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য।
রাস্তায় চলাচল:
- ভারতের রাস্তায় যানজট এবং দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকতে পারে, তাই অনেক সময় পিপঁড়ের মতো ঘোরাঘুরি হতে পারে। সুতরাং, ভ্রমণের জন্য অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ রাখুন।
- যদি আপনি নিজে গাড়ি চালাতে চান, তাহলে ভারতীয় ট্রাফিক আইন এবং নিয়মাবলী সম্পর্কে ধারণা নিতে ভুলবেন না। ভারতের কিছু জায়গায় গাড়ি চালানোর সময় রাস্তায় বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা দেখা যেতে পারে, তাই সতর্ক থাকুন।
৩. সংস্কৃতি ও সামাজিক শিষ্টাচার
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি রয়েছে, এবং সেগুলির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো গুরুত্বপূর্ণ:
ধর্মীয় স্থানে প্রবেশের আগে প্রস্তুতি নিন:
- ভারতে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থান রয়েছে, এবং প্রত্যেকটি স্থানে কিছু রীতি-নীতি মেনে চলা আবশ্যক। মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার বা গির্জায় প্রবেশের আগে সঠিক পোশাক পরা এবং পবিত্র স্থানে শান্তিপূর্ণ আচরণ করা উচিত।
- অনেক মন্দিরে জুতা খুলে রাখতে হয় এবং কিছু মন্দিরে মাথা ঢাকা রাখতে হয়। তাই, ধর্মীয় স্থানে প্রবেশ করার আগে এসব বিষয় জানা দরকার।
পোশাক:
- ভারতে পোশাকের ধরন এবং স্টাইল অঞ্চলের উপর নির্ভর করে। উত্তর ভারতে সাধারণত সালোয়ার-কামিজ বা শাড়ি পরা হয়ে থাকে, দক্ষিণ ভারতে তামিল নারীরা শাড়ি পরেন। তবে ভারতীয় পোশাক সম্পর্কে ধারণা থাকলে, আপনি ভ্রমণকারী হিসাবে সহজেই একত্রিত হতে পারবেন।
- পশ্চিম এবং পূর্ব ভারতের বড় শহরগুলিতে আধুনিক পোশাক পরা জনপ্রিয়, তবে ধর্মীয় বা ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোতে শালীন পোশাক পরা উচিত।
৪. ভ্রমণ ফান্ড এবং স্থানীয় মুদ্রা
ভারতে বাংলাদেশ বা ভারতের মধ্যে চলাচলকারী পর্যটকরা যেহেতু বেশিরভাগ সময় INR (ভারতীয় রুপি) ব্যবহার করেন, তাই স্থানীয় মুদ্রা সম্পর্কে কিছু নির্দেশনা দেওয়ার প্রয়োজন:
প্রথমে মুদ্রা পরিবর্তন করা:
- বাংলাদেশ থেকে ভারতে পৌঁছালে আপনাকে কিছু পরিমাণ রুপি বা ডলার নিয়ে যেতে হবে। ব্যাংক, মানি এক্সচেঞ্জ, অথবা বিমানবন্দরের কিওস্কে মুদ্রা পরিবর্তন করা যেতে পারে।
- আপনি যদি কলকাতা বা ভারতের অন্য কোনো শহরে পৌঁছান, সেখানে সহজে অর্থ পরিবর্তন করতে পারবেন।
ব্যাংক এবং এটিএম:
- ভারতের প্রায় সব শহরেই ব্যাঙ্ক এবং এটিএম রয়েছে। আপনি যে শহরেই যান, সেখানকার ব্যাংক থেকে সহজেই নগদ টাকা তুলতে পারেন। তবে ছোট শহর বা গ্রামাঞ্চলে নগদ টাকা রাখা নিরাপদ।
৫. স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা সতর্কতা
ভারতে যাত্রা করার আগে কিছু স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সতর্ক থাকা জরুরি:
টিকাদান:
- ভারতীয় সফরের আগে, বিশেষ করে কলকাতা, দিল্লি, বা মুম্বাইয়ের মতো বড় শহরগুলিতে যাওয়া হলে কিছু টিকাকরণ যেমন টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, ডিপথেরিয়া, টেটানাস, মালেরিয়া ইত্যাদি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
খাবারের সতর্কতা:
- রাস্তার খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। রাস্তায় খাবারের দোকান বা যেসব জায়গায় পরিচিতি কম, সেখানে খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত হতে নাও পারে। তাজা পানি পান করার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
৬. স্থানীয় সামাজিক রীতি–নীতি এবং ভদ্রতা
ভারতের জনগণ অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ এবং সদয়, তবে কিছু সামাজিক রীতি-নীতি মেনে চলা আবশ্যক:
আতিথেয়তা:
- ভারতে আপনি যে স্থানেই যান না কেন, স্থানীয় মানুষ আপনাকে আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করবে। যদি তারা আপনাকে অতিথি হিসেবে তাঁদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানায়, তবে এতে সম্মান জানানো উচিত।
সহনশীলতা এবং সম্মান:
- ভারতে, বিশেষত মুসলিম অঞ্চলে, অত্যন্ত সহনশীলতা এবং পরস্পরের প্রতি সম্মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত মতামত এবং ধর্মীয় বিশ্বাসে অযথা হস্তক্ষেপ না করা ভাল।
ভারত ভ্রমণ করার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা আপনার ভ্রমণকে আরো নিরাপদ এবং সুখকর করতে সহায়ক হবে। দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের পাশাপাশি, আপনার নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং স্থানীয় রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে আপনি ভারতের অভিজ্ঞতা আরও সুন্দর করতে পারবেন।