অ্যাথলিটস ফিট (Athlete’s Feet) যা টিনিয়া পেডিস (Tinea Pedis) নামেও পরিচিত। এটি একটি ছত্রাক সংক্রমণ যা সাধারণত পায়ের আঙ্গুল এবং পায়ের তলদেশের ত্বককে প্রভাবিত করে। এর ফলে ত্বকে চুলকানি, জ্বালাপোড়া, লালভাব এবং ছাল ওঠে। বেশ কয়েকটি সহজ এবং কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যা ক্রীড়াবিদদের পায়ের ছত্রাক সংক্রমণের লক্ষণগুলি উপশম করতে সাহায্য করে। এই নির্দেশিকাযটিতে আমরা এই প্রাকৃতিক প্রতিকার গুলি নিয়ে আলোচনা করব।
অ্যাথলিটস পা (Athlete’s Feet) কি?
অ্যাথলেটের ফুট একটি সাধারণ ছত্রাক সংক্রমণ যা পায়ের ত্বককে প্রভাবিত করে। এটি সাধারণত চুলকানি, জ্বালাপোড়া, লালভাব এবং ত্বকে ফাটল সৃষ্টি করে বিশেষ করে পায়ের আঙ্গুলের মধ্যে। অ্যাথলিটের পা সংক্রামক যা প্রায়শই লকার রুম এবং সুইমিং পুলের মতো উষ্ণ, আর্দ্র পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। এটিকে “অ্যাথলিটস ফুট” বলা হয় কারণ এটি সাধারণত অ্যাথলেটদের মধ্যে দেখা যায় কারন তারা দীর্ঘ সময় ধরে টাইট-ফিটিং জুতা বা ঘর্মাক্ত মোজা পরেন। তবে এটি যে কারোর হতে পারে।
1. চা গাছের তেল :
চা গাছের তেল তার অ্যান্টিফাঙ্গাল (Antifungal) এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল (Antibacterial) বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি ক্রীড়াবিদদের পায়ের জন্য একটি কার্যকর প্রতিকার ।
– চা গাছের তেলকে ক্যারিয়ার তেলের সাথে পাতলা করুন যেমন নারকেল তেল বা জলপাই তেল।
– একটি তুলো ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় পাতলা মিশ্রনটি লাগান।
– এটি ১০-১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন তারপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
– সংক্রমণ পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াটি দিনে দুবার করুন।
2. বেকিং সোডা ভেজানো:
বেকিং সোডা ত্বকের pH (Potential Hydrogen) ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং ছত্রাকের বৃদ্ধি রোধ করার পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করে।
– একটি বাটিতে গরম জল নিয়ে ২ টেবিল চামচ বেকিং সোডা যোগ করুন।
– আপনার পা ১৫-২০ মিনিটের জন্য দ্রবণে ভিজিয়ে রাখুন।
– একটি পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে আপনার পা ভালো করে মুছে নিন।
– লক্ষণগুলির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াটি দিনে একবার বা দুবার করুন।
3. ভিনেগার ভেজানো :
ভিনেগার বিশেষ করে আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যান্টিফাঙ্গাল (Antifungal) বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ক্রীড়াবিদদের পায়ের ছত্রাককে মেরে ফেলতে সাহায্য করতে পারে।
– একটি বাটিতে সমান পরিমান আপেল সিডার ভিনেগার এবং গরম জল মেশান।
– দ্রবণে পা ভিজিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট।
– পরে আপনার পা ভাল করে শুকিয়ে নিন।
– সংক্রমণের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন একবার করে এই প্রক্রিয়াটি করুন।
4. রসুন :
রসুনে অ্যালিসিন(Allicin) রয়েছে যা অ্যান্টিফাঙ্গাল (Antifungal) বৈশিষ্ট্যযুক্ত একটি যৌগ এবং এটি অ্যাথলিটের পায়ের ছত্রাককে মেরে ফেলতে সাহায্য করতে পারে।
– কয়েকটি রসুনের টুকরো গুঁড়ো করে পেস্ট তৈরি করুন।
– পায়ের আক্রান্ত স্থানে পেস্টটি সরাসরি লাগান।
– এটি ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টার জন্য রেখে দিন তারপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
– সংক্রমণ পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াটি দিনে দুবার পুনরাবৃত্তি করুন।
5. কর্নস্টার্চ বা ট্যালকম পাউডার (Cornstarch Or Talcum Powder) :
আপনার পা শুষ্ক রাখা অপরিহার্য। কর্নস্টার্চ বা ট্যালকম পাউডার অতিরিক্ত আর্দ্রতা শোষণ করতে এবং ছত্রাকের বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
– পায়ের আঙ্গুলের মধ্যবর্তী স্থানে ফোকাস করে আপনার পায়ে কর্নস্টার্চ বা ট্যালকম পাউডার ছিটিয়ে দিন।
– স্নানের পরে বা যখনই আপনার পায়ে ঘাম হবে বা স্যাঁতসেঁতে মনে হবে তখন এই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করুন।
6. এসেনশিয়াল অয়েল ফুট স্প্রে (Essential Oil Foot Spray) :
এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে ঘরে তৈরি ফুট স্প্রে অ্যাথলিটের পায়ের ছত্রাককে মেরে ফেলতে সাহায্য করতে পারে এবং আপনার পাকে সতেজ রাখতে পারে।
– একটি ছোট স্প্রে বোতলে ১ আউন্স উইচ হ্যাজেল (Witch hazel) বা ভদকার সাথে ১০ ফোঁটা চা গাছের তেল, ৫ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল এবং ৫ ফোঁটা পেপারমিন্ট তেল মেশান।
– ব্যবহারের আগে ভালোভাবে ঝাঁকান।
– আক্রান্ত স্থানে ফোকাস করে আপনার পায়ে দ্রবণ স্প্রে করুন।
– মোজা বা জুতা পরার আগে এটিকে বাতাসে শুকাতে দিন।
– সেরা ফলাফলের জন্য প্রতিদিন ফুট স্প্রে ব্যবহার করুন।
সতর্কতা :
– আপনার পা পরিষ্কার এবং শুকনো রাখুন।
– শ্বাস নেওয়ার মতো মোজা এবং জুতা পরুন এবং জিম বা সুইমিং পুলের মতো পাবলিক প্লেসে খালি পায়ে হাঁটা এড়িয়ে চলুন।
– দীর্ঘ সময়ের জন্য টাইট-ফিটিং বা স্যাঁতসেঁতে জুতা পরা এড়িয়ে চলুন।
– ঘরোয়া চিকিৎসার পরও যদি উপসর্গগুলি অব্যাহত থাকে বা খারাপ হয় তাহলে চিকিৎসার জন্য একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করুন।
এই প্রাকৃতিক প্রতিকারগুলিকে আপনার দৈনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আপনি বাড়িতে অ্যাথলিটদের পায়ের ছত্রাক সংক্রমণ কার্যকরভাবে নিরাময় করতে পারেন। যদি আপনার অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যের কোনো সমস্যা থাকে তাহলে নতুন চিকিৎসা শুরু করার আগে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের কাছ থেকে নির্দেশনা নেওয়া দরকার।