Breaking News
uti while breastfeeding

স্তন্যদানকালীন সময়ে প্রস্রাবে সংক্রমণের (UTI) ঘরোয়া চিকিৎসা

স্তন্যদানকালীন সময় মা এবং শিশুর জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় শরীরে অনেক ধরনের পরিবর্তন ঘটে, যা প্রস্রাবে সংক্রমণ বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (Urinary Tract Infections) হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। UTI হলে প্রস্রাবে ব্যথা, জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজনীয়তা, এবং অনেক সময় শরীরের অন্যান্য অস্বস্তি দেখা দেয়।

অনেক নতুন মা ওষুধ গ্রহণের পরিবর্তে ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে চান, কারণ এটি স্তন্যদানের সময় শিশুর ওপর ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে সাহায্য করে। এই নিবন্ধে UTI-এর জন্য বিভিন্ন কার্যকর এবং নিরাপদ ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করেছি।

দ্রষ্টব্য: এই নিবন্ধ শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে। কোনও গুরুতর সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

প্রস্রাবে সংক্রমণ (UTI) কী?

প্রস্রাবে সংক্রমণ হলো একটি সাধারণ সমস্যা যা সাধারণত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হয়। এটি মূত্রনালীর যে কোনও অংশে হতে পারে:

  1. মূত্রনালী (Urethra)
  2. মূত্রথলি (Bladder)
  3. মূত্রনালীর উপরের অংশ (Kidneys)

UTI-এর সাধারণ লক্ষণ

  • প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া
  • প্রস্রাবের সময় ব্যথা
  • ঘন ঘন প্রস্রাবের অনুভূতি
  • প্রস্রাবের দুর্গন্ধ
  • পিঠ বা তলপেটে ব্যথা
  • ক্লান্তি এবং শরীর দুর্বল লাগা

স্তন্যদানকালীন সময় UTI-এর কারণ

স্তন্যদানকালীন সময়ে শরীরের হরমোন পরিবর্তন এবং প্রতিরোধ ক্ষমতার হ্রাস UTI-এর ঝুঁকি বাড়ায়। সাধারণ কারণগুলো হলো:

  1. প্রস্রাব ধরে রাখা।
  2. পানি কম পান করা।
  3. প্রস্রাবের সময় মূত্রথলি পুরোপুরি খালি না হওয়া।
  4. ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব।
  5. শিশুর জন্মের পর পেলভিক মাংসপেশির দুর্বলতা।

UTI-এর জন্য ঘরোয়া চিকিৎসা

স্তন্যদানকালীন সময়ে UTI-এর জন্য প্রাকৃতিক এবং নিরাপদ ঘরোয়া চিকিৎসা প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে, এটি লক্ষণীয় যে ঘরোয়া চিকিৎসা শুধুমাত্র হালকা সমস্যা সমাধানে কার্যকর। গুরুতর সমস্যায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

১. পানি পান বৃদ্ধি করুন

যথেষ্ট পানি পান করা UTI থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি সহজ এবং কার্যকর উপায়। পর্যাপ্ত পানি পান করলে মূত্রনালী পরিষ্কার হয় এবং ব্যাকটেরিয়াগুলি ধুয়ে বের হয়ে যায়।

কিভাবে করবেন?

  • প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
  • প্রস্রাব স্বচ্ছ এবং হালকা হলুদ হলে বুঝবেন আপনি যথেষ্ট পানি পান করছেন।

২. ক্র্যানবেরি রস (Cranberry Juice)

ক্র্যানবেরি রস UTI প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। এটি প্রস্রাবে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • প্রতিদিন এক গ্লাস চিনি-মুক্ত ক্র্যানবেরি রস পান করুন।
  • অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে পেটের সমস্যা হতে পারে।

৩. নারকেলের পানি

নারকেলের পানি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল পানীয়, যা মূত্রনালীর সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।

কিভাবে করবেন?

  • প্রতিদিন ১-২ গ্লাস তাজা নারকেলের পানি পান করুন।
  • এটি শরীরকে হাইড্রেট রাখতেও সাহায্য করে।

৪. আদা এবং হলুদ চা

আদা এবং হলুদ উভয়ই অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান সমৃদ্ধ। এটি প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমাতে সহায়ক।

কিভাবে তৈরি করবেন?

  • এক কাপ গরম পানিতে এক টুকরো আদা ও এক চা চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে নিন।
  • ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন এবং ছেঁকে পান করুন।
  • প্রতিদিন ১-২ বার এটি পান করুন।

৫. দই (Yogurt)

দইতে উপস্থিত প্রোবায়োটিক উপাদান UTI-এর জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া দমন করতে সাহায্য করে এবং মূত্রনালীতে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়।

কিভাবে খাবেন?

  • প্রতিদিন এক কাপ তাজা, চিনি-মুক্ত দই খান।
  • মিষ্টি দই খাওয়া এড়িয়ে চলুন।

৬. বেকিং সোডা

বেকিং সোডা প্রস্রাবের অম্লতা কমিয়ে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • এক গ্লাস পানিতে আধা চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন।
  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন।

৭. লেবু পানি (Lemon Water)

লেবুতে রয়েছে ভিটামিন C, যা মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • এক গ্লাস গরম পানিতে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন।
  • সকালে খালি পেটে পান করুন।

৮. পেঁয়াজের রস

পেঁয়াজ একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এটি UTI-এর লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • এক গ্লাস পানিতে কিছু পেঁয়াজ সিদ্ধ করে সেই পানি ঠাণ্ডা হলে পান করুন।
  • দিনে দুইবার এটি পান করুন।

৯. চাষের ডাবের শাঁস

ডাবের শাঁস শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ কমাতে সহায়ক।

কিভাবে খাবেন?

  • দিনে ১-২ বার ডাবের শাঁস খান।

UTI প্রতিরোধে কিছু সাধারণ পরামর্শ

  1. ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
  2. প্রস্রাব চেপে রাখবেন না।
  3. যৌনমিলনের পর প্রস্রাব করুন।
  4. টাইট পোশাক পরা এড়িয়ে চলুন।
  5. প্রতিদিন অন্তর্বাস পরিবর্তন করুন।

স্তন্যদান এবং ওষুধ

স্তন্যদানকালীন সময় UTI-এর জন্য ওষুধ গ্রহণ করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু ওষুধ স্তন্যদানের সময় নিরাপদ হলেও, কিছু ওষুধ শিশুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

স্তন্যদানকালীন সময় UTI একটি সাধারণ সমস্যা, তবে কিছু কার্যকর ঘরোয়া চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অনুসরণ করে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই নিবন্ধে উল্লিখিত প্রতিটি উপায় নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক। তবে, দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা বা জটিল লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

Check Also

vestibular disorders

ভেস্টিবুলার ডিসঅর্ডার (Vestibular Disorders) নিয়ন্ত্রণে সহজ এবং কার্যকর ঘরোয়া সমাধান

ভেস্টিবুলার ডিসঅর্ডার (Vestibular Disorders) হল শরীরের ভেস্টিবুলার সিস্টেমের কার্যকারিতা বা ভারসাম্যে সমস্যা। এটি প্রায়ই মাথা …

cracking knees

হাঁটুর শব্দ বা ক্র্যাকিং (Cracking Knees) কমানোর ঘরোয়া চিকিৎসা

অনেকেই হাঁটুর থেকে শব্দ (Cracking Knees) হওয়ার সমস্যায় ভোগেন। এটি প্রায়শই হাঁটু নাড়াচাড়া করার সময় …