ভিটামিন B3, যা নাইসিন (Niacin) নামেও পরিচিত, একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পানি দ্রবণীয় ভিটামিন। এটি আমাদের শরীরে শক্তি উৎপাদন, ত্বক ও নার্ভ সিস্টেমের স্বাস্থ্য, হজম এবং অন্যান্য শারীরিক প্রক্রিয়া সমর্থন করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মানব দেহে এই ভিটামিনের অভাবের কারণে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন B3 গ্রহণ শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই আর্টিকেলে আমরা ভিটামিন B3 এর বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা, এর উৎস এবং দৈনিক পরিমাণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ভিটামিন B3: সাধারণ পরিচিতি
ভিটামিন B3 একটি পাউডার বা সলিউবল ভিটামিন, যা প্রধানত দুটি ফর্মে পাওয়া যায়:
- নাইকোটিনিক অ্যাসিড (Nicotinic Acid)
- নাইকোটিনামাইড (Nicotinamide)
এই দুটি ফর্ম শরীরের জন্য সমানভাবে কার্যকরী, যদিও তাদের কার্যপদ্ধতি কিছুটা আলাদা। নাইসিন শরীরের বিভিন্ন কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি মূলত শক্তি উৎপাদনে সহায়ক।
ভিটামিন B3 এর প্রধান স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. শক্তির উৎপাদন
ভিটামিন B3 শরীরের শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শরীরে শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করা এনজাইমগুলোর উৎপাদন বাড়ায় এবং খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। গ্লুকোজ, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যামিনো অ্যাসিডের প্রক্রিয়াকরণে B3 গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর ফলে আমাদের শরীরের কোষগুলো যথাযথভাবে শক্তি উৎপাদন করতে পারে।
২. হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো
ভিটামিন B3, বিশেষত নাইকোটিনিক অ্যাসিড, শরীরের কলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি বিশেষভাবে “খারাপ” LDL (Low-Density Lipoprotein) কলেস্টেরল কমাতে সহায়ক এবং “ভাল” HDL (High-Density Lipoprotein) কলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে পারে। এই কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, এবং অন্যান্য হৃদযন্ত্রের রোগের ঝুঁকি কমাতে B3 অত্যন্ত উপকারী।
৩. ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নয়ন
নাইকোটিনামাইড (Niacinamide), যা ভিটামিন B3 এর একটি ফর্ম, ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বৃদ্ধি করে, ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে এবং ত্বককে সুরক্ষা দেয়। এটি ত্বকে বয়সের দাগ, ফাইন লাইন্স, এবং সূক্ষ্ম রেখা কমাতে সাহায্য করতে পারে। অতিরিক্ত সূর্যের রশ্মির কারণে ত্বকের সমস্যা দূর করতে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করতে নাইকোটিনামাইড বিশেষভাবে কার্যকরী।
৪. মস্তিষ্ক এবং নার্ভ সিস্টেমের উন্নতি
ভিটামিন B3 মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে এবং নার্ভ সিস্টেমের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সেরোটোনিন এবং ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারগুলোর উৎপাদন বাড়ায়, যা মুড নিয়ন্ত্রণ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। বিশেষত, B3 স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যাগুলি যেমন পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি, আলঝেইমার এবং ডিমেনশিয়ার মতো সমস্যাগুলির উপশমে সহায়তা করতে পারে।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
ভিটামিন B3 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, নাইকোটিনিক অ্যাসিড রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। তবে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে B3 ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
৬. হজম শক্তি বৃদ্ধি
ভিটামিন B3 হজম শক্তি উন্নত করার জন্যও সহায়ক। এটি পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং পাচন প্রক্রিয়াকে সুস্থ রাখে। পর্যাপ্ত পরিমাণে B3 খেলে খাবার ভালোভাবে হজম হয় এবং পেটের নানা সমস্যা যেমন গ্যাস, অ্যাসিডিটি ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমে।
৭. শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন B3 একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি শরীরের শক্তির উৎপাদন বাড়ায় এবং ক্রীড়া কার্যক্রমের জন্য শরীরকে আরও কার্যকরী করে তোলে। এটি দীর্ঘসময় ধরে শারীরিক পরিশ্রম করতে সহায়ক, কারণ এটি শরীরের পেশীগুলিকে শক্তি প্রদান করে।
ভিটামিন B3 এর উৎস
ভিটামিন B3 বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎসে পাওয়া যায়। খাদ্য তালিকায় এই ভিটামিনের অন্তর্ভুক্তি স্বাস্থ্যকে অনেক উপকারে আনতে পারে।
১. মাংস এবং মাছ
মাংস, বিশেষ করে মুরগির মাংস, গরুর মাংস এবং মাছ (যেমন টুনা, স্যালমন) ভিটামিন B3 এর ভাল উৎস। এই প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্যগুলো সহজেই শরীরে ভিটামিন B3 সরবরাহ করে।
২. শস্যদানা
শস্যদানা, বিশেষ করে সাদা চাল, ব্রাউন রাইস এবং ওটমিলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে B3 পাওয়া যায়। এই শস্যগুলো শরীরে শক্তি তৈরি করতে সাহায্য করে এবং অন্যান্য পুষ্টির সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করে।
৩. ডাল এবং বাদাম
ডাল, মটরশুঁটি, বাদাম (কাজু, পেস্তা) এবং সয়াবিনের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে B3 থাকে। ভেগান বা ভেটেরিয়ান ডায়েটে এই খাবারগুলো ভিটামিন B3 এর উপযুক্ত উৎস হিসেবে কাজ করে।
৪. দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য
দুধ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য (যেমন দই, পনির) ভিটামিন B3 এর ভাল উৎস হিসেবে কাজ করে। এই পণ্যগুলো প্রচুর পুষ্টির সমন্বয়ে শরীরে B3 এর যোগান দেয়।
৫. সবজি ও ফল
সবজি এবং ফলেও ভিটামিন B3 পাওয়া যায়, যদিও এর পরিমাণ কিছুটা কম। তবে, টমেটো, মাশরুম, অ্যাভোকাডো, পালং শাক এবং শসা এই ভিটামিনের ভালো উৎস।
ভিটামিন B3 এর অভাব
ভিটামিন B3 এর অভাব শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এর অভাবে হতে পারে:
১. পেলারিয়া (Pellagra)
ভিটামিন B3 এর অভাবের ফলে একটি রোগ দেখা দেয়, যার নাম পেলারিয়া। এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- ত্বকে র্যাশ
- ডায়রিয়া
- মানসিক অবস্থার পরিবর্তন
- বিষণ্ণতা এবং মস্তিষ্কের সমস্যা
২. হজম সমস্যা
ভিটামিন B3 এর অভাবে হজম সমস্যা যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, এবং ডাইজেস্টিভ ট্র্যাকের অন্যান্য সমস্যাও হতে পারে।
৩. মানসিক সমস্যা
ভিটামিন B3 এর অভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে, যা মানসিক অবসাদ, অস্থিরতা এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
ভিটামিন B3 (নাইকোটিনিক অ্যাসিড) গ্রহণের সঠিক পরিমাণ
ভিটামিন B3, বা নাইকোটিনিক অ্যাসিড, একটি গুরুত্বপূর্ণ পানির দ্রবণীয় ভিটামিন, যা শরীরের শক্তি উৎপাদন, ত্বক, পরিপাকতন্ত্র, এবং স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। ভিটামিন B3 আমাদের শরীরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষত সেলুলার শক্তি উৎপাদন এবং ধমনীগুলির সুস্থতায়।
তবে, ভিটামিন B3 এর সঠিক পরিমাণে গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এখানে আমরা আলোচনা করব ভিটামিন B3 এর সঠিক গ্রহণের পরিমাণ এবং এটি কোন পরিস্থিতিতে সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
ভিটামিন B3 এর দৈনিক গ্রহণের পরিমাণ
ভিটামিন B3 এর দৈনিক নিরাপদ গ্রহণের পরিমাণ নির্ভর করে আপনার বয়স, লিঙ্গ এবং বিশেষ পরিস্থিতির ওপর, যেমন গর্ভাবস্থা বা বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়। নিচে ভিটামিন B3 এর বয়সভিত্তিক এবং লিঙ্গভিত্তিক সুপারিশকৃত দৈনিক পরিমাণ দেওয়া হলো:
১. পুরুষদের জন্য:
- বয়স 14-18 বছর: 16 মিলিগ্রাম
- বয়স 19 বছর ও তার উপরে: 16 মিলিগ্রাম
২. মহিলাদের জন্য:
- বয়স 14-18 বছর: 14 মিলিগ্রাম
- বয়স 19 বছর ও তার উপরে: 14 মিলিগ্রাম
৩. গর্ভবতী মহিলাদের জন্য:
- গর্ভাবস্থার 1ম ত্রৈমাসিক: 18 মিলিগ্রাম
- গর্ভাবস্থার 2য় এবং 3য় ত্রৈমাসিক: 18 মিলিগ্রাম
৪. স্তনপানকারী মহিলাদের জন্য:
- বয়স 14-18 বছর: 17 মিলিগ্রাম
- বয়স 19 বছর ও তার উপরে: 17 মিলিগ্রাম
৫. শিশুর জন্য:
- ০–৬ মাস: 2 মিলিগ্রাম
- ৭–১২ মাস: 4 মিলিগ্রাম
- ১–৩ বছর: 6 মিলিগ্রাম
- ৪–৮ বছর: 8 মিলিগ্রাম
- ৯–১৩ বছর: 12 মিলিগ্রাম
ভিটামিন B3 এর প্রধান উৎস
ভিটামিন B3 সাধারণত খাদ্য থেকে পাওয়া যায় এবং এটি শরীরে তৈরি হওয়া প্রাকৃতিক খাদ্য থেকে পাওয়া সহজ। নীচে কিছু প্রধান খাদ্য তালিকা দেওয়া হলো যা ভিটামিন B3 এর ভাল উৎস:
- মাংস ও মাছ: মুরগির মাংস, গরুর মাংস, টুনা, সালমন মাছ।
- ডিম ও দুগ্ধজাত পণ্য: ডিম, দই, পনির।
- ডাল ও মটরশুঁটি: মটরশুঁটি, লেন্টিল।
- শস্য ও শাকসবজি: ভুট্টা, হোল গ্রেন ব্রেড, পালং শাক, মিষ্টি আলু।
- বাদাম ও বীজ: পিনাট, কাঠ বাদাম, সূর্যমুখী বীজ।
- ফল: আফকাদো, পেপারমিন্ট।
- নানা ধরনের ফোর্টিফায়েড ফুড: কিছু সিরিয়াল ও পুষ্টিকর পানীয়গুলোতে ভিটামিন B3 ফোর্টিফাই করা থাকে।
ভিটামিন B3 গ্রহণের সুবিধা
ভিটামিন B3 এর সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করার ফলে শরীরের বিভিন্ন উপকারিতা পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রধান সুবিধাগুলি হলো:
- এনার্জি উৎপাদন: ভিটামিন B3 শরীরের শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এটি খাদ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।
- ত্বকের স্বাস্থ্য: নাইকোটিনিক অ্যাসিড ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে, এটি ত্বককে উজ্জ্বল রাখে এবং একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের রোগ নিরাময়েও সহায়ক।
- হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য: ভিটামিন B3 কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড স্তরের ভারসাম্য রক্ষা করে, যা হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী।
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা: এটি স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে, বিশেষত মস্তিষ্কের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্মৃতি ও মনোযোগ বজায় রাখতে সহায়তা করে।
ভিটামিন B3 এর অতিরিক্ত গ্রহণ
ভিটামিন B3 এর অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষত, নাইকোটিনিক অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রায় গ্রহণে ত্বকের লালচেভাব, রক্তচাপের সমস্যা, লিভারের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা এবং রক্তে শর্করা বৃদ্ধি ঘটতে পারে।
এই কারণে, ভিটামিন B3 গ্রহণের সঠিক পরিমাণ অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে ভিটামিন B3 গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত এবং একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।
ভিটামিন B3 এর অতিরিক্ত গ্রহণ
ভিটামিন B3, বা নাইসিন, একটি গুরুত্বপূর্ণ পানির দ্রবণীয় ভিটামিন যা আমাদের শরীরের শক্তি উৎপাদন, হজম, ত্বক ও নার্ভ সিস্টেমের জন্য অপরিহার্য। তবে, প্রতিটি পুষ্টিকর উপাদানের মত, ভিটামিন B3-এরও অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ভিটামিন B3 এর অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণের ফলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো সাধারণত তখনই ঘটে যখন অতিরিক্ত পরিমাণে নাইকোটিনিক অ্যাসিড বা নাইকোটিনামাইড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা ভিটামিন B3 এর অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে সম্ভাব্য যে সমস্যা গুলি হতে পারে, সেগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
ভিটামিন B3 এর অতিরিক্ত গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
১. ত্বকে লালচেভাব বা ফ্লাশ (Flushing)
ভিটামিন B3 এর অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণের সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে ত্বকে লালচেভাব বা ফ্লাশ। এই অবস্থায় ত্বক গরম অনুভূত হয়, এবং ত্বকে লাল র্যাশ বা গা dark ় ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয়। এটি মূলত নাইকোটিনিক অ্যাসিড গ্রহণের পর ঘটে এবং এটি শরীরের রক্তনালী প্রসারিত হওয়ার কারণে ঘটে। যদিও এটি বিপজ্জনক নয়, তবে অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে।
২. লিভার সমস্যা
ভিটামিন B3 অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ দীর্ঘ সময় ধরে করা হলে এটি লিভারের ক্ষতি করতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এটি লিভারের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যেমন লিভারের ফাংশনাল ড্যামেজ বা ইনফ্লেমেশন। দীর্ঘকালীন উচ্চমাত্রায় নাইকোটিনিক অ্যাসিড গ্রহণের ফলে লিভার সেলসের নষ্ট হওয়া বা সিরোসিসের মতো রোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
৩. রক্তচাপ কমে যাওয়া
ভিটামিন B3 (নাইকোটিনিক অ্যাসিড) অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে এটি রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে। এটি মূলত রক্তনালীগুলোর প্রসারণ ঘটায়, যার ফলে রক্তপ্রবাহের পরিমাণ বাড়ে এবং রক্তচাপ কমে যেতে পারে। যদিও এটা কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগতভাবে উপকারী হতে পারে, তবে যদি আপনার রক্তচাপ নীচে থাকে, তাহলে অতিরিক্ত B3 গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত। এর ফলে মাথাব্যথা, দুর্বলতা এবং ঘোরাও হতে পারে।
৪. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা
ভিটামিন B3 এর অতিরিক্ত গ্রহণ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে:
- অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক: অতিরিক্ত B3 গ্রহন করলে পেটের এসিড উৎপাদন বেড়ে যেতে পারে, যা গ্যাস্ট্রিক আলসার বা অ্যাসিডিটি সৃষ্টি করতে পারে।
- ডায়রিয়া: অতিরিক্ত ভিটামিন B3 খেলে অন্ত্রের কার্যক্রমে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে ডায়রিয়া বা পেটের গন্ডগোল হতে পারে।
- পেটের ব্যথা বা অস্বস্তি: খাওয়ার পর পেটের মধ্যে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
৫. গাউট (Gout)
গাউট একটি ধরনের আথ্রাইটিস যা মূলত যৌগে ইউরিক অ্যাসিডের সঞ্চয় হওয়ার কারণে ঘটে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিটামিন B3 এর অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণের ফলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে পারে, যার কারণে গাউটের উপসর্গ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
৬. রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অত্যধিক পরিমাণে নাইকোটিনিক অ্যাসিড গ্রহণের ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এটি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
৭. হৃদযন্ত্রের সমস্যা
অনেক সময় দীর্ঘদিন ধরে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন B3 গ্রহণের ফলে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষত সেইসব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যারা আগে থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত। কিছু ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত B3 গ্রহণ হৃদযন্ত্রের সুস্থতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
ভিটামিন B3 এর দৈনিক নিরাপদ গ্রহণের পরিমাণ
ভিটামিন B3 এর সাধারণত দৈনিক নিরাপদ গ্রহণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে অতিরিক্ত গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়িয়ে চলা যায়। বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য সংস্থা এবং চিকিৎসকরা ভিটামিন B3 এর দৈনিক নিরাপদ গ্রহণের পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন।
এখানে একটি সাধারণ নির্দেশিকা দেওয়া হলো:
- পুরুষদের জন্য: 16 মিলিগ্রাম
- মহিলাদের জন্য: 14 মিলিগ্রাম
- গর্ভবতী মহিলাদের জন্য: 18 মিলিগ্রাম
- শিশুদের জন্য: বয়স অনুযায়ী ভিন্ন
ভিটামিন B3 এর সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা
যদি আপনি ভিটামিন B3 সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করার চিন্তা করেন, তবে প্রথমেই একটি চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। কেননা, বিশেষত নাইকোটিনিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টের উচ্চমাত্রা শরীরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। যাদের লিভারের সমস্যা, রক্তচাপের সমস্যা বা ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের জন্য সাপ্লিমেন্টের মাত্রা কম রাখা উচিত।
এগুলো সাধারণত তখনই ঘটে যখন অতিরিক্ত পরিমাণে নাইকোটিনিক অ্যাসিড (Niacin) গ্রহণ করা হয়। তাই, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত B3 সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত।
ভিটামিন B3 (নাইকোটিনিক অ্যাসিড) আমাদের দেহের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন। এটি শক্তির উৎপাদন, হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো, ত্বকের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি, মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করা এবং অন্যান্য শারীরিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, এই ভিটামিনের সঠিক পরিমাণ এবং উৎস থেকে খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে এর উপকারিতা পাওয়া যায়।
এটি সাধারণ তথ্য এবং শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। বিশেষ স্বাস্থ্য পরামর্শের জন্য, পেশাদার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।