worms during pregnancy

গর্ভাবস্থায় কৃমি (Worms during Pregnancy) দূর করার ঘরোয়া উপায়

গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এই সময় শরীরে কৃমি (Worms ) উপস্থিতি মারাত্মক হতে পারে, কারণ এটি মায়ের এবং গর্ভস্থ সন্তানের উভয়ের পুষ্টির ঘাটতি তৈরি করতে পারে। কৃমি পেটে খাদ্য থেকে পুষ্টি শোষণ করে শরীরকে দুর্বল করে তোলে। গর্ভবতী নারীদের জন্য ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, কারণ কিছু ওষুধ গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করতে পারে। তাই ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমে কৃমি দূর করা অনেক সময় নিরাপদ হতে পারে।

কৃমি কী এবং এটি কীভাবে হয়?

কৃমি একধরনের পরজীবী, যা মানুষের অন্ত্রে বাস করে এবং খাবার থেকে পুষ্টি শোষণ করে। গর্ভাবস্থায় কৃমির উপস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে, কারণ মায়ের শরীরে ইতিমধ্যে বাড়তি পুষ্টির চাহিদা থাকে।

কৃমি সংক্রমণের লক্ষণ

  • পেটব্যথা
  • খাবারে অরুচি বা বেশি খিদে
  • ওজন হ্রাস
  • অ্যানিমিয়া
  • ক্লান্তি
  • মলদ্বারে চুলকানি
  • হজমে সমস্যা

কৃমি কীভাবে ছড়ায়?

  1. দূষিত পানি বা খাবার খাওয়ার মাধ্যমে।
  2. অপরিচ্ছন্ন হাত-মুখ স্পর্শের ফলে।
  3. মাটি থেকে কৃমির ডিম প্রবেশ করার মাধ্যমে।

গর্ভাবস্থায় কৃমি প্রতিরোধ দূর করার ঘরোয়া উপায়

গর্ভবতী নারীদের জন্য ঘরোয়া প্রতিকার অনেক সময় কার্যকর এবং নিরাপদ হতে পারে।

১. রসুনের ব্যবহার

রসুন প্রাকৃতিক কৃমিনাশক হিসেবে পরিচিত।

উপায়:

  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১-২টি রসুনের কোয়া চিবিয়ে খান।
  • অথবা রসুন গুঁড়ো দুধে মিশিয়ে পান করুন।

সতর্কতা: অতিরিক্ত রসুন খেলে পেটব্যথা হতে পারে।

২. কাঁচা পেঁপে পেঁপে বীজ

কাঁচা পেঁপে এর বীজ কৃমি দূর করতে বিশেষ কার্যকর।

উপায়:

  • ১ টেবিল চামচ পেঁপের বীজ গুঁড়ো করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • কাঁচা পেঁপে বাটা এবং মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

সতর্কতা: পরিমাণে বেশি খাওয়া গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

৩. হলুদ এবং দুধ

হলুদে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক গুণ রয়েছে।

উপায়:

  • এক গ্লাস গরম দুধে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে রাতে শোবার আগে পান করুন।
  • নিয়মিত এই পানীয় সেবনে কৃমি ধীরে ধীরে কমে যায়।

৪. নারকেলের তেল কাঁচা নারকেল

নারকেল প্রাকৃতিকভাবে অন্ত্রকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

উপায়:

  • প্রতিদিন সকালে ১ চা চামচ কাঁচা নারকেলের তেল খেতে পারেন।
  • অথবা কাঁচা নারকেলের টুকরো চিবিয়ে খান।

৫. দারুচিনি চা

দারুচিনিতে অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা কৃমি দূর করতে সহায়ক।

উপায়:

  • এক কাপ পানিতে দারুচিনি সেদ্ধ করে চা বানিয়ে পান করুন।
  • এটি দিনে ১-২ বার সেবন করুন।

৬. লেবুর রস এবং মধু

লেবুর অম্লীয় প্রভাব কৃমির জন্য প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করে।

উপায়:

  • এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চা চামচ লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • প্রতিদিন সকালে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

৭. মেথি বীজ

মেথি বীজ কৃমি প্রতিরোধে কার্যকর।

উপায়:

  • এক চা চামচ মেথি বীজ পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি পান করুন।
  • এটি হজমশক্তি বাড়ায় এবং কৃমি দূর করে।

৮. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার অন্ত্রের পিএইচ ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং কৃমি ধ্বংস করে।

উপায়:

  • এক গ্লাস পানিতে ২ চা চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন।
  • প্রতিদিন খেলে উপকার পাবেন।

কিছু প্রাকৃতিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

গর্ভাবস্থায় কৃমি প্রতিরোধে সঠিক অভ্যাস তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।

১. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন

  • খাবার খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
  • নখ ছোট রাখুন এবং নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

২. পানি ফিল্টার করে পান করুন

  • বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
  • মাটি ও দূষিত পানি এড়িয়ে চলুন।

৩. সবজি ফলমূল ভালোভাবে ধুয়ে নিন

  • কাঁচা শাকসবজি ও ফল ভালোভাবে ধুয়ে রান্না করুন।
  • রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলুন।

গর্ভাবস্থায় ঘরোয়া উপায় ব্যবহারে সতর্কতা

  • গর্ভাবস্থায় কোনও ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • কিছু উপাদান বেশি খাওয়া গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • যদি ঘরোয়া প্রতিকার কাজ না করে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।

চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার সময়

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি:

  1. ঘরোয়া প্রতিকার কাজে না লাগলে।
  2. তীব্র পেটব্যথা বা রক্তাক্ত মল হলে।
  3. অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অ্যানিমিয়া দেখা দিলে।

গর্ভাবস্থায় কৃমি থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া উপায় অনেক সময় নিরাপদ ও কার্যকর হতে পারে। তবে সবসময়ই সতর্কতার সঙ্গে এগুলি ব্যবহার করা উচিত। গর্ভবতী নারীদের শরীর বিশেষ যত্ন দাবি করে, তাই কোনও অসুবিধা হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

error: Content is protected !!
Scroll to Top