ওয়েবসাইট কতৃপক্ষ বা কর্মচারীদের মাধ্যমে:
কিছু কিছু বিয়ের সাইটের কত্রিপক্ষ বা বিক্রয়কর্মীরা নানান মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে, প্রলভল দেখিয়ে বা ভুল বুঝিয়ে আপনার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। তাদের অবলম্বন করা কিছু পদ্ধতি নিচে দেয়া হলো।
1) মিথ্যে তথ্য দিয়ে আপনার কাছে সদস্যপদ বিক্রি করতে পারে।
মনে রাখবেন সকল বিয়ের সাইটেই বিনা মূল্যে প্রোফাইল তৈরী এবং সংরক্ষনের সুযোগ রয়েছে. এক্ষেত্রে আপনি অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে না পারলেও প্রিমিয়াম প্রোফাইল হোল্ডাররা চাইলেই আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে. এক্ষেত্রে কোনো সাইটের বিক্রয়কর্মী যদি আপনাকে বোঝাতে চায় যে তাদের ওয়েবসাইটে একাউন্ট করলে প্রিমিয়াম মেম্বার হওয়া বাধ্যতামূলক তাহলে ভাববেন ওই বিক্রয়কর্মী বিক্রি বাড়ানোর জন্য আপনাকে মিথ্যে বলছে.
2) ভুয়ো প্রোফাইল দেখিয়ে আপনাকে সদস্যপদ বিক্রি করতে পারে।
সুরজিত (পরিবর্তিত নাম) নামের কলকাতার এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী স্থানীয় একটি বিয়ের বিয়ের সাইটে প্রোফাইল খুলেছিলেন. তার অভিযোগ বিয়ের সাইটের বিক্রয় কর্মীরা দিনে একাধিকবার তার কাছে সদস্যপদ বিক্রির জন্য কল করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে এক অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নেয়. সুরোজিতকে বলা হয় তার প্রোফাইল বেশ কয়েকজন পাত্রী পছন্দ করেছে. তারা যোগযোগ করতে পারছে না কারণ সুরজিত এখনো ওয়েবসাইটের প্রিমিয়াম প্ল্যান কেনেন নি. সুরজিত বিষয়টিকে যাচাই করার জন্য উক্ত পাত্রীদের প্রোফাইল আইডি নিয়ে ওয়েবসাইটে সার্চ করে দেখলেন এবং পাত্রীদের বায়োডাটা দেখে তিনি যোগাযোগ করতে রাজি হয়ে গেলেন. কিন্তু সদস্যপদ কিনে যখন ওই পাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেন তখন দেখলেন তাদের কেউ কোনো উত্তর করছে না. ওই প্রোফাইল গুলো আসল কিনা তা যাচাই করার জন্য সুরজিত বিভিন্ন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন লিংকডইন, ফেইসবুক ইত্যাদিতে খুঁজে দেখলেন ওই সকল নাম এবং ছবির মানুষ গুলো সত্যি আছে কিন্তু তারা সবাই আসলে ওই বিয়ের সাইটের বিক্রয়কর্মী আর তাদের মধ্যে কেউ বিবাহিত তো কেউ এনগ্যাজেড . তার মানে ওই বিক্রয়কর্মীরা নিজেদের নাম আর ফটো দিয়ে প্রোফাইল খুলে মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে সদস্যপদ বিক্রি করে থাকে.
3) “ভিআইপি সার্ভিস” বা, “এসিস্টেট সার্ভিস” এর নামে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিতে পারে:
বিয়ের সাইটগুলো সাধারনত দুই ধরনের সেবা বিক্রি করে থাকে: সেল্ফ সার্ভিস আর এসিস্ট্যাট সার্ভিস. সেল্ফ সার্ভিস এর চেয়ে এসিস্ট্যাট সার্ভিস এর দাম 7 থেকে 10 গুন বেশি হয়ে থাকে. আপনি সেল্ফ সার্ভিস কিনতে চাইলেও বিক্রয়কর্মী আপনাকে এসিস্ট্যাট সার্ভিস বিক্রির চেষ্টার কোনো ত্রুটি করবে না. মনে রাখবেন আপনার জীবন সঙ্গী কে হবে সেই সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে. এক্ষেত্রে আপনার এজেন্ট (Matrimonial Assistant) তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না. উপরন্তু এমন অভিযোগ আছে যে এজেন্টরা (Matrimonial Assistants) অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়জনীয় প্রশ্ন করে পাত্র/পাত্রীকে বিরক্ত করে তোলে. আবার অনেক পাত্র/পাত্রী নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য কোনো তৃতীয় পক্ষের হাতে তুলে দিতে দ্বিধা বোধ করে. তাই সেল্ফ সার্ভিস নিয়ে নিজেই যোগাযোগ করুন.
4) বিয়ে ঠিক করে দেয়ার ভুয়ো নিশ্চয়তা দিতে পারে।
মনে রাখবেন কোনো ম্যাট্রিমনি ওয়েবসাইট বিয়ে ঠিক করে দেয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারে না. কারণ বিয়ে ঠিক হওয়া বা না হওয়াটা তাদের হাতে নয় এটা সম্পূর্ণ পাত্র এবং পাত্রী পক্ষের হাতে. কিন্তু কোনো বিক্রয় কর্মী যদি আপনাকে বলে যে “এই প্যাকেজ টি নিলে আপনার নিয়ে ঠিক হওয়া কনফার্ম কারণ এই প্যাকেজ আগে যারা নিয়েছে তাদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে.” – তাহলে ভাববেন এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা.
5) আপনার ব্যক্তিগত তথ্য অন্যের কাছে বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারে।
আজকের দিনে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যভান্ডার হলো বিপণন কর্মীদের কাছে সোনার খনির মতো. আপনার নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল আইডি ইত্যাদি কারো হস্তগত হলে আপনাকে তারা খুব সহজেই তাদের পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে. তাই সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি কোনো সাময়িক ইমেইল আইডি, ফোন নম্বর আপনার ম্যাট্রিমনি সাইটে ব্যবহার করেন. আর ম্যাট্রিমনির প্রয়জন ফুরিয়ে গেলে অবশ্যই আপনার প্রফাইলটি ডিলিট করে দিন.
ওয়েবসাইটের অন্য সদস্যের মাধ্যমে:
একটি ম্যাট্রিমনি সাইটে লাখ লাখ পাত্র/পাত্রি বা সদস্য থাকতে পারে। তাদের মধ্যে কেউ বিয়ের উদ্দেশ্যে কেউ বা আবার অন্য কোন মহান (!) উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রফাইল পরিচালনা করছে। প্রতারক ব্যক্তি বা চক্র সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে থাকেঃ
1) অর্থ ধার চাওয়া
অনেক ম্যাট্রিমোনি ওয়েবসাইট ব্যাবহারকারী এমন অভিযোগ করে যে সদ্য পরিচিত মেয়েটি বা ছেলেটি বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে টাকা ধার নিয়ে আর ফেরত দে নি. এই বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে. কোনো অবস্থাতেই ম্যাট্রিমনিতে নতুন পরিচিত কারো সাথে টাকা পয়সার লেনদেন করা যাবে না.
2) ব্যায়বহুল স্থানে দেখা করতে চাওয়া
ম্যাট্রিমনি সাইট থেকে আলাপ হওয়া কারোর সাথে প্রথম বার দেখা করার আদর্শ স্থান পারে কোনো কফি শপ. মনে রাখবেন উক্ত পাত্র বা পাত্রীর সাথে আপনার বিয়ে হওয়া এমনকি দ্বিতীয় বার দেখা হবারও কোনো নিশ্চয়তা নেই. কাজেই নিজের পকেট বুঝে স্থান নির্বাচন করুন.
এক্ষেত্রে ছেলেদের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পাওয়া যায় যে ম্যাট্রিমনি তে এমন কিছু পাত্রী আছে যারা ব্যবহুল জায়গায় দেখা করার জন্য চাপ দেয় আর একবার দেখা করার পরে আর যোগাযোগ করে না. সুতরাং … সাধু সাবধান! আপনার প্রথম সাক্ষাৎটি হোক সাদামাটা.
3) দামী গিফট
আবার এমনও হতে পারে আপনার নতুন সঙ্গীকে আবেগের বশে অনেক দামি উপহার দিলেন কিন্তু তারপর আপনার সঙ্গী আর আপনার সাথে যোগাযোগ রাখলো না। তাই যতদিন না একে অপরের আস্থাভাজন হয়ে উঠছেন ততদিন অনাবশ্যক উপহার দেয়া নেয়া থেকে বিরত থাকুন যাতে পরে এটি অনুসুচনার কারন হয়ে না দাড়ায়।
4) ভুয়ো যোগ্যতা/পেশা
ম্যাট্রিমনি ওয়েবসাইটেই শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, উপার্জন ইত্যাদি ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা রয়েছে. আপনার কাউকে পছন্দ হলে এবং তার উক্ত তথ্যগুলো ভেরিফাইড না থাকলে ভেরিফিকেশন করিয়ে নিতে অনুরোধ করতে পারেন.
তবে আগ বাড়িয়ে কারো প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করবেন না. তাতে ওপর ব্যাক্তি অসম্মানিত বোধ করতে পারেন. মনে অপরকে সম্মান করলেই কেবল নিজের সম্মান দ্বাবি করা যায়.
আর একটি বিষয়, কখনো “কতো টাকা উপার্জন করে?” এই বিষয়টিকে জীবনসঙ্গী বাছাইয়ের প্রধান মানদণ্ড বানাবেন না.
5) ভুয়ো নাম পরিচয়
বেশিরভাগ ওয়েবসাইটেই আইডি ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক নয়. এমন্তাবস্থায় কেউ নাম, পদবী, পেশা, ধর্ম ইত্যাদি পাল্টে ভুয়ো প্রোফাইল খুলে আপনার সাথে প্রতারণা করতে পারে. তাই প্রোফাইলের পাশে “আইডি ভেরিফাইড” ব্যাজ দেখে নিশ্চিত হয়ে নেবেন. যদি আইডি ভেরিফাইড না হয় এবং আপনার সন্দেহ হয় তাহলে অবশ্যই সাইটে আইডি ভেরিফিকেশন করে নিতে বলবেন.
6) ক্ষমতার অপব্যবহার
আমাদের সমাজে যেহেতু সরকারি চাকুরে বা উচ্চ আয়ের ছেলেদের চাহিদা বেশি তাই এইরূপ পাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ তার পেশাগত অবস্থান কাজে লাগিয়ে আপনার মতো অনেক পাত্রীর সাথে যোগাযোগ রেখে তার শারীরিক বা অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে পারে.
মনে রাখবেন সরকারি চাকুরে বা সর্বোচ্চ আয়ের ছেলেটিই সবচেয়ে ভালো ছেলে তার কোনো মানে নেই. “লোভে পাপ; পাপে মৃত্যু” – এই আপ্তবাক্য আমাদের ভুলে গেলে চলবে না.
7) স্ক্যাম প্রোফাইল
এটি অবশ্য ভারতে খুব বেশি মাত্রায় দেখা না গেলেও উল্লেখযোগ্য ভাবেই আছে. ম্যাট্রিমনি সাইটে অনেক সময় বিদেশ থেকে বা দেশে বসে স্কামাররা সম্পূর্ণ ভুয়ো প্রোফাইল খুলে আপনার থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে. এটি শুধু ম্যাট্রিমোনি সাইটগুলোতেই নয় বরং সমস্ত প্রকার অ্যাপগুলোই স্কামার দের প্রিয় টার্গেট.
এক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে স্কামার বাংলায় কথা বলতে পারবে না. আবার স্কামারদের একটি বহুল ব্যবহৃত গল্প আপনাকে বলতে পারে. সেটি হলো অনেকটা এই রকম:
“স্কামার এর মা/বাবা বিপুল সম্পদের মালিক ছিলেন. তিনি দুঃস্থ মানুষের সেবা করতে কোনো এক গরিব দেশে গিয়েছেন. সেখানে তার বিপুল সম্পদ রেখে তিনি মারা গেছেন. এখন স্কামার তার পিতা/মাতার সন্তান হিসেবে এই বিপুল সম্পদ সংগ্রহ করতে উক্ত গরিব দেশে পারি দিয়ে ওই সম্পদ হস্তগতও করে ফেলেছেন. কিন্তু নগদ টাকার অভাবে সেই দেশে কোনো এক ফ্যাসাদে পরে গেছেন. তাই আপনাকে কিছু নগদ টাকা পাঠিয়ে তাকে স্বদেশে আসতে সাহায্য করতে হবে. তারপর তাকে বিয়ে করে আপনি ওই বিপুল সম্পদের সহ মালিক বনে যাবেন.”
8) অন্য প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী
এক্ষেত্রে প্রতিযোগী কোন ছোট আকারের স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বড় সাইটগুলোতে ভুয়ো প্রফাইল বানিয়ে নিরীহ পাত্র/পাত্রির ফোন নাম্বার যোগার করে তাদের কাছে নিম্ন মানের পরিষেবা বিক্রি বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে পারে।
যে সকল প্রোফাইল এড়িয়ে যাবেন:
1) যদি কোন পাত্রী বিয়ের পরে “চাকরিও করবো না ঘরের কাজও করবো না” এইরূপ শর্ত দেয়।
2) আপনার সামর্থ্যের বাইরে অতিরিক্ত আর্থিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রদর্শন করলে
3) অতিমাত্রায় নারীবাদী বা পুরুষবাদী ব্যক্তি