সম্বন্ধ করে বিয়ে করছেন? এই ভুলগুলো করছেন নাতো?

আজকাল আধুনিকতা, ব্যাক্তি স্বাতন্ত্র, নারীবাদ, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ইত্যাদির কল্যানে বাঙালির মনে “বিবাহ একটি ব্রত” এই আপ্তবাক্যের বদলে “বিবাহ একটি চুক্তি” এইরূপ ধারণাই বেশি স্থান পাচ্ছে. বিয়ের কারণ, পদ্ধতি , বিবাহিত জীবনের ধরণ সব কিছুই যেখানে বদলে যাচ্ছে সেখানে কিছু বিষয়ে সকলের সচেতন থাকাটা অত্যান্ত জরুরী.

বিবাহ আর্থিক অবস্থার উন্নতির সিঁড়ি নয়:

অনেক পাত্র/পাত্রীর মধ্যে এমন ধারণা বধ্যমূল থাকে যে “যেহেতু আমি অনেক সুন্দরী তাই আমি অনেক পয়সাওয়ালা বর ডিজার্ভ করি” অথবা, “যেহেতু আমি সকারী চাকুরীজীবি সেহেতু আমি অনেক বড়োলোক ঘরের সুন্দরী মেয়ে ডিজার্ভ করি”.
মনে রাখবেন এমন ধারণার বশবর্তী হয়ে যদি আপনি বিয়ের সম্পর্কের জড়ান তাহলে নিজের ভবিষ্যতের জন্য একটি কাটা বৃক্ষ রোপন করলেন যা একদিন পত্র পল্লবে বিকশিত হয়ে আপনাকেই বিঁধবে.

পার্থিব উন্নতির জন্য নিজের যোগ্যতার উপরে ভরসা রাখুন. বিয়ে হওয়া উচিত সম-যোগ্যতা, সম-জীবনধারার, সম-সামাজিক মর্যাদার দুজন মানুষের মধ্যে. এইরূপ হলে দুজনের আত্ত্বমর্যাদা যেমন অক্ষুন্ন থাকে তেমনি দৈনন্দিন জীবনে পারস্পরিক সাংঘর্ষিক উপাদান কম থাকায় জীবনে চলার পথও মসৃন হয়.

সমান যোগ্যতাই সমান অধিকার প্রদান করে:
“অধিকার চাই” “অধিকার চাই” এইরূপ দাবি তুলে অধিকার পাওয়া হয়তো যায় কিন্তু সেটা “অর্জন” নয় অন্যের দয়ায় প্রাপ্ত “দান” মাত্র. নারীরা মেধা আর পরিশ্রমের দ্বারা সমান যোগ্যতা অর্জন করলে তাদের সমান অধিকারের দাবিটিও স্বয়ংক্রিয় ভাবেই পূরণ হয়ে যায়. তাই সমান অথবা কাছাকাছি যোগ্যতার মানুষকে জীবন সঙ্গী বানানোর চেষ্টা করুন. তবেই ভবিষ্যতে আপনার অধিকার এবং মর্যাদা অক্ষুণ্য থাকবে.

সরকারি চাকরিজীবী বর মানেই সুখের চাবিকাঠি নয়:

বেশিরভাগ মেয়ে বা তাদের পরিবারকে দেখা যায় হন্যে হয়ে সরকারি চাকরিজীবী পাত্র খুঁজতে. মেয়ের বয়স 30 এর কোঠায় পৌঁছলেও তারা হাল ছাড়তে রাজি নয়. মেয়ে সুন্দরী বলে কথা. অতো সহজে হার মানলে চলে? তাদের এই প্রানান্ত প্রচেষ্টা দেখে মনে হয় সরকারি চাকরিজীবী পাত্র পাওয়ার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত. কিন্তু তিনি নিজেকে বা নিজের কন্যাকে সরকারি চাকরি পাওয়ার যোগ্য করে তুলতে কতটা প্রচেষ্টা করেছেন সেটা অবশ্য পরিষ্কার নয়. ভাবখানা এইরকম যে, মেয়ে সরকারি চাকরি যোগাড় করতে না পারলে কি? একখানা রেডিমেড সরকারি চাকরিজীবী ছেলে যদি বাড়িতে আনা যায় তাও কম কিসে?

সরকারি চাকরিজীবী মেয়ে অবশ্যই সরকারি চাকরিজীবী ছেলে খুঁজতে পারে. কিন্তু সবাই যদি সরকারি চাকরিজীবী ছেলে খোঁজ করে তবে বুজতে হবে সমাজে কোনো গভীর অসুখ বাসা বেঁধেছে.

একমাত্র সন্তান বিয়ে করা সর্বসুখ একা ভোগের নিশ্চয়তা নয়:

বিধবা/বিপত্নীক আর ডিভোর্সি এক নয়:

আজকাল ফেসবুকের কল্যানে কিছু ছেলেদের ডিভোর্সি অথবা বিধবা বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করে ফ্যান্টাসিযুক্ত পোস্ট করতে দেখা যায় . এই প্রসংগে আলোচনার শুরুতেই বলে রাখি, আমি কোনোভাবেই ডিভোর্সি এবংবিধবা/বিপত্নীক বিবাহের বিপক্ষে নই. ডিভোর্সি আর বিধবার মধ্যে পার্থক্য আর ডিভোর্সি বিবাহের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় বিবেচনায় রাখা উচিত সেই বিষয়ে আলোকপাত করাই আমার উদ্যেশ্য.

বিধবা/বিপত্নীক হলো সেই ব্যক্তি যার জীবন সঙ্গী/সঙ্গিনী কোনো দুর্ঘটনাবসত অকালপ্রয়াত হয়েছেন.এক্ষেত্রে এই ঘটনার দ্বারা উক্ত ব্যক্তির সংসার করতে পাড়ার যোগ্যতা বা অযোগ্যতা কোনোটিই প্রকাশ পায় না. এই বিচ্ছেদে জীবিত সঙ্গীর কোনো দোষ নেই. এইরূপ কাউকে বিয়ে করা অবশ্যই মহত্বের পরিচয়.

অপরদিকে, ডিভোর্সি হলো সেই ব্যাক্তি যিনি ঝগড়া/অশান্তির জেরে আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ গ্রহণ করেছেন বা যাকে বিচ্ছেদ প্রদান করা হয়েছে. এইরূপ কাউকে বিয়ে করার পূর্বে তার আগের বিয়ে বিচ্ছেদের প্রেক্ষাপট অবশ্যই ভালো করে যাচাই বাছাই করে নিতে হবে. বিবাহ বিচ্ছেদের জনপ্রিয় কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পরকীয়া, মাদকের নেশা, অত্যাধিক বস্তুগত চাহিদা, উগ্র মেজাজ/ধৈর্য্যের অভাব, স্বেচ্ছাচারী জীবন যাপনের আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি. মনে রাখবেন এই ধরণের অভ্যাস বা চিন্তাধারা সহজে দূর হবার নয়. এমন ব্যাক্তির দ্বিতীয়বার বিবাহিত জীবনেও প্রথমবারের মতো আচরণ করার অধিক সম্ভবনা থাকে. তাই আপনি অবশ্যই ভেবে দেখবেন এই ধরণের আচরণ বা চিন্তাধারার সাথে আপনি মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা.

করণীয়:
1) জোতিষীর পরিবর্তে নিজের বিচার বুদ্ধির ওপর ভরসা রাখুন
2) পাত্র-পাত্রীকে আগে কথা বলার সুযোগ করে দিন
3) আপনার বাস্তবতার সাথে প্রত্ত্যাশার সামঞ্জস্য রাখুন
4) দেখা করার আগে আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ এমন বিষয়গুলো ওপর পক্ষের মদ্ধ্যে উপস্থিত আছে কিনা যেনে নিন. প্রয়জনে একবার ভিডিও কল করে কথা বলে নিন.

বর্জনীয়:
1) জাত-পাত বা ঠিকুজি-কোষ্ঠী নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না
2) অর্থের (ওপরের) পেছনে ছুটবেন না
3) পাত্র/পাত্রীর নিজের যোগ্যতাকে গুরুত্ত্ব দিন তার পরিবারের ধন-দৌলতকে নয়
4) সব কিছুকেই সন্দেহের চোঁখে দেখবেন না. ওপর পক্ষকে সম্মান করলে তারাও আপনাকে সম্মান করবে.