লিকোরিস বা যষ্টিমধু, যা গ্লাইসিরাইজা গ্লাব্রা নামে পরিচিত, এক ধরনের ঔষধি উদ্ভিদ যার শেকড় হাজার বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লিকোরিস রুটে বিভিন্ন ধরনের ফাইটোকেমিক্যাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে সহায়ক।
দ্রষ্টব্য: এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে লেখা। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরামর্শের জন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
লিকোরিস রুটের পুষ্টি উপাদানসমূহ
লিকোরিস রুটে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা শরীরের বিভিন্ন উপকার সাধন করে। এতে রয়েছে গ্লাইসিরাইজিন, গ্লাব্রিডিন, ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন ধরনের পলিস্যাকারাইড। এছাড়াও এতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও পটাসিয়ামসহ প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ রয়েছে।
লিকোরিস রুটের প্রধান স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে উপকারী
লিকোরিস রুট প্রাচীনকাল থেকে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, কাশি এবং ব্রংকাইটিসের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি মিউকাস পাতলা করতে সহায়ক, যা শ্বাসপ্রশ্বাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
২. হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়ক
লিকোরিস রুটের উপাদানসমূহ হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের প্রদাহ কমাতে সহায়ক। এটি আলসার বা পেপটিক আলসারের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়।
৩. সর্দি ও কাশি কমায়
লিকোরিস রুটের অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য ঠান্ডা লাগা এবং কাশির সমস্যা হ্রাসে সহায়ক। এটি গলা ব্যথা এবং ফ্লু-এর মতো সমস্যা কমাতেও কার্যকর।
৪. মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে যে, লিকোরিস রুটের বিভিন্ন উপাদান কর্টিসল হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা মানসিক চাপ কমাতে এবং উদ্বেগ দূর করতে সাহায্য করে।
৫. হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক
লিকোরিস রুটে গ্লাইসিরাইজিন নামে একটি যৌগ থাকে, যা শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি মহিলাদের হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং মেনোপজের সময় সহায়ক হতে পারে।
৬. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে সহায়ক
লিকোরিস রুটে পাওয়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাভোনয়েডসমূহ ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এটি শরীরকে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে সহায়ক।
লিকোরিস রুট ব্যবহারের পদ্ধতি
লিকোরিস রুটের ঔষধি গুণাবলির কারণে এটি প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিচে কিছু সাধারণ উপায়ে লিকোরিস রুট ব্যবহার করা হয়:
- লিকোরিস রুট চা: লিকোরিস রুট চা বানানো সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি। চা তৈরিতে এক চামচ শুকনো লিকোরিস রুট গরম পানিতে ৫-১০ মিনিট রেখে দিলে স্বাদ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা মেলে। এই চায়ে মধু যোগ করলে এটি আরও স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু হয়ে ওঠে।
- লিকোরিস রুট পাউডার: বাজারে লিকোরিস রুট পাউডার পাওয়া যায়, যা সহজেই পানির সাথে মিশিয়ে বা বিভিন্ন পানীয়তে মিশিয়ে গ্রহণ করা যায়।
- লিকোরিস রুট টিংচার: লিকোরিস রুটের টিংচার বিশেষ ধরনের এক্সট্রাক্ট আকারে আসে, যা স্বাস্থ্য উপকারিতা দেয়। সাধারণত এটি ড্রপার দিয়ে পানিতে কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে খাওয়া হয়।
- ক্যাপসুল বা সাপ্লিমেন্ট আকারে লিকোরিস রুট: স্বাস্থ্য খাদ্য বা সাপ্লিমেন্ট আকারে লিকোরিস রুট সহজেই পাওয়া যায়। বিশেষত যারা স্বাদের জন্য চা বা টিংচার নিতে চান না তাদের জন্য ক্যাপসুল উপকারী।
লিকোরিস রুট ব্যবহারের সতর্কতা
লিকোরিস রুটে থাকা গ্লাইসিরাইজিন নামক যৌগের কারণে কিছু মানুষের জন্য এটি প্রতিকূল হতে পারে। তাই ব্যবহারের পূর্বে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
- উচ্চ রক্তচাপ: লিকোরিস রুট উচ্চ রক্তচাপ বাড়াতে পারে। বিশেষত দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে এটি রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা হ্রাস করতে পারে এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের লিকোরিস রুট গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
- গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যদানকারী মা: গর্ভাবস্থায় বা স্তন্যদানকালে লিকোরিস রুট গ্রহণ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। কারণ এতে হরমোনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে যা গর্ভাবস্থার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- ডায়াবেটিস: লিকোরিস রুটে প্রাকৃতিক মিষ্টি উপাদান থাকে যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি নিয়মিত গ্রহণে সমস্যা হতে পারে।
- কিডনি ও হৃদরোগের রোগীরা: কিডনি বা হৃদরোগের রোগীদের ক্ষেত্রে লিকোরিস রুট ব্যবহারে সমস্যা হতে পারে। পটাশিয়াম হ্রাস এবং অস্বাভাবিক ফ্লুইড রিটেনশনের কারণে কিডনি ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- অতিরিক্ত সেবন এড়ানো: দীর্ঘ সময় ধরে লিকোরিস রুটের অতিরিক্ত সেবন করা শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সাধারণত এটি সীমিত মাত্রায় এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যবহার করা ভালো।
সর্বোপরি, লিকোরিস রুট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য অবস্থা অনুযায়ী একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সর্বদা উপকারী।
লিকোরিস রুটের প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, তবে এটি ব্যবহারের আগে সঠিক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের পূর্বে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।