gout baking soda

গেঁঠুর (Gout) চিকিৎসায় বেকিং সোডার ঘরোয়া ব্যবহার

গেঁঠু বা গাউট (Gout) হলো একটি প্রদাহজনিত আর্থ্রাইটিস যা সাধারণত পায়ের আঙুলের সন্ধিতে ব্যথা, ফোলাভাব এবং লালচেভাব সৃষ্টি করে। এটি রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে এবং তা স্ফটিকের আকারে সন্ধিতে জমা হলে হয়। গেঁঠুর জন্য ঘরোয়া উপাদান হিসেবে বেকিং সোডা অনেক সময় ব্যবহার করা হয়। বেকিং সোডার অ্যালকালাইন প্রভাব রক্তে ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং গেঁঠুর লক্ষণ উপশমে সহায়ক হতে পারে।

গেঁঠুর লক্ষণ কারণ

. গেঁঠুর সাধারণ লক্ষণ

  • তীব্র সন্ধি ব্যথা, বিশেষত পায়ের বড় আঙুলে।
  • ফোলাভাব এবং লালচে ভাব।
  • সন্ধি চলাচলে সীমাবদ্ধতা।
  • সন্ধিতে উষ্ণতার অনুভূতি।

. গেঁঠুর কারণ

  • রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি।
  • ইউরিক অ্যাসিড স্ফটিকের আকারে সন্ধিতে জমা হওয়া।
  • খাদ্যাভ্যাস, যেমন বেশি প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া।
  • অ্যালকোহল সেবন।
  • ওবেসিটি বা স্থূলতা।
  • কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস।

গেঁঠু সমস্যায় বেকিং সোডার ভূমিকা

বেকিং সোডা কীভাবে কাজ করে?

বেকিং সোডা একটি প্রাকৃতিক অ্যালকালাইন পদার্থ। এটি রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা হ্রাস করতে এবং শরীরের অ্যাসিড-অ্যালকালি ভারসাম্য ঠিক রাখতে সহায়ক। যখন বেকিং সোডা গ্রহণ করা হয়, এটি ইউরিক অ্যাসিডকে দ্রবীভূত করে এবং মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে নির্গত হতে সাহায্য করে। এভাবে এটি গেঁঠু সমস্যার লক্ষণগুলো কমাতে কার্যকর হতে পারে।

বেকিং সোডার ব্যবহার: ধাপে ধাপে নির্দেশিকা

. বেকিং সোডা পানীয় তৈরি

বেকিং সোডা গেঁঠুর জন্য প্রায়শই পানীয় আকারে গ্রহণ করা হয়। সঠিক পদ্ধতিতে এটি তৈরি এবং গ্রহণ করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।

প্রয়োজনীয় উপাদান:

  • ১/২ চা চামচ বেকিং সোডা।
  • ১ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি।

প্রস্তুত প্রণালী:

  1. একটি গ্লাস ঠাণ্ডা বা কুসুম গরম পানিতে ১/২ চা চামচ বেকিং সোডা মেশান।
  2. বেকিং সোডা সম্পূর্ণ দ্রবীভূত হওয়া পর্যন্ত নাড়ুন।
  3. দিনে দুই থেকে তিনবার এটি পান করুন, বিশেষত খাবারের আগে বা পরে।

. বেকিং সোডা এবং লেবুর রস

লেবুর রস বেকিং সোডার কার্যকারিতা বাড়াতে পারে কারণ এতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ইউরিক অ্যাসিড দ্রবীভূত করতে সাহায্য করে।

প্রয়োজনীয় উপাদান:

  • ১ চা চামচ লেবুর রস।
  • ১/২ চা চামচ বেকিং সোডা।
  • ১ গ্লাস পানি।

প্রস্তুত প্রণালী:

  1. একটি গ্লাস পানিতে লেবুর রস ও বেকিং সোডা মেশান।
  2. ভালোভাবে নাড়ুন এবং পান করুন।
  3. দিনে একবার এটি পান করুন।

. বেকিং সোডার সেঁক

গেঁঠুর ব্যথা বা ফোলাভাবের জন্য বেকিং সোডা সেঁক ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রয়োজনীয় উপাদান:

  • ২ টেবিল চামচ বেকিং সোডা।
  • একটি বড় বাটি গরম পানি।

প্রস্তুত প্রণালী:

  1. বেকিং সোডা গরম পানিতে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
  2. এটি একটি কাপড়ে লাগিয়ে গেঁঠুর স্থানে প্রয়োগ করুন।
  3. ১৫-২০ মিনিট ধরে সেঁক দিন।

গেঁঠুর জন্য বেকিং সোডা ব্যবহারে সতর্কতা

. অতিরিক্ত গ্রহণের ঝুঁকি

বেকিং সোডা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে শরীরের সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা উচ্চ রক্তচাপ, মাথা ঘোরা, বা হৃৎপিণ্ডের সমস্যার কারণ হতে পারে।

. দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার

দীর্ঘ সময় ধরে বেকিং সোডা গ্রহণ করলে কিডনির কার্যকারিতায় সমস্যা হতে পারে। তাই এটি স্বল্পমেয়াদে এবং সীমিত মাত্রায় ব্যবহার করুন।

. গর্ভবতী শিশুদের জন্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা

গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের জন্য বেকিং সোডা ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এটি তাঁদের শরীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

. ডাক্তারের পরামর্শ

যদি আপনি ওষুধ গ্রহণ করছেন বা অন্য কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তবে বেকিং সোডা গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

বেকিং সোডার বিকল্প ঘরোয়া উপায়

গেঁঠুর সমস্যা নিয়ন্ত্রণে বেকিং সোডা ছাড়াও কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায় রয়েছে।

. জলখাবারে চেরি যোগ করুন

চেরি বা চেরির রস রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে এবং গেঁঠুর প্রদাহ কমায়।

. আদা চা পান করুন

আদায় প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা গেঁঠুর ব্যথা উপশমে সহায়ক।

. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

শরীর হাইড্রেটেড থাকলে ইউরিক অ্যাসিড সহজেই মূত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়।

. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

ওজন কমানো গেঁঠুর উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, কারণ অতিরিক্ত ওজন রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বাড়াতে পারে।

. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন

প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন লাল মাংস, শেলফিশ এবং প্রসেসড খাবার কম খাওয়া উচিত। এর বদলে শাকসবজি ও ফলমূল বেশি গ্রহণ করুন।

গেঁঠু প্রতিরোধে টিপস

. খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন

  • উচ্চ-পুরিনযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • শাকসবজি, বাদাম, এবং হোলগ্রেইন খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করুন।

. অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন

অ্যালকোহল, বিশেষত বিয়ার, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে।

. নিয়মিত ব্যায়াম

নিয়মিত ব্যায়াম গেঁঠুর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

. পর্যাপ্ত ঘুম

ঘুমের অভাব শরীরের প্রদাহজনিত অবস্থাকে বাড়িয়ে দিতে পারে।

বেকিং সোডা গেঁঠুর সমস্যা সাময়িকভাবে উপশম করতে পারে। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয় এবং এর ব্যবহার সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। বেকিং সোডার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং সঠিক জীবনযাত্রা মেনে চলা গেঁঠু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

error: Content is protected !!
Scroll to Top