ব্রাসেল স্প্রাউটস, যা দেখতে ছোট বাঁধাকপির মতো, পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি ক্রুসিফেরাস সবজির একটি অংশ এবং ব্রোকলি, বাঁধাকপি, এবং ফুলকপির মতো একই পরিবারভুক্ত। এর বৈশিষ্ট্যগত গঠন এবং পুষ্টিগুণের জন্য ব্রাসেল স্প্রাউটস এখন বিশ্বজুড়ে সুপারফুড হিসেবে জনপ্রিয়। এই নিবন্ধে ব্রাসেল স্প্রাউটসের পুষ্টিগুণ, স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং বিভিন্ন ব্যবহারের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ব্রাসেল স্প্রাউটস কী?
ব্রাসেল স্প্রাউটস ছোট, গোলাকার এবং পাতাবহুল সবজি, যা গাছে শাখা-প্রশাখার মতো বেড়ে ওঠে। এর নাম এসেছে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস থেকে, যেখানে এই সবজিটি ব্যাপক জনপ্রিয়। এটি প্রধানত শীতকালীন সবজি এবং পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর।
ব্রাসেল স্প্রাউটসের পুষ্টিগুণ
ব্রাসেল স্প্রাউটস কম ক্যালোরি এবং উচ্চ পুষ্টিগুণের জন্য সুপরিচিত। প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রাসেল স্প্রাউটসে যে পুষ্টি উপাদান থাকে:
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
ক্যালোরি | ৪৩ ক্যালোরি |
প্রোটিন | ৩.৩৮ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৩০ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৮.৯৫ গ্রাম |
ফাইবার | ৩.৮ গ্রাম |
ভিটামিন সি | ৮৫ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন কে | ১৭৭ মাইক্রোগ্রাম |
ফলেট | ৬১ মাইক্রোগ্রাম |
পটাসিয়াম | ৩৮৯ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৪২ মিলিগ্রাম |
এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন প্রকারের ফাইটোকেমিক্যালস।
ব্রাসেল স্প্রাউটসের স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. উচ্চ পুষ্টিগুণ
ব্রাসেল স্প্রাউটস ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চমৎকার উৎস। এটি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে।
২. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
ব্রাসেল স্প্রাউটসে সালফোরাফেন এবং ইন্ডোল-৩-কার্বিনল নামক দুটি শক্তিশালী যৌগ রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষত, এটি স্তন, প্রোস্টেট এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়ক।
৩. হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা
ব্রাসেল স্প্রাউটস ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কোলেস্টেরল স্তর কমায়। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. হজম প্রক্রিয়া উন্নত করা
এতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে, যা হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
৫. হাড় শক্তিশালী করা
ব্রাসেল স্প্রাউটসে ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সহায়ক।
৬. ত্বকের জন্য উপকারী
ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।
৭. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
ব্রাসেল স্প্রাউটস কম ক্যালোরি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, যা ওজন কমাতে কার্যকর।
৮. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
ব্রাসেল স্প্রাউটসে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
৯. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
ফাইবার এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ব্রাসেল স্প্রাউটস খাওয়ার উপায়
ব্রাসেল স্প্রাউটস বিভিন্ন রেসিপিতে ব্যবহার করা যায়। কিছু জনপ্রিয় উপায়:
- রোস্টেড ব্রাসেল স্প্রাউটস: অলিভ অয়েল, লবণ, এবং গোলমরিচ দিয়ে বেক করুন।
- স্টার ফ্রাই: ব্রাসেল স্প্রাউটসকে অন্যান্য সবজির সঙ্গে স্টার ফ্রাই করে নিন।
- স্যুপ: ব্রাসেল স্প্রাউটস দিয়ে স্যুপ তৈরি করুন।
- সালাদ: কাঁচা ব্রাসেল স্প্রাউটস কুচি করে সালাদে ব্যবহার করুন।
- পাস্তা বা নুডলস: পাস্তা বা নুডলসের সঙ্গে ব্রাসেল স্প্রাউটস মিশিয়ে একটি স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করুন।
ব্রাসেল স্প্রাউটস কেনার সময় কীভাবে সঠিকটি নির্বাচন করবেন?
- তাজা ও সবুজ: পাতা উজ্জ্বল সবুজ এবং মজবুত হওয়া উচিত।
- গন্ধহীন: ব্রাসেল স্প্রাউটস থেকে কোনো বাজে গন্ধ বের হলে তা কিনবেন না।
- সমান আকার: একই আকারের ব্রাসেল স্প্রাউটস রান্না করার সময় একসঙ্গে সমানভাবে সেদ্ধ হয়।
ব্রাসেল স্প্রাউটস সংরক্ষণ পদ্ধতি
- ফ্রিজে সংরক্ষণ: ব্রাসেল স্প্রাউটস ফ্রিজে একটি এয়ারটাইট ব্যাগে রাখুন।
- ফ্রিজারে রাখুন: দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে চাইলে ব্রাসেল স্প্রাউটস ধুয়ে শুকিয়ে ফ্রিজারে রাখুন।
ব্রাসেল স্প্রাউটসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যদিও ব্রাসেল স্প্রাউটস স্বাস্থ্যকর, অতিরিক্ত সেবনে কিছু সমস্যা হতে পারে:
- পেট ফাঁপা: এতে থাকা ফাইবার বেশি পরিমাণে খেলে পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
- থাইরয়েডের সমস্যা: ব্রাসেল স্প্রাউটস একটি গোইট্রোজেনিক খাদ্য, যা থাইরয়েড হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
- অ্যালার্জি: কারো কারো ব্রাসেল স্প্রাউটসে অ্যালার্জি হতে পারে।
ব্রাসেল স্প্রাউটস একটি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর সবজি, যা হৃদরোগ, ক্যান্সার, এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধ থেকে শুরু করে হজম প্রক্রিয়া উন্নত করা পর্যন্ত বহুমুখী উপকার বয়ে আনে। এটি রান্না এবং খাওয়ার উপায়ও সহজ। তবে স্বাস্থ্য সমস্যা এড়াতে এটি সঠিক পরিমাণে সেবন করা উচিত।