মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ডসের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারিত থাকে, তবে কখনও কখনও অনিয়মিত বা মিসড পিরিয়ডসের সমস্যা দেখা দেয়। মিসড পিরিয়ডসের কারণ হতে পারে বিভিন্ন শারীরিক বা মানসিক কারণে যেমন হরমোনের পরিবর্তন, দুশ্চিন্তা, অনুন্নত জীবনযাত্রা, বা কোনো নির্দিষ্ট রোগ। যদিও এই সমস্যার জন্য ঔষধ এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে, তবে কিছু ঘরোয়া প্রতিকার মিসড পিরিয়ডের সমস্যার সমাধান করতে সহায়ক হতে পারে।
মিসড পিরিয়ডসের কারণ
মিসড পিরিয়ড, বা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নারী শরীরের নানা কারণে ঘটতে পারে।
১. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
যখন শরীরে হরমোনের ভারসাম্য হ্রাস পায়, তখন এটি পিরিয়ডের সময়কাল বা চক্রে পরিবর্তন ঘটাতে পারে। এটি পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) এর মতো রোগে দেখা যায়।
২. মানসিক চাপ
দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে মাসিক চক্রে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। চাপের কারণে মস্তিষ্কে গতি পরিবর্তিত হয় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
৩. শরীরিক অবস্থার পরিবর্তন
অতিরিক্ত ওজন কমানো বা বৃদ্ধি, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস বা শারীরিক অবস্থা বদলানোর কারণে মাসিক চক্রে প্রভাব পড়তে পারে।
৪. গর্ভধারণ
অবশ্যই গর্ভধারণ একটি প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করে, যার কারণে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়।
৫. অপর্যাপ্ত পুষ্টি
যদি শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব থাকে, তবে এটি পিরিয়ড মিসের কারণ হতে পারে। পুষ্টির ঘাটতি শারীরিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
৬. অতিরিক্ত শরীরিক কসরত
অতিরিক্ত শরীরচর্চা, বিশেষ করে যারা অত্যাধিক কঠোর অনুশীলন করেন, তাদের পিরিয়ড প্রায়ই মিস হয়। এর ফলে শরীরের পুষ্টি এবং শক্তির মাত্রা প্রভাবিত হয়, যা মাসিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটায়।
মিসড পিরিয়ডসের জন্য ঘরোয়া প্রতিকার
১. আদা চা
আদা হরমোনাল ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। আদা চা তৈরি করতে, এক টুকরো আদা তাজা কেটে গরম পানি দিয়ে সেদ্ধ করুন। এটি দিনে ২-৩ বার খাওয়া যেতে পারে। আদা হজমের জন্যও উপকারী।
২. হলুদ
হলুদ একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান এবং এটি শরীরের হরমোনাল ব্যালান্স উন্নত করতে সহায়ক। এটি পিরিয়ড স্বাভাবিক করতে সহায়ক হতে পারে। এক চা চামচ হলুদ গরম দুধের সঙ্গে প্রতিদিন পান করা যেতে পারে। তবে, গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি নিষেধ।
৩. প্রাকৃতিক প্রথিত গাছের রস
পিপল (Peepal) গাছের পাতা বা ফলের রস মিসড পিরিয়ডের সমস্যায় উপকারী হতে পারে। এটি হরমোনাল ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক এবং সঠিক সময়ে পিরিয়ড শুরু করতে সাহায্য করতে পারে।
৪. তিল এবং গুড়
তিল এবং গুড় মিলিয়ে খেলে মাসিক নিয়মিত হতে পারে। তিল রক্ত চলাচল বাড়ায় এবং গুড় শরীরের পুষ্টি সরবরাহ করে। এটি মাসিকের সময়ে দেহে শক্তি বজায় রাখতে সহায়ক।
৫. কোরিয়ান গিঞ্জার (গিনসেং)
গিনসেং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক এবং এটি হরমোনাল স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, গিনসেং পিরিয়ড সাইকেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
৬. তেঁতুল
তেঁতুলে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তেঁতুল খেলে পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে এবং শরীরের হরমোনের ভারসাম্য উন্নত করতে পারে।
৭. শসা এবং কাঁচা লেবু
শসা ও কাঁচা লেবু শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক এবং পিরিয়ড চক্রকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। প্রতিদিন সকালে শসার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
৮. পাপড়ি (Poppy seeds)
পাপড়ি বা খোশকা বীজ শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে এবং এটি পিরিয়ডের সময়কাল নির্ধারণে সহায়ক।
পরামর্শ এবং সাবধানতা
মিসড পিরিয়ডের জন্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলি সাধারণত নিরাপদ হতে পারে, তবে ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা অনুসারে এর ফলাফল ভিন্ন হতে পারে। তাই, বিশেষ করে যদি দীর্ঘমেয়াদী মাসিক সমস্যা থাকে বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।