potassium in the body

শরীরের জন্য পটাসিয়ামের উপকারিতা

পটাসিয়াম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং ইলেক্ট্রোলাইট যা মানবদেহে নানা শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই পুষ্টি উপাদান শরীরের কোষ, টিস্যু এবং অঙ্গগুলির সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। শরীরের শক্তি উৎপাদন থেকে শুরু করে স্নায়ুর সংকেত পরিচালনা, পেশীর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা পটাসিয়ামের ভূমিকা অপরিসীম।

পটাসিয়াম: পরিচিতি কাজ

পটাসিয়াম কী?

পটাসিয়াম একটি প্রয়োজনীয় খনিজ যা ইলেক্ট্রোলাইট হিসেবেও কাজ করে। এটি শরীরের কোষে সোডিয়ামের সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে কোষের অভ্যন্তরে তরল প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। পটাসিয়ামের রসায়নিক প্রতীক K এবং এটি পারমাণবিক উপাদান পর্যায় সারণির গ্রুপ-১ এর অন্তর্গত।

শরীরের জন্য পটাসিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম:

  1. স্নায়ু সংকেত প্রেরণ: পটাসিয়াম স্নায়ুর সংকেতের নির্ভুলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  2. পেশী সংকোচন প্রশমন: পটাসিয়ামের উপস্থিতি পেশী সংকোচনের প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনা করে।
  3. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: পটাসিয়াম রক্তচাপের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
  4. হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা: হৃদযন্ত্রের ছন্দ স্বাভাবিক রাখার জন্য পটাসিয়াম অপরিহার্য।

পটাসিয়ামের উপকারিতা

. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

পটাসিয়াম শরীরে সোডিয়ামের প্রভাব হ্রাস করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণা থেকে জানা যায় যে পটাসিয়াম-সমৃদ্ধ খাদ্য রক্তচাপ কমাতে পারে।

. পেশী স্নায়ুর কার্যক্ষমতা

স্নায়ুর সংকেত এবং পেশীর সংকোচন পটাসিয়ামের উপস্থিতিতে ঘটে। এটি পেশী খিঁচুনি এবং দুর্বলতা প্রতিরোধে সহায়ক।

. হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি

পটাসিয়াম-সমৃদ্ধ খাদ্য হাড়ের ঘনত্ব উন্নত করতে পারে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়। এটি ক্যালসিয়ামের ক্ষতি রোধ করে হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে।

. কিডনির কার্যক্ষমতা উন্নতকরণ

পটাসিয়াম কিডনির মাধ্যমে অতিরিক্ত সোডিয়াম নিঃসরণে সাহায্য করে এবং কিডনির উপর চাপ কমায়।

. স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস

গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে পটাসিয়াম-সমৃদ্ধ খাদ্য স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়।

পটাসিয়ামের অভাবের লক্ষণ ক্ষতিকর প্রভাব

লক্ষণ:

  1. ক্লান্তি
  2. পেশী দুর্বলতা
  3. খিঁচুনি
  4. অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
  5. কোষ্ঠকাঠিন্য

ক্ষতিকর প্রভাব:

  1. হাইপোক্যালেমিয়া (Hypokalemia): শরীরে পটাসিয়ামের অভাবকে হাইপোক্যালেমিয়া বলা হয়। এটি স্নায়ুর কার্যক্ষমতা ব্যাহত করতে পারে।
  2. হৃদযন্ত্রের ঝুঁকি: পটাসিয়ামের ঘাটতি হৃদস্পন্দনের অনিয়ম ঘটিয়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ঘটাতে পারে।
  3. কিডনির কার্যক্ষমতা ক্ষতি: দীর্ঘমেয়াদী পটাসিয়াম ঘাটতি কিডনি ক্ষতির কারণ হতে পারে।

পটাসিয়ামের উৎস

প্রাকৃতিক উৎস

  1. কলা
  2. কমলালেবু
  3. মিষ্টি আলু
  4. শাক-সবজি (ধনেপাতা, পালংশাক)
  5. টমেটো
  6. মাছ (স্যালমন, টুনা)

প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎস

প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে পটাসিয়াম কম থাকে, তাই প্রাকৃতিক উৎসকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

দৈনন্দিন পটাসিয়াম চাহিদা

বিভিন্ন বয়স এবং লিঙ্গভেদে পটাসিয়ামের দৈনন্দিন চাহিদা আলাদা হতে পারে। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক প্রয়োজন ৩,৫০০–৪,৭০০ মিলিগ্রাম।

পটাসিয়ামের অতিরিক্ততা

লক্ষণ:

  1. বমি
  2. ডায়রিয়া
  3. অনিয়মিত হৃদস্পন্দন

হাইপারক্যালেমিয়া

শরীরে অতিরিক্ত পটাসিয়াম হাইপারক্যালেমিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যা জীবনঘাতী হতে পারে।

পটাসিয়াম শরীরের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হৃদ্‌যন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কিডনির সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে পটাসিয়ামের অভাব বা অতিরিক্ততা উভয়ই শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

error: Content is protected !!
Scroll to Top