৫ই আগস্ট, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপ্রত্যাশিত পদত্যাগের সাথে একটি রাজনৈতিক ভূমিকম্প অনুভব করেছে। যদিও তাত্ক্ষণিক ভাবে এটিকে সেখানকার ছাত্র জনতার আন্দলনের ফসল হিসেবে বলে মনে হচ্ছে। তথাপি সমগ্র ঘটনা প্রবাহ একটি তীব্র জল্পনার সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে এই পালাবদলে কোন বহিঃশক্তির ভূমিকার বিষয়ে। বাংলাদেশ এখন একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। দেশটি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন সহ বিশ্বশক্তিদের মধ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার একটি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
শেখ হাসিনার ঐতিহ্য এবং বিতর্কিত শাসন
শেখ হাসিনা, যিনি বাংলাদেশকে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন, একটি ধ্রুবক চরিত্রে পরিণত হয়েছিলেন। যদিও তিনি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখেছিলেন, তার প্রশাসনের নামে স্বৈরশাসন এবং বিরোধীদের দমনের অভিযোগ ছিল। ঢাকায় ছাত্রদের প্রতিবাদ প্রাথমিকভাবে বিতর্কিত কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার কারণে হচ্ছিল। এই প্রতিবাদই দ্রুত তার সরকারের বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা, দমনমূলক শাসনের কারনে এই আন্দোলন পরবর্তীকালে এক দফা অর্থাৎ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দলনে রুপ নেয়।
ভূরাজনৈতিক টানাটানি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন
শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দলনের পেছনে জল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে কৌশলগত প্রতিযোগিতা। হাসিনার সরকার চীনের প্রতি ক্রমশ ঝুঁকছিল, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসাবে বেইজিংয়ের সাথে পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে জড়িত হয়েছিল। চীনের সাথে এই ঘনিষ্ঠতা ওয়াশিংটনকে সতর্ক করেছে যা দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রভাবের প্রতি একটি সরাসরি চ্যালেঙ্গ ছিল।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল বঙ্গোপসাগরে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থলভাগ সেন্ট মার্টিন দ্বীপে একটি নৌ ঘাঁটি স্থাপনের সম্ভাব্য মার্কিন আগ্রহ। হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে এতে প্রতিবাদ করেছিলেন, যা কিছু বিশ্লেষকের মতে তার সরকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধের একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রিপোর্টে বলা হয়েছে, তার অপসারণের কয়েক মাস আগে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ান বিষয়ক মার্কিন সহকারী রাষ্ট্রসচিব ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন। এই সাক্ষাৎ এর পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা বিধিনিষেধ হাসিনার শাসনের প্রতি ওয়াশিংটনের প্রবল অসন্তুষ্টির ইঙ্গিত দেয় ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব এবং মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা
এই ঘটনার আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন মুহাম্মদ ইউনূস, একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী যার উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে। ফাঁস হওয়া নথিপত্রে বলা হয়েছে, হাসিনার প্রশাসনের প্রতি অসন্তুষ্ট ইউনূস, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পুনর্গঠনের প্রচেষ্টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ আন্তর্জাতিক ব্যক্তিদের সমর্থন চেয়েছিলেন। ইউনূস বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিকভাবে উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখেছিলেন। ইউনুসের মাধ্যমে আরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বান্ধব সরকারের প্রতিষ্ঠা ছিল এই খেলার অন্যতম কারন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপ এবং কৌশলগত স্বার্থের পাশাপাশি ইউনূসের জড়িত থাকা, ইঙ্গিত দেয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাসিনার পদত্যাগে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। সমালোচকরা যুক্তি দেন যে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে একটি মার্কিন ঘাঁটি অনুমতি দিতে শেখ হসিনার অস্বীকার এবং চীনের সাথে বাড়ন্ত সম্পর্ক, তার অপসারণের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করেছিল।