প্রসব-পরবর্তী প্রস্রাবের সংক্রমণ (UTI) একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেক নতুন মায়ের ক্ষেত্রে দেখা দেয়। এই সমস্যাটি সংক্রমণ, প্রসবকালীন জখম, প্রস্রাবধারণ করার অসুবিধা, অথবা দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের কারণে হতে পারে। যদিও এটি বেশ অস্বস্তিকর, কিছু ঘরোয়া প্রতিকার এবং প্রাকৃতিক উপায় অনুসরণ করলে এই সংক্রমণ প্রশমিত হতে পারে।
প্রসব–পরবর্তী প্রস্রাবের সংক্রমণ: কারণ ও লক্ষণ
প্রধান কারণ
- ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি
প্রসবের সময় বা তার পরে, মূত্রনালীর সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রসবের সময় ফোলিক্যাথেটার ব্যবহার করা হলে এই ঝুঁকি বাড়তে পারে। - দুর্বল ইমিউন সিস্টেম
প্রসবের পরে শরীরের ইমিউন সিস্টেম কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে, যা সংক্রমণের প্রবণতা বাড়ায়। - অপর্যাপ্ত হাইজিন
প্রসবের পরে যোনি ও মূত্রনালীর সঠিক যত্ন না নিলে ব্যাকটেরিয়া সহজেই সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
সাধারণ লক্ষণ
- প্রস্রাবে জ্বালা বা ব্যথা
- ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন অনুভব করা
- প্রস্রাবে দুর্গন্ধ বা গাঢ় রঙ
- তলপেটে ব্যথা
- কখনো কখনো জ্বর ও শীতল অনুভূতি
ঘরোয়া প্রতিকার
১. জল পান করুন বেশি করে
প্রস্রাবের সংক্রমণ কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো পর্যাপ্ত জল পান করা। জল ব্যাকটেরিয়া ধুয়ে বের করে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।
- প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস জল পান করুন।
- প্রসব-পরবর্তী মায়েরা গরম জল বা ভেষজ চা পান করতেও পারেন।
২. ক্র্যানবেরি জুস
ক্র্যানবেরি জুস প্রস্রাবের সংক্রমণের প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। এটি মূত্রনালীর প্রাচীরে ব্যাকটেরিয়া আটকাতে সাহায্য করে।
- চিনি ছাড়া তাজা ক্র্যানবেরি জুস পান করুন।
- নিয়মিত এক বা দুই গ্লাস জুস পান করলে উপকার পাওয়া যায়।
৩. দই বা প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার
দই এবং প্রোবায়োটিক খাবার হজম ব্যবস্থাকে সুস্থ রাখে এবং শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
- প্রতিদিন এক বাটি দই খান।
- কিমচি, মিসো স্যুপ, এবং প্রোবায়োটিক পানীয়ও খেতে পারেন।
৪. তুলসী পাতা
তুলসী একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি।
- ১০-১২টি তুলসী পাতা ভালো করে ধুয়ে গরম জলে সেদ্ধ করুন।
- এই চা দিনে দু’বার পান করুন।
৫. আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগারে থাকা এসিটিক এসিড শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া দূর করে।
- এক চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক গ্লাস গরম জলে মিশিয়ে পান করুন।
- প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এটি পান করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৬. রসুন
রসুনের মধ্যে অ্যালিসিন নামক যৌগটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।
- প্রতিদিন এক বা দুই কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খান।
- চাইলে গরম দুধের সঙ্গে রসুন মিশিয়েও পান করতে পারেন।
৭. মেথি বীজের জল
মেথি বীজ প্রস্রাবের সংক্রমণ নিরাময়ে প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে কাজ করে।
- এক চামচ মেথি বীজ এক গ্লাস জলে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন।
- সকালে সেই জল ছেঁকে পান করুন।
৮. নারকেল তেল
নারকেল তেলের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য প্রস্রাবের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
- দিনে এক বা দুই চামচ কাঁচা নারকেল তেল খান।
- চাইলে গরম জলে এক চামচ নারকেল তেল মিশিয়েও পান করতে পারেন।
প্রতিরোধের উপায়
১. প্রসব-পরবর্তী স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা
- যোনি ও মূত্রনালী পরিষ্কার রাখতে গরম জলে ধোয়ার অভ্যাস করুন।
- সুতির আরামদায়ক অন্তর্বাস ব্যবহার করুন।
২. প্রস্রাব ধরে রাখবেন না
- দীর্ঘ সময় প্রস্রাব ধরে রাখলে মূত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়া জমতে পারে।
- প্রস্রাব করার তাগিদ অনুভব হলেই দ্রুত বাথরুমে যান।
৩. সঠিক খাবার নির্বাচন
- প্রসবের পর পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল, এবং আঁশযুক্ত খাবার খান।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার সময়
যদি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন:
- উচ্চ জ্বর (১০১°F বা তার বেশি)
- প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি
- তীব্র তলপেট ব্যথা
- অস্বাভাবিক ক্লান্তি
প্রসব-পরবর্তী প্রস্রাবের সংক্রমণ একটি অস্বস্তিকর কিন্তু চিকিৎসাযোগ্য অবস্থা। ঘরোয়া প্রতিকারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে যদি সমস্যার তীব্রতা বেড়ে যায়, তাহলে অবিলম্বে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।