stomach worms in adults

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পেটের কৃমি দূর (Stomach Worms in Adults) করার প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়

পেটের কৃমি, যা সাধারণভাবে স্টম্যাক ওয়ার্মস (Stomach Worms) নামে পরিচিত, মানুষের অন্ত্রের মধ্যে একধরনের প্যারাসাইটিক পরজীবী হিসেবে বাস করে। এই কৃমিগুলি অন্ত্রের মধ্যে খাদ্য গ্রহণ করে জীবন ধারণ করে এবং মানুষের শরীরে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে পেটের কৃমির সমস্যা একটি সাধারণ ঘটনা। এই কৃমিগুলি শুধুমাত্র শিশুরা আক্রান্ত হয় না, প্রাপ্তবয়স্করাও এতে আক্রান্ত হতে পারে।

পেটের কৃমি: কী এবং কেন?

পেটের কৃমি কী?

পেটের কৃমি এমন এক ধরনের পরজীবী যা মানুষের অন্ত্রে বাস করে এবং তার পুষ্টির জন্য মানুষের খাবার খায়। এগুলি প্রায়ই একাধিক ধরনের হতে পারে, যেমন:

  • এস্কারিস লুমব্রিকোইডেস (Ascaris lumbricoides): এগুলি সর্বাধিক পরিচিত কৃমি, যা মানুষের অন্ত্রে বসবাস করে।
  • টেনিয়া সোলিয়াম (Taenia solium): এগুলি মাংসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং অন্ত্রে বৃদ্ধি পায়।
  • হুকওয়ার্মস (Hookworms): এটি ত্বক অথবা শরীরে অন্য কোনো পথে প্রবেশ করে এবং অন্ত্রে বসবাস করে।
  • ট্রিচুরিস ট্রিচুরিয়া (Trichuris trichiura): এই কৃমিগুলি সাধারণত বড় অন্ত্রে বাস করে এবং মলের মাধ্যমে শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসে।

পেটের কৃমির কারণ

পেটের কৃমির মূল কারণ হল ইনফেকশন যা দূষিত খাবার, জল বা পরিবেশের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। কৃমির প্রজনন প্রক্রিয়া সাধারণত মলের মাধ্যমে ঘটে, এবং এই কারণে অপরিষ্কার পরিবেশে বাস করা বা ভালোভাবে হাত ধোয়া না হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

পেটের কৃমি সংক্রমণের অন্যতম প্রধান কারণসমূহ হলো:

  • অপরিষ্কার খাবার: ভালোভাবে ধোয়া না হওয়া শাকসবজি, ফলমূল, কিংবা অপরিষ্কার খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে কৃমি শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
  • দূষিত পানি: অপবিত্র পানির মাধ্যমে কৃমি সংক্রমণ হতে পারে।
  • অপরিষ্কার পরিবেশ: বিশেষ করে যেখানে শৌচালয় বা বাথরুম পরিষ্কার রাখা হয় না, সেখানে কৃমির সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
  • অন্যান্য পিপঁড়ে বা ইনফেকটেড পোকামাকড়: কৃমির ডিম শরীরে প্রবেশ করতে পারে, বিশেষ করে বাড়ির বাইরের পোকামাকড়ের মাধ্যমে।

পেটের কৃমির লক্ষণ

পেটের কৃমি অনেক সময় লক্ষণহীন থাকে, তবে সাধারণত কিছু প্রকাশিত লক্ষণ রয়েছে যা নির্দেশ করে যে আপনি কৃমি দ্বারা আক্রান্ত। এই লক্ষণগুলির মধ্যে কিছু হল:

  1. পেট ব্যথা অস্বস্তি: বিশেষ করে পেটের উপরের দিকে বা নাভির চারপাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  2. অস্বাভাবিক খাদ্যাভাস: খাবারের প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহ বা আগ্রহের অভাব, বিশেষত মিষ্টির প্রতি।
  3. অতিরিক্ত পেট ফুলানো: কৃমি অন্ত্রে বাস করার ফলে পেট ফুলে যেতে পারে এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
  4. বমি বা মলত্যাগের সমস্যাগুলি: বিশেষ করে যদি মলের সঙ্গে রক্ত মিশে আসে অথবা বেশী তরলতা থাকে।
  5. শক্তিশালী গ্যাস: অন্ত্রে কৃমির কারণে গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে, যার ফলে অস্বস্তি বা বুক জ্বালা হতে পারে।
  6. শক্তিশালী অ্যানিমিয়া: কৃমি খাদ্য গ্রহণ করে এবং শরীর থেকে পুষ্টি শোষণ করে, ফলে শরীরে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া হতে পারে।
  7. শরীরের দুর্বলতা ক্লান্তি: শরীরে পুষ্টির অভাব হলে ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।

পেটের কৃমির জন্য ঘরোয়া প্রতিকার

পেটের কৃমির চিকিৎসায় কিছু সাধারণ ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যা অনেক মানুষের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে, এই প্রতিকারগুলি কোনওভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য একজন যোগ্য ডাক্তার বা পুষ্টিবিদকে পরামর্শ করতে হবে।

. হলুদ মধু

হলুদ একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবে কাজ করে যা পেটের কৃমি নির্মূল করতে সহায়ক হতে পারে। এটি অন্ত্রে কোনো প্রকার সংক্রমণ বা পরজীবী দূর করতে সাহায্য করে।

ব্যবহার:

  • ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান করুন।
  • এটি অন্ত্রে পেটের কৃমি দূর করতে সাহায্য করতে পারে।

. আলু

আলুতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা পেটের কৃমি দূর করার জন্য সহায়ক হতে পারে। এটি পাচনতন্ত্রের জন্যও উপকারী।

ব্যবহার:

  • মাঝারি সাইজের ১টি আলু কেটে রস বের করে নিয়ে দিনে ১ বার পান করুন।

. পেঁপে পেঁপের বীজ

পেঁপে একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক অ্যান্টি-প্যারাসাইট উপাদান হিসেবে কাজ করে। পেঁপে কৃমি নাশক হিসেবে পরিচিত।

ব্যবহার:

  • পেঁপের বীজ শুকিয়ে গুঁড়ো করে ১ চা চামচ পরিমাণ প্রতিদিন খেতে পারেন।
  • এছাড়াও, পেঁপে কেটে রস তৈরি করে তাও খাওয়া যেতে পারে।

. অরেঞ্জ রুট (কচুর লতি)

অরেঞ্জ রুট বা কচুর লতি পেটের কৃমি দূর করতে সহায়ক হতে পারে। এটি অন্ত্রের প্যারাসাইটকে দূর করতে কার্যকর।

ব্যবহার:

  • কচুর লতির শাক বা গাছের অংশটি পানিতে সেদ্ধ করে তার রস খাওয়া যেতে পারে।

. অলিভ অয়েল লেবুর রস

অলিভ অয়েল অন্ত্রে পরজীবীদের দূর করতে সহায়ক। লেবুর রসের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ এটি আরো কার্যকরী করে তোলে।

ব্যবহার:

  • ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে পেটের কৃমি দূর করা সম্ভব।

. গোলমরিচ

গোলমরিচ প্রাকৃতিক অ্যান্টি-প্যারাসাইট উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং এটি পেটের কৃমি দূর করতে সহায়ক।

ব্যবহার:

  • ১ চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে দিনে ১ বার খেলে এটি পেটের কৃমি দূর করতে সাহায্য করতে পারে।

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আরও কিছু পরামর্শ

  • হাত ধোয়ার অভ্যাস: খাবার খাওয়ার আগে এবং শৌচালয় ব্যবহারের পর হাত ভালোভাবে ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
  • পরিষ্কার পরিবেশ বজায় রাখা: বাড়ির সবগুলো স্থানে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং বিশেষ করে বাথরুম পরিষ্কার রাখা পেটের কৃমির ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ: স্বাস্থ্যকর এবং পরিষ্কার খাবার খাওয়া উচিত, যাতে পেটের কৃমির সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

পেটের কৃমি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এটি কখনও কখনও মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ঘরোয়া প্রতিকারগুলির মাধ্যমে আপনি কিছুটা উপশম পেতে পারেন, তবে এগুলি শুধুমাত্র সহায়ক উপায় হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। পেটের কৃমির চিকিৎসার জন্য একজন যোগ্য চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করা উচিত, যারা আপনার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অনুযায়ী উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করতে পারবেন।