United Kingdom

স্বপ্নের দেশে এক ভ্রমণ: যুক্তরাজ্যের সেরা আকর্ষণ ও ভ্রমণ পরামর্শ

যুক্তরাজ্য, যার মধ্যে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড অন্তর্ভুক্ত, বিশ্বের অন্যতম সুন্দর ও বৈচিত্র্যময় দেশ। রাজধানী লন্ডন থেকে শুরু করে এডিনবার্গ, ম্যানচেস্টার, ওয়েলসের মনোরম পাহাড় এবং আয়ারল্যান্ডের উঁচু-নীচু ভূমি – এখানে বিভিন্ন রকমের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক ঐতিহ্য বিদ্যমান।

সেরা সময় ভ্রমণের জন্য

যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া বৈচিত্র্যময় এবং অঞ্চল অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। সাধারণভাবে, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুম ভ্রমণের সেরা সময়। এই সময় আবহাওয়া সুন্দর এবং পর্যটক আকর্ষণীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখার জন্য আদর্শ।

ভিসা প্রক্রিয়া: বাংলাদেশ ভারতের পর্যটকদের জন্য

যুক্তরাজ্যে প্রবেশের জন্য ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়াটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও নিয়মিতভাবে প্রস্তুতি নিলে এটি সহজ হয়।

বাংলাদেশ থেকে ভিসা প্রক্রিয়া

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য স্ট্যান্ডার্ড ভিসা প্রয়োজন হয়। সাধারণত এই ভিসার জন্য নিচের নথিপত্র লাগবে:

  • পূর্ণাঙ্গ ভিসা আবেদনপত্র
  • বৈধ পাসপোর্ট
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট, আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণপত্র
  • কর্মসংস্থান সংক্রান্ত নথিপত্র, যদি প্রযোজ্য হয়
  • যেকোনো অতিরিক্ত নথিপত্র যা আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্যকে ব্যাখ্যা করবে

ভারত থেকে ভিসা প্রক্রিয়া

ভারতের জন্য যুক্তরাজ্যের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া কিছুটা একই রকম, তবে ভারতের বিভিন্ন শহরে যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার থাকায় এটি সহজে সম্ভব। আবেদনকারীদের পূর্ণাঙ্গ তথ্যসহ ভিসা ফি জমা করতে হয় এবং বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়াও থাকে।

যুক্তরাজ্যের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রসমূহ

যুক্তরাজ্য, অর্থাৎ ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড – প্রতিটি অঞ্চলে রয়েছে অনন্য সুন্দর এবং জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে যুক্তরাজ্যের কিছু প্রধান পর্যটন কেন্দ্রের বর্ণনা দেওয়া হলো, যা ভ্রমণকারীদের জন্য অবশ্যই দেখা উচিত।

ইংল্যান্ডের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রসমূহ

. লন্ডন

লন্ডন যুক্তরাজ্যের রাজধানী এবং অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। এখানে বিশ্বখ্যাত কিছু আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে, যেমন:

  • বাকিংহাম প্যালেস: এটি রাজপরিবারের বাসস্থান। দর্শনার্থীরা গার্ড পরিবর্তনের অনুষ্ঠান দেখতে পারেন।
  • টাওয়ার ব্রিজ: এই ঐতিহাসিক সেতুটি টেমস নদীর উপর অবস্থিত। ব্রিজটি লন্ডনের প্রতীক এবং অন্যতম সুন্দর দর্শনীয় স্থান।
  • ব্রিটিশ মিউজিয়াম: এখানে রয়েছে প্রাচীন মিশরীয়, রোমান, গ্রিক এবং অন্যান্য সভ্যতার মূল্যবান নিদর্শন।
  • লন্ডন আই: এটি একটি বিশাল ফেরিস হুইল, যেখান থেকে পুরো লন্ডন শহরের অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়।

. স্টোনহেঞ্জ

ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারে অবস্থিত স্টোনহেঞ্জ একটি প্রাচীন রহস্যময় স্থান। এই বিশাল পাথরগুলোর উৎস এবং তাদের গঠন নিয়ে আজও গবেষণা চলেছে। এটি প্রাগৈতিহাসিক স্থাপত্যের এক বিরল উদাহরণ।

. লেক ডিস্ট্রিক্ট

ইংল্যান্ডের লেক ডিস্ট্রিক্ট একটি মনোরম প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র। এখানকার পাহাড়, হ্রদ এবং সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের জন্য অদ্বিতীয়।

স্কটল্যান্ডের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রসমূহ

. এডিনবার্গ ক্যাসেল

এডিনবার্গের প্রাচীন এই দুর্গটি স্কটল্যান্ডের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সাথে জড়িত। এটি একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান, যেখানে স্কটিশ রাজা-রাণীদের ইতিহাস এবং তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র প্রদর্শিত হয়।

. লখ নেস

লখ নেস স্কটল্যান্ডের একটি বিখ্যাত হ্রদ, যেখানে একটি রহস্যময় প্রাণী “নেসি” আছে বলে কথিত রয়েছে। এই হ্রদের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং এখানে ভ্রমণের রহস্যময় অভিজ্ঞতা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

. আইল অফ স্কাই

স্কটল্যান্ডের পশ্চিমে অবস্থিত আইল অফ স্কাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে রয়েছে পর্বত, ঝরনা এবং সুন্দর সমুদ্র উপকূল, যা পর্যটকদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

ওয়েলসের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রসমূহ

. স্নোডনিয়া ন্যাশনাল পার্ক

ওয়েলসের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় স্নোডনকে ঘিরে এই পার্কটি গড়ে উঠেছে। পাহাড়ে হাইকিং, সাইক্লিং, এবং ক্যাম্পিং করার সুযোগ রয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ।

. কনউই ক্যাসেল

১৩শ শতাব্দীর প্রাচীন এই দুর্গটি ওয়েলসের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। দুর্গটির স্থাপত্য শৈলী এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

. কার্ডিফ ক্যাসেল

কার্ডিফ শহরে অবস্থিত এই দুর্গটি একদিকে প্রাচীন রোমান স্থাপত্য এবং অন্যদিকে আধুনিক স্থাপত্যের মিশ্রণে গড়ে উঠেছে। এটি কার্ডিফের অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ।

উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রসমূহ

. জায়ান্টস কজওয়ে

প্রাকৃতিকভাবে গঠিত ষড়ভুজাকৃতির এই পাথরের গঠন নিয়ে অনেক কিংবদন্তি রয়েছে। এটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং এখানে প্রকৃতির বৈচিত্র্য দেখে পর্যটকরা মুগ্ধ হন।

. বেলফাস্ট টাইটানিক মিউজিয়াম

এই মিউজিয়ামটি সেই স্থান যেখানে টাইটানিক জাহাজ নির্মাণ করা হয়েছিল। এখানে টাইটানিকের ইতিহাস এবং তার নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়।

. ডার্ক হেজেস

এই স্থানটি বিশেষত গেম অফ থ্রোনস-এর শুটিং লোকেশন হিসেবে বিখ্যাত। এটি প্রাকৃতিকভাবে গঠিত একটি রাস্তা, যেখানে বৃক্ষের সারি একটি গুহার মতো পথ তৈরি করেছে।

যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক শহরসমূহ

. অক্সফোর্ড ক্যামব্রিজ

অক্সফোর্ড এবং ক্যামব্রিজ শহর দুটি তাদের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিখ্যাত। এখানে অনেক পুরানো স্থাপত্য, মিউজিয়াম এবং শিক্ষার ঐতিহ্য দেখার সুযোগ রয়েছে।

. ইয়র্ক

ইয়র্ক শহরে রয়েছে মধ্যযুগীয় স্থাপত্য এবং প্রাচীনতম ক্যাথেড্রাল। এটি ইতিহাসপ্রেমী এবং ঐতিহ্য অন্বেষণে আগ্রহী পর্যটকদের জন্য আদর্শ স্থান।

. বাথ

বাথ শহরে রয়েছে রোমান যুগের বিখ্যাত স্নানাগার। এর প্রাচীন স্থাপত্য এবং হট স্প্রিংস পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা।

যুক্তরাজ্যে খাবার এবং রেস্তোরাঁ

যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের সময় এখানে বিভিন্ন ধরণের খাবারের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন। ব্রিটিশ খাবারের পাশাপাশি আপনি পাবেন ভারতীয়, চীনা, ইতালিয়ান, থাই এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক স্বাদের খাবার। এখানে কিছু বিখ্যাত ব্রিটিশ খাবার এবং রেস্তোরাঁর উল্লেখ করা হলো:

১. ফিশ অ্যান্ড চিপস

ব্রিটেনের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার হলো ফিশ অ্যান্ড চিপস। এটি সাধারণত ভাজার তেলে মুচমুচে করে ভাজা মাছের ফিলে এবং তেলেভাজার সাথে পরিবেশন করা হয়। লন্ডন, ম্যানচেস্টার, এবং স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে জনপ্রিয় ফিশ অ্যান্ড চিপস রেস্তোরাঁ রয়েছে।

২. রোস্ট ডিনার

রোস্ট ডিনার ব্রিটেনের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী খাবার, যেখানে থাকে মাংস (গরু, মুরগি, বা ভেড়া), ইয়র্কশায়ার পুডিং, ভেজিটেবলস, এবং গ্রেভি। এটি সাধারণত রবিবারে খাওয়া হয়, তাই একে “সানডে রোস্ট”ও বলা হয়।

৩. ইংলিশ ব্রেকফাস্ট

ইংলিশ ব্রেকফাস্ট এক বিশেষ প্রাতঃরাশ, যাতে থাকে টোস্ট, ডিম, বেকন, সসেজ, টমেটো, মাশরুম, এবং বেকড বিনস। লন্ডন এবং অন্যান্য প্রধান শহরে বেশ কিছু বিখ্যাত ক্যাফে এবং রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেগুলোতে এই বিশেষ ব্রেকফাস্ট পাওয়া যায়।

৪. ভারতীয় এবং বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ

যুক্তরাজ্যে ভারতীয় এবং বাংলাদেশি খাবারের অনেক রেস্তোরাঁ রয়েছে। কারি এখানে বেশ জনপ্রিয়। লন্ডনের ইস্ট এন্ড, বিশেষ করে ব্রিক লেন, কারির জন্য বিখ্যাত। এখানে আপনি বাংলাদেশি খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন।

কেনাকাটা এবং স্যুভেনির

যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের সময় কেনাকাটা এবং স্যুভেনির সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের দোকান ও বাজার থেকে আপনি স্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী স্যুভেনির কিনতে পারেন। লন্ডন, ম্যানচেস্টার, এডিনবার্গ, এবং অন্যান্য বড় শহরে শপিং করার জন্য অনেক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে।

১. হারডস (Harrods)

লন্ডনের হারডস যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বিখ্যাত ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোর মধ্যে একটি। এটি বিলাসবহুল পণ্য, পোশাক, স্যুভেনির এবং ফুড হলের জন্য প্রসিদ্ধ। এখান থেকে আপনি বিলাসবহুল পণ্যের পাশাপাশি কিছু ব্রিটিশ স্মারকও সংগ্রহ করতে পারেন।

২. অক্সফোর্ড স্ট্রিট

লন্ডনের অক্সফোর্ড স্ট্রিট হল ইউরোপের অন্যতম প্রধান কেনাকাটা কেন্দ্র। এখানে আছে বড় বড় ব্র্যান্ডেড দোকান এবং বিখ্যাত ব্রিটিশ চেইন স্টোর যেমন প্রাইমার্ক, ম্যানগো, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার, এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড।

৩. ক্যামডেন মার্কেট

লন্ডনের ক্যামডেন মার্কেট হ্যান্ডমেড পণ্য, পোশাক, জুয়েলারি, এবং স্থানীয় শিল্পকর্মের জন্য জনপ্রিয়। এটি তরুণ পর্যটকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় কেনাকাটার স্থান।

৪. স্কটল্যান্ডের স্যুভেনির

স্কটল্যান্ড থেকে আপনি ট্র্যাডিশনাল স্কটিশ কিল্ট, হ্যারিস টুইড, এবং স্কটল্যান্ডের হুইস্কি সংগ্রহ করতে পারেন। এডিনবার্গ এবং গ্লাসগো শহরে স্কটিশ স্যুভেনিরের অনেক দোকান রয়েছে।

৫. উপহারের জন্য চা এবং চায়ের সেট

ব্রিটিশ চা এবং সুন্দর চায়ের সেট স্যুভেনির হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। যুক্তরাজ্যে চায়ের ঐতিহ্য অনেক পুরনো, এবং এখান থেকে বিশেষ চা এবং চায়ের সেট কিনে উপহার হিসেবে নিয়ে আসা যেতে পারে।

৬. হ্যারি পটার মেমোরাবিলিয়া

যুক্তরাজ্যের ওয়ার্নার ব্রোস স্টুডিও ট্যুর এবং কিঙ্গস ক্রস স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ৯¾ থেকে হ্যারি পটারের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন স্মারক পাওয়া যায়। হ্যারি পটার প্রেমীদের জন্য এটি অবশ্যই সেরা কেনাকাটা কেন্দ্র।

যুক্তরাজ্যে নিরাপত্তা এবং ভ্রমণ সতর্কতা

যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের সময় নিরাপত্তা এবং সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন নিয়ম-কানুন এবং স্থানীয় আচরণের সাথে পরিচিত থাকলে ভ্রমণকালে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা এবং ভ্রমণ সতর্কতা তুলে ধরা হলো:

. নাগরিকত্ব ভিসার নিয়মাবলী

  • যুক্তরাজ্যে প্রবেশের জন্য বৈধ ভিসা থাকা আবশ্যক। ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আপনার পর্যাপ্ত নথি প্রস্তুত রাখতে হবে।
  • ছাত্র, কর্মসংস্থান, বা পর্যটক ভিসার আলাদা আলাদা নিয়ম রয়েছে। তাই, ভিসা প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে তবেই আবেদন করুন।

. জরুরি সেবা নম্বর

  • যুক্তরাজ্যে জরুরি সেবা নম্বর হল ৯৯৯। এটি পুলিশের সাহায্য, অ্যাম্বুলেন্স, বা অগ্নিনির্বাপক সেবা প্রয়োজন হলে ব্যবহার করা হয়।
  • আপনি যদি কম গুরুতর সমস্যা সমাধানের জন্য পুলিশ সেবা চান, তবে ১০১ নম্বরে ফোন করতে পারেন।

. পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সুরক্ষা

  • পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চুরি বা পকেটমারি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই গুরুত্বপূর্ণ নথি ও মূল্যবান সামগ্রী সতর্কতার সাথে বহন করুন।
  • রাতের বেলায় ট্রেন বা বাসের বদলে ট্যাক্সি ব্যবহার করা নিরাপদ হতে পারে।

. মাদক এবং মদ্যপান সম্পর্কিত নিয়মাবলী

  • যুক্তরাজ্যে মাদকের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই মাদকদ্রব্য সঙ্গে রাখা বা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
  • পাবলিক স্থানে মদ্যপান সাধারণত নিষিদ্ধ। আপনি যেখানে আছেন, সেই অঞ্চলের নিয়মাবলী সম্পর্কে সচেতন থাকুন।

. রাস্তায় সতর্কতা

  • যুক্তরাজ্যে ড্রাইভিং ডান পাশ থেকে করা হয়, যা অনেক দেশের তুলনায় আলাদা। তাই রাস্তা পারাপারের সময় সতর্ক থাকুন এবং শুধুমাত্র নির্ধারিত স্থান থেকে রাস্তা পার হন।
  • সাইকেল চালানোর জন্য নির্দিষ্ট পথ আছে, এবং সাইক্লিস্টদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা অনুসরণ করতে হয়।

. প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং আবহাওয়া সতর্কতা

  • যুক্তরাজ্যে সাধারণত প্রাকৃতিক বিপর্যয় খুব কম ঘটে। তবে, শীতকালে তুষারপাতের কারণে রাস্তায় ফিচিল হতে পারে।
  • আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখুন এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন।

. ব্যক্তিগত নিরাপত্তা

  • ব্যস্ত স্থানে আপনার পার্স, মোবাইল, এবং মূল্যবান সামগ্রী সাবধানে রাখুন। পাবলিক জায়গায় অপরিচিত কারো সাথে খুব বেশি মেলামেশা থেকে বিরত থাকুন।
  • রাতে একা হেঁটে চলাফেরা করার সময় সচেতন থাকুন এবং আলোকিত রাস্তায় চলাচল করুন।

. অনলাইন নিরাপত্তা এবং স্ক্যাম প্রতিরোধ

  • অপরিচিত ইমেইল, কল বা টেক্সট থেকে সতর্ক থাকুন। ব্যাঙ্কিং বা ব্যক্তিগত তথ্য সম্পর্কে কোন সন্দেহজনক ব্যক্তির সাথে তথ্য শেয়ার করবেন না।
  • ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় বিশেষ করে সংবেদনশীল তথ্য ট্রান্সফার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।

. বিমা পলিসি নেওয়া

  • যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের জন্য ভ্রমণ বিমা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ঘটনা, চিকিৎসা সহায়তা, এবং অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে বিমা একটি বড় সুরক্ষা হতে পারে।

১০. কোভিড১৯ সম্পর্কিত নিয়মাবলী

  • যুক্তরাজ্যে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি এবং সীমান্ত নিয়ম প্রায়ই পরিবর্তন হয়। তাই আপনার ভ্রমণের আগে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ বা সরকারের ওয়েবসাইট থেকে আপডেট জানুন।

যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ নিঃসন্দেহে একটি অনন্য অভিজ্ঞতা। এখানে ভ্রমণ করলে একই সাথে আপনি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এবং আধুনিক জীবনধারার এক অপরূপ সংমিশ্রণ দেখতে পারবেন। লন্ডনের ব্যস্ত রাস্তা থেকে শুরু করে স্কটল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ওয়েলস ও নর্দান আয়ারল্যান্ডের ঐতিহাসিক স্থানগুলো আপনাকে এক নতুন অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে।

যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণ যেমন বিগ বেন, বাকিংহাম প্যালেস, ব্রিটিশ মিউজিয়াম, স্কটল্যান্ডের হাইল্যান্ডস এবং অন্যান্য বিখ্যাত স্থানগুলো ঘুরে দেখার পাশাপাশি এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার, কেনাকাটা, এবং স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারা আনন্দের বিষয়।

এই দেশ ভ্রমণে নিরাপত্তা, আইন, এবং স্থানীয় রীতিনীতি সম্পর্কে সচেতন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাতায়াত, আবাসন, খাবার, এবং কেনাকাটা সম্পর্কে পরিকল্পনা করলে ভ্রমণ আরও সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে। ভ্রমণের সময় সতর্কতা মেনে চলা এবং প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে যাওয়া আপনার ভ্রমণকে সফল ও স্মরণীয় করে তুলবে।

যুক্তরাজ্যের সৌন্দর্য, সংস্কৃতি, এবং মানুষের আতিথেয়তা সব মিলিয়ে আপনার ভ্রমণকে এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতায় পরিণত করবে। আশা করি, এই ভ্রমণ গাইড আপনার যাত্রায় সহায়ক হবে এবং আপনাকে একটি সুরক্ষিত ও আনন্দময় ভ্রমণ উপহার দেবে।

Check Also

Romania

ইউরোপের গোপন রত্ন রোমানিয়া: একটি অনন্ত রহস্যময় যাত্রা!

ভ্রমণ পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি রোমানিয়া ইউরোপের অন্যতম সুন্দর এবং ঐতিহাসিক সমৃদ্ধ দেশ। ট্রান্সিলভানিয়া, ব্রান ক্যাসেল …

Croatia

এড্রিয়াটিক সাগরের রত্ন ক্রোয়েশিয়া: সংস্কৃতি, প্রকৃতি, এবং অসাধারণ অভিজ্ঞতা

ক্রোয়েশিয়া, সুন্দর সমুদ্রসৈকত, ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণস্থল। এখানে রয়েছে …